জেলা প্রতিনিধি, সিলেট :
সিলেটের বিয়ানীবাজারের প্রত্যন্ত পল্লীতে রাতের আধারে টিলা কাটছে ভূমিদস্যুরা। সরকারিভাবে টিলা ও পাহাড় কাটা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ থাকলেও আইনের তোয়াক্কা করছেন না তারা। রাত ১১টার পর থেকে প্রতিদিন টিলার মাটি একস্থানে থেকে অন্যস্থানে নেয়া হচ্ছে। উপজেলার গ্রামীণ এলাকায় রাত যত গভীর হয় মাটি ভর্তি ট্রাকের সারি তত দীর্ঘ হয়। জনাকীর্ণ এলাকায় মাটি বোঝাই ট্রাকগুলো খুব দ্রুত চলাচল করে। এতে সড়ক দূর্ঘটনার প্রবণতাও বৃদ্ধি পায়।
সূত্র জানায়, টিলা কেটে মাটি স্থানান্তরের জন্য বিয়ানীবাজারে একটি সিন্ডিকেট গড়ে ওঠেছে। তারা দিনের বেলায় ট্রাক বন্ধ রাখলেও রাতে কেবল মাটি স্থানান্তরে গাড়িগুলো ব্যবহার করে। পরিবেশ আইন না মেনে রাতের আঁধারে এখানে চলছে পাহাড় কাটা। বাড়ি নির্মাণ, রাস্তা সংস্কার এবং ইটভাটাসহ বিভিন্ন কাজে ব্যবহারের জন্য পাহাড় কাটছে এই চক্র।
জানা যায়, উপজেলার কোনাগ্রাম, ছোটদেশ, মুল্লাপুর, জলঢুপ, কালাইউরা, কানলি, পাতন, লাউতা, মাটিকাটা, বাউরভাগ, আব্দুল্লাহপুর, খাসাড়িপাড়া, নয়াগ্রামসহ অন্যান্য টিলা ঘেরা এলাকায় তুলনামূলক জনবসতি কম। এসব এলাকাবাসী রাতে ঘুমানোর প্রস্তুতি নেয়ার পর ভূমিদস্যুরা ট্রাক, ট্রলি এক্সেভেটর দিয়ে টিলা কাটা শুরু করে। ভোর হওয়ার আগ পর্যন্ত চলে এ টিলাকাটার মহোৎসব। প্রথম দিকে কিছুটা রাখডাক থাকলেও এখন বিষয়টি ‘ওপেন সিক্রেট’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু টিলা কাটা চক্রগুলো শক্তিশালী হওয়ায় ভয়ে কেউ প্রতিবাদও জানায় না। উপজেলা প্রশাসন বিভিন্ন সময় জেল জরিমানা করে থামাতে পারছে না এ টিলাখেকোদের।
অনুসন্ধানে জানা যায়, উপজেলার মুড়িয়া ইউনিয়নের জলঢুপ দোপানিপার এলাকায় সায়েমের বাড়িতে টিলা কাটা চলছে। এক্সেভেটর মালিক কোনগ্রামের মুমিন টিলা কেটে ট্রাকে ভরে দিচ্ছেন। যা ট্রাকে করে রাতের আধাঁরে অন্যত্র স্থানান্তর হচ্ছে। এখান থেকে টিলা কাটা হয়েছে বলে এলাকাবাসীরা জানান।
বিয়ানীবাজার উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) তানিয়া আক্তার বলেন, টিলাকাটা রোধে অভিযান পরিচালনা অব্যাহত রয়েছে। প্রশাসন যখনই যেখানে টিলা কাটার সংবাদ পাচ্ছে, অভিযান পরিচালনা করছে। এমনকি সাপ্তাহিক ছুটির দিনেও অভিযান চালিয়ে জেল জরিমানা করা হচ্ছে। এ চক্রকেও রোধ করতে আমরা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা গ্রহণ করছি।
পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫-এর ৬ (খ) ধারা অনুযায়ী কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান সরকারি বা আধা সরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের মালিকানাধীন বা দখলাধীন বা ব্যক্তিমালিকানাধীন পাহাড় ও টিলা কর্তন বা মোচন করতে পারবে না। তবে অপরিহার্য জাতীয় স্বার্থের প্রয়োজনে অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নিয়ে পাহাড় বা টিলা কাটা যেতে পারে।
আরও পড়ুন
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি