November 5, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Wednesday, February 7th, 2024, 6:23 pm

বিয়ানীবাজারে শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম প্রকল্প থেমে আছে যে কারণে

জেলা প্রতিনিধি, সিলেট:

তরুণদের মাদকের পথ থেকে ফিরিয়ে খেলার মাঠে আনার চিন্তা থেকেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের প্রতিটি উপজেলায় উন্মুক্ত মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু অন্যসব প্রকল্পের মত বিয়ানীবাজার উপজেলায় এই প্রকল্পও থেমে আছে। চলো খেলতে যাই- সূর্য মাথার ওপর থেকে পশ্চিমে হেলে পড়লেই কিশোর-তরুণদের মধ্যে কাজ করে খেলতে যাওয়ার তাড়না; কিন্তু খেলবে কোথায়? বিয়ানীবাজারে কোথাও মাঠ নেই, নেই উন্মুক্ত জায়গা। কিশোররা সারাদিন ইট-পাথরের দেয়াল আর মোবাইলের মধ্যে বন্দি। খেলার সুযোগ না পেয়ে কিশোর-তরুণরা জড়িয়ে পড়ছেন মাদকসহ নানা অপকর্মে।আর নির্দিষ্ট মাঠ না থাকায় বিয়ানীবাজার উপজেলা খেলাধুলায় পিছিয়ে যাচ্ছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

সরকার প্রধানের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এবং জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ ‘উপজেলা পর্যায়ে শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণ’ শীর্ষক প্রকল্প তৈরি করে তা ৪ ধাপে বাস্তবায়ন করছে। এরই মধ্যে প্রথম ধাপের ১২৫টি মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণ শেষ হয়েছে। চলছে দ্বিতীয় পর্যায়ের প্রকল্পের কাজ। দ্বিতীয় ধাপের ২৫ স্টেডিয়াম এরই মধ্যে উদ্বোধন করা হয়েছে।

সূত্র জানায়, শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণের প্রকল্প হাতে নেয়ার পরই বিয়ানীবাজার উপজেলায় এটি নিয়ে তোড়জোড় শুরু হয়। তবে প্রায় এক দশকেও বিয়ানীবাজারে তা আলোর মুখ দেখেনি। এই সময়ের মধ্যে উপজেলায় অন্তত: ৫জন ইউএনও বদলী হয়েছেন। ইউএনও (উপজেলা নির্বাহী অফিসার) বদলীর পরই ফাইলচাপা পড়ে প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার এই প্রকল্পটি। এই উপজেলায় স্টেডিয়াম নির্মাণের জায়গা না পাওয়ার অজুহাতে এখনো পর্যন্ত এই প্রকল্পটি থমকে আছে।

বিয়ানীবাজার উপজেলা নির্বাহী অফিসার আয়েশা আক্তার জানান, তিনি যোগদানের পূর্বে শেওলা ইউনিয়নের কাকরদিয়া এলাকায় শেখ রাসেল স্টেডিয়াম নির্মাণের জায়গা পছন্দ করে কর্তৃপক্ষের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়। এরপর আর অগ্রগতি কি হয়েছে, তা তার জানা নেই। সরজমিন ওই স্থানে গিয়ে বালুর টিলা দেখা যায়। নদী থেকে বালু তুলে এখানে স্তুপ করে রাখা হয়েছে।

অপর আরেকটি সূত্র জানায়, জেলা প্রশাসকদের প্রেরণ করা স্থানের তালিকা থেকে প্রকল্পের প্রথম ধাপের জন্য ১৩১টি স্টেডিয়াম নির্মাণের পরিকল্পনা করা হলেও বিয়ানীবাজারসহ ৬ উপজেলায় জায়গা পাওয়া যায়নি। অথচ জায়গা পাওয়া গেলে ২০১৯সালে এই উপজেলায় শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম স্থাপন করা সম্ভব হত। এখন ৩য় ধাপে হয়তো এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হতে পারে।প্রকল্পের তৃতীয় ধাপে নির্মাণের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১২৬ উপজেলা। এ ধাপে স্টেডিয়াম নির্মাণের জমি অধিগ্রহণের জন্য বাজেট করা হয়েছে ৭৮৬ কোটি টাকা।

জানা যায়, প্রথম ধাপে নির্মিত স্টেডিয়ামগুলোয় ছিল এক তলা বিল্ডিং এবং উন্মুক্ত মাঠ। কোনো গ্যালারি ছিল না। বিল্ডিংয়ে দুটি ড্রেসিং রুম, অফিস রুম, নারী ও পুরুষদের জন্য আলাদাভাবে ৩টি করে মোট ৬ টি টয়লেট, বিল্ডিংয়ের সামনে ৩৫টি আরসিসি বেঞ্চ। এক তলা বিল্ডিং হওয়াতে তখন বাজেটও কম ছিল। গড়ে প্রতিটি স্টেডিয়ামের নির্মাণ ব্যয় ছিল ৫২ লাখ টাকা।

দ্বিতীয় ধাপের নির্মাণাধীন স্টেডিয়ামগুলোর বিল্ডিং ৩তলা। আগেরগুলোতে গ্যালারি ছিল না। দ্বিতীয় ধাপের স্টেডিয়ামে ৩০০ ফুট করে থাকছে উন্মুক্ত গ্যালারি।
প্রথম ধাপে সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর, জামালগঞ্জ, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ, ছাতক, সিলেট জেলার সদর, হবিগঞ্জ জেলার বাহুবল, সদর, বানিয়াচং উপজেলায় শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়ামের কাজ শেষ হয়।

বিয়ানীবাজার উপজেলা ফুটবল এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মারুফ আহমদ জানান, আমাদের এখানে কোন প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গেলেই জায়গার সমস্যা প্রকট হয়ে ওঠে। অথচ শ’ত-শ’ত একর সরকারি জায়গা দখল করে রেখেছে প্রভাবশালীরা। কেবল সংশ্লিষ্টদের আন্তরিকতার কারণে আমরা সরকারের বড় প্রকল্প বাস্তবায়নে পিছিয়ে পড়ি। তিনি বলেন, যেখানেই হোক দ্রুত স্টেডিয়াম নির্মাণ করা হলে তরুণ প্রজন্ম ক্রীড়াক্ষেত্রে এগিয়ে আসবে।