October 4, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Monday, November 22nd, 2021, 1:16 pm

বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের বড় দরপতন

ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

টানা দুই সপ্তাহ যাবত বিশ্ববাজারে কম রয়েছে জ্বালানি তেলের দাম। বলা যায়, আবারও বড় দরপতন হয়েছে জ্বালানি তেলের মূল্য। এক সপ্তাহে অপরিশোধিত তেলের দাম কমেছে প্রায় ৬ শতাংশ। আর ব্রেন্ট ক্রুড অয়েল ও হান্টিং অয়েলের দাম কমেছে সাড়ে ৪ শতাংশের বেশি। বাংলাদেশে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধিতে পরিবহন খাতে তৈরি হওয়া বিশৃঙ্খলার মধ্যে বিশ্ববাজারে দরপতনের সঙ্গে সমন্বয় করে বাংলাদেশেও কমানো হতে পারে। তবে এর জন্য বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনকে কেনা তেলের মূল্যের পরিসংখ্যান দিতে হবে জ্বালানি মন্ত্রণালয়কে। তারপরই দাম কমানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হতে পারে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুত, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।

বিশ্বের জ্বালানি তেলের বাজার পর্যবেক্ষণের প্রেক্ষিতে জানা যায়, বিশ্ববাজারে এখন জ্বালানি তেলের দাম সাত সপ্তাহের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থানে নেমে গেছে। গত সপ্তাহের আগের সপ্তাহে বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত তেল ও ব্রেন্ট ক্রুড অয়েলের দাম প্রায় এক শতাংশ কমে। আর গত সপ্তাহে অপরিশোধিত তেলের দাম কমেছে ৫ দশমিক ৮১ শতাংশ। এরমধ্যে সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে কমেছে ৩ দশমিক ৬৮ শতাংশ। আর মাসের ব্যবধানে কমেছে ৮ দশমিক ৭৭ শতাংশ। এতে প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত তেলের দাম ৭৬ দশমিক ১০ ডলারে নেমে গেছে। অবশ্য বছরের ব্যবধানে বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম এখনও ৫৬ দশমিক ৮৪ শতাংশ বেশি। অপরিশোধিত তেলের পাশাপাশি ব্রেন্ট ক্রুড অয়েলও গত সপ্তাহ বড় দরপতনের মধ্যে পড়ে। গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ৩ দশমিক ৪৩ ডলার কমে প্রতি ব্যারেল ব্রেন্ট ক্রুড অয়েলের দাম দাঁড়িয়েছে ৭৮ দশমিক ৪৫ ডলার। এতে গত এক সপ্তাহে ব্রেন্ট ক্রুড অয়েলের দাম কমেছে ৪ দশমিক ৫৩ শতাংশ। আর মাসের ব্যবধানে কমেছে ৮ দশমিক ৫৯ শতাংশ। তবে বছরের ব্যবধানে ব্রেন্ট ক্রুড অয়েলের দাম এখনও ৫১ দশমিক ৪৫ শতাংশ বেশি। তেলের এ দরপতনের আগে টানা দাম বাড়ার প্রবণতা ছিল। দফায় দফায় দাম বেড়ে চলতি বছরের অক্টোবরে প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত তেলের দাম ৮৪ ডলার ছাড়িয়ে যায়। এর মাধ্যমে সাত বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ দামে উঠে আসে তেল।

এরই প্রেক্ষিতে চলতি মাসের ৩ তারিখ দেশের বাজারেও ডিজেল এবং কেরোসিনের দাম বাড়ানোর ঘোষণা দেয় সরকার। ওইদিন রাতে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারে ১৫ টাকা করে বাড়িয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করে বিদ্যুত, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়। ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আন্তর্জাতিকবাজারে জ্বালানি তেলের দাম উর্ধগতির কারণে ভারতসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশ তেলের দাম সমন্বয় করেছে। বিশ্ব বাজারের হিসাব তুলে ধরে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ১ নবেম্বর ভারতে ডিজেলের বাজার মূল্য ছিল লিটারপ্রতি ১২৪ দশমিক ৪১ টাকা বা ১০১ দশমিক ৫৬ রুপী। একই দিন বাংলাদেশে ডিজেলের মূল্য প্রতি লিটার ছিল ৬৫ টাকা অর্থাৎ ৫৯ দশমিক ৪১ টাকা কম। তাই বর্তমান ক্রয়মূল্য বিবেচনা করে বিপিসি ডিজেলে লিটার প্রতি ১৩ দশমিক শূন্য ১ টাকা কমে বিক্রি করছে।

অপরদিকে, ফার্নেস অয়েল বিক্রি করছে লিটার প্রতি ৬ দশমিক ২১ টাকা কমে। এতে করে প্রতিদিন প্রায় ২০ কোটি টাকা লোকসান দিচ্ছে বিপিসি। অক্টোবর মাসে বিভিন্ন গ্রেডের পেট্রোলিয়াম পণ্য এই দামে সরবরাহ করায় বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের মোট ৭২৬ কোটি ৭১ লাখ টাকা লোকসান হয়েছে। তাই বিশ্ববাজারের সঙ্গে দাম সমন্বয়ের অজুহাতে এ দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। এই সিদ্ধান্তের পরপরই দেশজুড়ে পরিবহন খাতে তৈরি হয় বিশৃঙ্খলা। ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটার প্রতি ১৫ টাকা বাড়ায় পরিবহনের ভাড়া বাড়ানোর দাবিতে শুরু হয় অঘোষিত ধর্মঘট কর্মসূচীর।

এই প্রেক্ষাপটে ৬ নবেম্বর এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে বিদ্যুত, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, আন্তর্জাতিকবাজারে তেলের দাম কমলে দেশেও কমানো হবে। তাই এখন যখন আন্তর্জাতিকবাজারে তেলের দামে বড় দরপতন ঘটেছে এমন অবস্থায় দেশে দাম কমানোর কোন সম্ভাবনা রয়েছে কি না জনকণ্ঠের এমন প্রশ্নের উত্তরে নসরুল হামিদ বলেন, বিপিসি থেকে এখনও বিশ্ববাজারের তেলের দামের তালিকা আমার কাছে আসেনি। যদি বিশ্ববাজারে দাম কমে এবং বিপিসি যেখান থেকে তেল কিনে সেখানে সেই কম দাম কার্যকর হয় তবে অবশ্যই দেশেও দাম কমানো হবে।

তবে এই দরপতন আমেরিকার তেলের বাজারের সঙ্গে সম্পৃক্ত বলে দাবি করেন বিপিসি’র পরিচালক (অপারেশন ও পরিকল্পনা) সৈয়দ মেহদী হাসান। জনকণ্ঠকে তিনি বলেন, আমরা সৌদির আরামকো থেকে তেল কিনি। তারা তো দাম কমায়নি। একই দামে তেল বিক্রি করছে। তবে যদি তারা দাম কমায় তাহলে নিশ্চয়ই আমরাও দাম কমানোর প্রস্তাবনা তৈরি করব।

আন্তর্জাতিকবাজারে পেট্রোলিয়াম পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির কারণে গত ৩ নবেম্বর মধ্যরাত থেকে বাংলাদেশে ডিজেল কেরোসিনের দাম বাড়ানো হয়েছে এক লাফে ১৫ টাকা। বর্তমানে দেশে ভোক্তা পর্যায়ে ডিজেল-কেরোসিন বিক্রি হচ্ছে প্রতিলিটার ৮০ টাকায়। এই পদক্ষেপের পক্ষে ভারতে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির যুক্তি দেখিয়েছিল বাংলাদেশের জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়। অথচ বাংলাদেশে যেদিন তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে, ভারতে সেদিনই তেলের দাম কমেছে।

গ্লোবাল পেট্রল প্রাইসেস ডটকম নামে একটি ওয়েবসাইটের সবশেষ গত ১ নবেম্বর হালনাগাদ করা তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায়, বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে কম দামে ডিজেল বিক্রি হয় ভেনিজুয়েলায়। বাংলাদেশী মুদ্রায় এক টাকারও অনেক কমে তেল পাওয়া যায় দক্ষিণ আমেরিকার দেশটিতে। এরপরেই রয়েছে ইরান। মধ্যপ্রাচ্যের দেশটিতে ডিজেলের দাম বাংলাদেশী মুদ্রায় মাত্র এক টাকা লিটার। সস্তায় তেল বিক্রির দিক থেকে তিন নম্বরে রয়েছে সৌদি আরব। সেখানে প্রতি লিটার ডিজেলের দাম ১১ টাকার মতো। এরপর সিরিয়ায় ১৩ টাকা, আলজিরিয়ায় ১৮, এ্যাঙ্গোলায় ১৯, কুয়েতে ৩২, তুর্কমেনিস্তানে ৩৩, ইথিওপিয়ায় ৩৩, বাহরাইনে ৩৬, মালয়েশিয়ায় ৪৪, শ্রীলঙ্কায় ৪৭, কাতারে ৪৮, নাইজিরিয়ায় ৫৩, সুদানে ৫৬, রাশিয়ায় ৬০, সংযুক্ত আরব আমিরাতে ৬৫, আফগানিস্তানে ৬৫, মিয়ানমারে ৬৭, ইন্দোনেশিয়ায় ৬৮, ভিয়েতনামে ৭১, তুরস্কে ৭৩, ব্রাজিলে ৭৮, নেপালে ৮০, যুক্তরাষ্ট্রে ৮২ টাকায় এক লিটার ডিজেল পাওয়া যায়। বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দামে ডিজেল কিনতে হয় হংকংবাসীদের। সেখানে এর দাম প্রতি লিটার ১৯৫ টাকা। এরপর সুইডেনে ১৯৪ টাকা, নরওয়েতে ১৭৭, যুক্তরাজ্যে ১৭৩, ইসরায়েলে ১৭২, ইতালিতে ১৫৮, ফ্রান্সে ১৫৬, সিঙ্গাপুরে ১৩৩, জাপানে ১০৮, অস্ট্রেলিয়ায় ১০৪ টাকা।

তবে ভারতে রাজ্যভেদে জ্বালানি তেলের দামে ভিন্নতা দেখা যায়