নিজস্ব প্রতিবেদক:
তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) দাম বিশ্ববাজারে কমলেও ডলার সঙ্কটে পেট্রোবাংলা আমদানি বাড়াতে পারছে না। ২০২২ সালের আগস্টে প্রতি এমএমবিটিইউ (মেট্রিক মিলিয়ন ব্রিটিশ থার্মাল ইউনিট) এলএনজির গড় মূল্য ছিল ৭০ ডলার ৫০ সেন্ট। আর ৮ মাসের ব্যবধানে ৮২ শতাংশেরও বেশি কমে স্পট মার্কেটে জ্বালানি পণ্যটির দাম ১২ ডলার ৫০ সেন্টে নেমে এসেছে। এক বছর আগের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৫৫ শতাংশ দাম কমেছে। কিন্তু এমন পরিস্থিতিতেও পেট্রোবাংলাকে হিসাব করে এলএনজি আমদানি করতে হচ্ছে। বাজারমূল্যের নিম্নগতি সত্ত্বেও চাহিদা অনুযায়ী জ্বালানি পণ্যটির সরবরাহ বাড়ানো যাচ্ছে না। মূলত ডলার সংকটই এজন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী। জ্বালানি বিভাগ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর স্পট মার্কেট থেকে এখন নিয়মিতভাবে এলএনজি সংগ্রহ করছে পেট্রোবাংলা। সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত কমিটিতে চার কার্গো এলএনজি কেনার অনুমোদন দেয়া হয়েছে। প্রতিটি ৩৩ লাখ ৬০ হাজার এমএমবিটিইউ ধারণক্ষমতার মোট চার কার্গো এলএনজি কিনতে ব্যয় হচ্ছে ২ হাজার ১৪ কোটি টাকা।
পেট্রোবাংলাকে মার্কিন প্রতিষ্ঠান এক্সিলারেট এনার্জির কাছ থেকে এক কার্গো এলএনজি ৫১৬ কোটি ৪৯ লাখ ৬০ হাজার ৭৩১ টাকায় আমদানির অনুমোদন দেয়া হয়েছে। সিঙ্গাপুরভিত্তিক ভিটল এশিয়ার কাছ থেকে দুই কার্গো এলএনজি নেয়া হবে। এর মধ্যে একটিতে দাম পড়বে ৫০৩ কোটি ৭৩ লাখ ৪০ হাজার ৮৬৫ টাকা। আরেকটিতে পড়বে ৪৬৫ কোটি ১৭ লাখ ৬৯ হাজার ৫৫৫ টাকা। সিঙ্গাপুরভিত্তিক আরেক প্রতিষ্ঠান গুনভোরের কাছ থেকে আরেক কার্গো এলএনজি আমদানি করা হবে ৫২৮ কোটি ৩৫ লাখ ৯৮ হাজার ৫৭ টাকায়।তবে এ আমদানি দেশে গ্যাসের চাহিদা পূরণের জন্য পর্যাপ্ত নয়।
সূত্র জানায়, দেশে এখন গ্যাসের চাহিদা ও সরবরাহে দৈনিক ১০০ কোটি ঘনফুট ঘাটতি থাকছে। শিগগিরই এ ঘাটতি পূরণের সম্ভাবনা নেই। কারণ ডলার সংকটের কারণে চাইলেও পেট্রোবাংলার পক্ষে এখন চাহিদার সঙ্গে সংগতি রেখে এলএনজির আমদানি বাড়ানো সম্ভব হবে না। একই সঙ্গে বিদ্যমান অবকাঠামোর বাইরে দৈনিক ৮০ কোটি ঘনফুটের বেশি এলএনজি সরবরাহের সক্ষমতাও পেট্রোবাংলার তৈরি হয়নি।
আবার নানা কারণে এলএনজির বড় একটি অংশ এখন অব্যবহৃত থেকে যাচ্ছে। ফলে স্পট মার্কেটে এলএনজির দাম যতোই কমুক না কেন, তা কিনে মজুদ ও সরবরাহ বাড়ানো এখন পেট্রোবাংলার পক্ষে সম্ভব হবে না। তবে বাংলাদেশে আরো একটি এলএনজির ভাসমান টার্মিনাল নির্মাণ করা গেলে স্পট থেকে এলএনজির সাশ্রয়ী দামের সুযোগ নেয়া সম্ভব হতো। কিন্তু টার্মিনাল নির্মাণে উদ্যোগ নেয়া হলেও গত কয়েক বছরে কাগজে-কলমে থেকেছে ওসব প্রকল্পের কাজ। বর্তমানে একটি টার্মিনাল নির্মাণের সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হলেও তা অপারেশনে আসতে কমপক্ষে তিন বছর সময়ের প্রয়োজন।
ওই হিসেবে ভাসমান টার্মিনাল নির্মাণ করা হলে আগামী ২০২৭ সালের আগে তা চালু করা সম্ভব নয়। সূত্র আরো জানায়, বর্তমানে দেশে এলএনজি সরবরাহের জন্য ভাসমান দুটি টার্মিনাল রয়েছে। দুটি ৫০ কোটি ঘনফুট সক্ষমতার ওই টার্মিনালের একটির মালিকানা মার্কিন কোম্পানি এক্সিলারেট এনার্জির, অন্যটি স্থানীয় জ্বালানি খাতের কোম্পানি সামিট গ্রুপের। ১০০ কোটি ঘনফুট সরবরাহ সক্ষমতার টার্মিনাল দুটি কক্সবাজারের মহেশখালীতে স্থাপন করা হয়েছে।
সেখান থেকে বর্তমানে দৈনিক ৭০ কোটি ঘনফুট এলএনজি সরবরাহ হচ্ছে। সামিট ও এক্সিলারেট এখন দেশে এলএনজির আরো দুটি ভাসমান টামিনাল নির্মাণের তোড়জোড় চালাচ্ছে। মাতারবাড়ী ও পায়রায় টার্মিনাল নির্মাণের জন্য কোম্পানি দুটি পৃথক প্রস্তাব দিয়েছে। এদিকে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির অধীনে ও স্পট থেকে আমদানির মাধ্যমে এলএনজির সরবরাহ দিচ্ছে পেট্রোবাংলা।
তবে উচ্চমূল্যের কারণে গত বছরের জুলাই থেকে স্পট থেকে এলএনজি কার্গো আমদানি বন্ধ রেখেছিল জ্বালানি বিভাগ। এরপর চলতি বছর এলএনজির দাম কমতে শুরু করলে ফেব্রুয়ারি থেকে কার্গো আমদানি শুরু করা হয়। বিশেষত গ্রীষ্ম, সেচ ও রমজানে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে এলএনজি আমদানির পরিকল্পনা নেয়া হয়। চলতি বছরের জুন পর্যন্ত ১২ কার্গো এলএনজি কেনার পরিকল্পনা করে জ্বালানি বিভাগ।
এরইমধ্যে দেশে পরিকল্পনার দুই-তৃতীয়াংশ কার্গো দেশে এসেছে। চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত বাংলাদেশ ৪ লাখ ৯০ হাজার টন এলএনজি আমদানি করেছে, যা গত মাসে (মার্চ) ছিল ৪ লাখ ৫০ হাজার টন। ২০২২ সালের জুনের পর গত দুই মাসে সবচেয়ে বেশি এলএনজি কিনেছে বাংলাদেশ।
আরও পড়ুন
বাংলাদেশে চিংড়ির রফতানি পরিমাণ কমছে ধারাবাহিকভাবে
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর দাবিতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের সামনে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ