October 8, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Tuesday, June 6th, 2023, 9:43 pm

বিস্ফোরণের ঝুঁকিমুক্ত হওয়ায় বায়োগ্যাসে ঝুঁকছে গ্রাহকরা

ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

বিস্ফোরণের ঝুঁকিমুক্ত বায়োগ্যাসে ঝুঁকছে বাণিজ্যিক ও সাধারণ গ্রাহক। বর্তমানে চট্টগ্রামে খামারভিত্তিক বায়োগ্যাস প্লান্ট স্থাপনের ফলে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় সাধারণ গ্রাহক এলপিজি সিলিন্ডারের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করছেন বায়োগ্যাস। চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলায় গরুর খামার বেশি থাকায় খামারিরা বায়োগ্যাস প্লান্ট স্থাপনের উদ্যোগ নিচ্ছে। বর্তমানে ওসব অঞ্চলে বায়োগ্যাস সরবরাহ ২৪ ঘণ্টা পাওয়া গেলেও দাম একটু বেশি পড়ছে। কারণ পর্যাপ্ত বিনিয়োগ না থাকায় খাতটিতে উল্লেখযোগ্য সম্প্রসারণ ঘটেনি। বাংলাদেশ বায়োগ্যাস ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, এলপিজি ব্যবহারে সিলিন্ডারের মতো বিস্ফোরণের ঝুঁকি বায়োগ্যাসে নেই। আর দেশে এলপিজি সিলিন্ডারের চাহিদা বেশি হলেও ঊর্ধ্বমুখী দামের কারণেই চট্টগ্রামে বায়োগ্যাস ব্যবহারের দিকে ঝুঁকছে বাণিজ্যিক ও সাধারণ গ্রাহকরা। বিগত ২০০৭ সালের দিকে চট্টগ্রামের তৎকালীন পটিয়া উপজেলার শিকলবাহা এলাকায় খামারভিত্তিক বা ব্যক্তিগত পর্যায়ে বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট শুরু হয়। তবে পরবর্তী সময়ে নতুন কর্ণফুলী উপজেলা গঠিত হলে বেশির ভাগ বায়োগ্যাস প্রকল্প কর্ণফুলী উপজেলার অন্তর্গত হয়। বর্তমানে কর্ণফুলী উপজেলাকে গরুর খামারের উপজেলা বলা যায়। কারণ উপজেলার শিকলবাহা এলাকায় মূলত ছোট বড় খামারভিত্তিক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে।

সেখানে দেড় হাজারের মতো গরুর খামার রয়েছে আর বায়োগ্যাস প্লান্টের সংখ্যা প্রায় ৯৫০টি। উপকারভোগীর সংখ্যা প্রায় ৫ হাজার পরিবার। তাছাড়া পটিয়ার কচুয়াই, হাইদগাঁও, জঙ্গলখাইন, জিরি এলাকায় পাঁচ শতাধিক বায়োগ্যাস প্লান্ট, বোয়ালখালীতে আড়াইশ, আনোয়ারায় দুই শতাধিক, চন্দনাইশে শতাধিক, হাটহাজারী উপজেলায় আড়াই শতাধিকসহ চট্টগ্রামের অন্যান্য উপজেলায় সব মিলিয়ে আড়াইহাজার বায়োগ্যাস প্লান্ট আছে। যাতে সব মিলিয়ে ১০-১২ হাজার পরিবার এলপিজি গ্যাসের বিকল্প হিসেবে এ বায়োগ্যাস ব্যবহার করছে। সূত্র জানায়, গরুর খামারের গোবর ও গোমূত্র প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে বায়োগ্যাস প্লান্ট স্থাপন করা হচ্ছে। তবে বায়োগ্যাস সরবরাহে প্রাথমিক খরচ অতিরিক্ত হওয়ায় অনেক খামারি প্লান্ট স্থাপন থেকে বিরত থাকছে। সাধারণত একটি খামার থেকে ২০টি সংযোগ দিতে হলে ওই খামারে ৫০-৬০টি গরু থাকতে হবে। সেক্ষেত্রে প্রকল্পটিতে প্রাথমিকভাবে খরচ পড়বে প্রায় ৪ লাখ টাকা। আর ৫০টি গ্যাসের লাইন দিতে খামারে গরু থাকতে হবে দেড় শতাধিক। খরচ পড়বে ১০-১১ লাখ টাকা। তবে ছোট পরিসরে ব্যক্তিগতভাবে চার-ছয়টি গরু থাকলে খরচ পড়বে সর্বোচ্চ ৪০ হাজার টাকা।

খামারিরা বায়োগ্যাসে ব্যবহৃত বর্জ্য পরবর্তী সময়ে জৈব সার হিসেবে বিক্রি করে বাড়তি টাকা আয় করছে। কৃষিজমিতে ওসব জৈব সারের চাহিদাও প্রচুর। বর্তমানে চট্টগ্রাম অঞ্চলে বায়োগ্যাসের লাইন নিতে হলে কর্ণফুলী উপজেলার মইজ্জারটেক, শিকলবাহা এলাকায় গ্রাহককে ৬-৭ হাজার টাকা এবং অন্য উপজেলায় চাহিদা তুলনামূলক কম থাকায় ৩ থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা বায়োগ্যাস প্লান্টের মালিককে দিতে হয়। তাছাড়া কর্ণফুলী উপজেলায় এক চুলার জন্য ১ হাজার ৪০০ টাকা ও দুই চুলার জন্য ২ হাজার টাকা দিতে হয়। অন্য উপজেলায় এক চুলা ১ হাজার ২০০ টাকা এবং দুই চুলার জন্য ১ হাজার ৮০০ টাকা বা তার কিছু কম টাকা দিতে হয়। সূত্র আরো জানায়, চট্টগ্রামে উপজেলা পর্যায়ে গবাদিপশুর খামারভিত্তিক প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠায় বায়োগ্যাসের নতুন সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। একটি বড় গরুর খামার তৈরি হলে গোবর ও মলমূত্র সংরক্ষণ করে সেগুলো সামান্য প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে বায়োগ্যাসে রূপান্তর করা হচ্ছে। সেগুলো মানুষের বাড়িতে এলপিজির বিকল্প হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে।

একটি বড় খামারে যদি ১৫০-৩০০ গরু থাকে তাহলে সেখানে বায়োগ্যাস প্লান্ট স্থাপন করলে পাইপলাইনের মাধ্যমে অন্তত ১০০-১৫০ পরিবারের কাছে ওই গ্যাস পৌঁছে দেয়া সম্ভব। বায়োগ্যাসের চুলা সাধারণ গ্যাস লাইনের চলার মতো না। এ গ্যাসের চাপ স্বাভাবিক গ্যাস বা সিলিন্ডার গ্যাসের থেকে অনেক বেশি। তাছাড়া এ গ্যাসে বিস্ফোরণ ঝুঁকি একেবারেই নেই। এদিকে এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ বায়োগ্যাস ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের মহাসচিব এখলাসুল হক জানান, ‘বায়োগ্যাস প্রকল্পগুলো সাধারণত বাংলাদেশে ব্যক্তিগতভাবে গড়ে উঠেছে। সরকার এখনো এ খাতে সেভাবে নজর দেয়নি। ব্যক্তিগত পর্যায়ে যে বায়োগ্যাস প্লান্ট স্থাপন করা হয়েছে, সেগুলো খুব ছোট পরিসরে গড়ে উঠছে। যার কারণে খাতটি দেশে এখনো লাভজনক হয়ে ওঠেনি।

তবে বর্জ্যরে রিসাইক্লিংয়ের কারণে যে সার তৈরি হয়, সেগুলো নিয়ে বাংলাদেশের আইনে সুস্পষ্ট বিধিনিষেধ আছে। তরল বর্জ্য বহন ও বিপণন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। যার কারণে বায়োগ্যাসে ব্যবহৃত বর্জ্য মাটির নিচে রেখে শুকিয়ে পরে তা কাজে লাগানো হয়। কিন্তু এ জৈব সারে এনপিকে নামক পদার্থ নষ্ট হয়ে যাওয়ায় জৈব সার কার্যত কোনো কাজে আসে না। সরকার এ শিল্প খাতে যদি বিনিয়োগ করে তাহলে দেশের বড় একটি অংশ বায়োগ্যাস ব্যবহার ও বাণিজ্যিকীকরণে লাভবান হবে।