মোঃ সাকিক হারুন ভূঁইয়া :
পবিত্র ঈদুল আজহার। ছুটি শুরু হওয়ায় ঘরমুখো মানুষ ভিড় করছে বাস টার্মিনালগুলোতে। তবে বৃষ্টির কারণে দুর্ভোগে পড়েছে মানুষ। টানা বৃষ্টিতে দুর্ভোগে পড়া যাত্রীরা অবস্থান নেয় বিভিন্ন ছাউনির নিচে। বুধবার সকালে রাজধানীর সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ী, ধোলাইপাড়, শনিরআখড়া ঘুরে দেখা গেছে, বৃষ্টির কারণে অনেকে সময়মতো বাস কাউন্টারে পৌঁছাতে না পারায় অনেক বাস বিলম্বে ছাড়ছে। ফলে এসব সড়কগুলোতে জটলা তৈরি হয়েছে। সকাল সাড়ে ৭টা থেকে থেমে থেমে বৃষ্টি পড়ায় বাস টার্মিনালগুলোর আশপাশে ছাউনির নিচে পরিবার নিয়ে আশ্রয় নিতে দেখা গেছে অনেককে। বাস কর্তৃপক্ষ বলছে, সকাল থেকে বৃষ্টি হওয়ায় অনেক যাত্রী আসতে পারছে না। ফলে সময়মতো বাস ছাড়া যাচ্ছে না। অনেক যাত্রী আগে এসে বৃষ্টিতে বিপত্তিতে পড়েছে। তবে গত দুইদিন ধরে বাংলাদেশের অর্থনীতির লাইফলাইন খ্যাত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জ অংশে ঘরমুখো যাত্রীদের চাপ বৃদ্ধি পেলেও সৃষ্টি হয়নি তীব্র যানজট। বিপরীতে মহাসড়কের অধিকাংশ লেনই ফাঁকা রয়েছে। নির্দিষ্ট সময় পর পর যানবাহনগুলো এক বাসস্ট্যান্ড থেকে অন্য বাসস্ট্যান্ডে ছেড়ে যাচ্ছে। এর ফলে কোনোরকম দুর্ভোগ ছাড়াই যাত্রীরা তাদের গন্তব্যস্থলে যেতে পারছেন। এতে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন চালক ও যাত্রীরা।
ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে বঙ্গবন্ধু সেতুতে যানবাহনের চাপ বেড়েছে কয়েকগুণ। গেলো ২৪ ঘণ্টায় সেতু পারাপার হয়েছে ৪২ হাজার ৫৬০টি যানবাহন। এতে ৩ কোটি ২৫ লাখ ৫১ হাজার ৪৫০ টাকার টোল আদায় হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার বঙ্গবন্ধু সেতু সাইড অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আহসানুল কবীর পাভেল এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
অন্যদিকে, বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কে সেতুর ওপরে দুর্ঘটনা এবং গাড়ি বিকল হওয়ার কারণে দফায় দফায় টোল আদায় বন্ধ ও চালকদের বেপরোয়া গাড়ি চালানোর কারণে ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কের ৮ কিলোমিটার এলাকায় থেমে থেমে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। মঙ্গলবার ভোর রাত থেকে বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্বপার থেকে টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার হাতিয়া পর্যন্ত যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে বিপাকে পড়েন ঘরমুখো মানুষ। পুলিশ জানায়, মঙ্গলবার ভোরে বঙ্গবন্ধু সেতুর ওপর দুইবার গাড়িতে সংঘর্ষ ও একবার গাড়ি বিকল হয়। এতে ভোর রাত ৩টার পর ১০ থেকে ১২ মিনিট, ৪টার পর প্রায় এক ঘণ্টা ও সাড়ে ৫টা থেকে ৫টা ৪৫ মিনিট পর্যন্ত টোল আদায় বন্ধ রাখে সেতু কর্তৃপক্ষ। এতে যানজট শুরু হয়। এলেঙ্গা হাইওয়ে থানার ওসি জাহিদ হাসান বলেন, আমরা সড়কে দায়িত্ব পালন করছি। গাড়ি টানা শুরু হয়েছে আশা করি দ্রুত সময়ের মধ্যে স্বাভাবিক হবে।
তবে ঈদযাত্রায় এবারো বড় ধরনের ভোগান্তি নেই পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে। স্বস্তি নিয়েই ফেরি ও লঞ্চ পার হতে পারছেন যাত্রীরা। সরেজমিন খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত সোমবার রাত থেকেই পাটুরিয়া ঘাটে যাত্রী ও যানবাহনের চাপ বাড়তে থাকে। সকালের দিকে দূরপাল্লার বাসের তুলনায় ছোট গাড়ি ও মোটরসাইকেলের চাপ ছিলো বেশি। যানবাহন ও যাত্রী চাপ থাকলেও দীর্ঘসারি কিংবা যানজটে ভোগান্তির শিকার হতে হয়নি ঘরমুখো মানুষকে। ঘাটে এসে সর্বোচ্চ ১৫-২০ মিনিট অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে যানবাহনগুলোকে। ভোগান্তি ছাড়াই ফেরি পার হতে পেরে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন যাত্রী ও পরিবহন শ্রমিকরা। তবে মাঝে মধ্যে বৃষ্টির কারণে যাত্রীদের দুর্ভোগের মধ্যে পড়তে হচ্ছে।
তবে ঈদযাত্রায় সড়ক ও নৌপথের বিভিন্ন রুটে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য চলছে বলে অভিযোগ করেছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে সংগঠনের মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী এ দাবি জানান। অনতিবিলম্বে এ ভাড়া নৈরাজ্য বন্ধে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, বিআরটিএ, জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালতের তৎপরতা বাড়ানোর দাবিও জানিয়েছে সংগঠনটি। তিনি বলেন, এবারের ঈদে যানজট ও জনজট নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রশংসনীয় তৎপরতা লক্ষ্য করা গেলেও বিভিন্ন রুটে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য চলছে। ঢাকা থেকে উত্তরবঙ্গ ও দক্ষিণবঙ্গের পথে বিভিন্ন রুটে গত সোমবার থেকে যাত্রীপ্রতি ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা বাড়তি ভাড়া নেওয়া হচ্ছিল।
ঈদে রেলপথে টিকেটবিহীন যাত্রী ঠেকাতে কমলাপুরে তিন স্তরের ব্যবস্থা হয়। ঢাকা রেলওয়ে স্টেশনে প্রথমবারের মতো প্লাটফর্মে প্রবেশের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়। কেবল টিকিটধারী যাত্রীদেরই ছিল ঢোকার অনুমতি। কিন্তু ঈদের আগে গার্মেন্টস ছুটি হওয়ার দিনে যাত্রীদের নিয়ম না মানার কারণে ভেঙে পড়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা। এবার যেন সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয়, সেজন্য গত ঈদের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা রেলওয়ে স্টেশনের ব্যবস্থাপক মাসুদ সারওয়ার। মঙ্গলবার স্টেশন ব্যবস্থাপকের নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত এক ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা জানান। তিনি বলেন, গতবার আমাদের যে ত্রুটিগুলো ছিল, সেগুলোকে সংশোধন করে পরিপূর্ণ করা হয়েছে। বাংলাদেশ রেলওয়ের প্রত্যেকটা কর্মচারী ও কর্মকর্তা ট্রেনে ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে সচেষ্ট রয়েছে। মাসুদ সারওয়ার বলেন, আজকে (গতকাল মঙ্গলবার) ঈদযাত্রার চতুর্থ দিন। অন্যান্য দিনের তুলনায় যাত্রীর চাপ বেড়েছে, এটা সত্য। তবে শিডিউল বিপর্যয়ের মতো কোনো ঘটনা ঘটেনি। দু-একটি ট্রেন বিলম্বে ছাড়তে পারে। ঈদের সময় যাত্রীদের নিরাপত্তার স্বার্থে ৩০-৪০ মিনিট বিলম্ব বা ১ ঘণ্টা বিলম্ব- এটা তেমন কিছু ব্যাপার না। এই ট্রেনগুলো ঢাকায় আসতেই দেরি করেছে। তাই ছাড়তেও দেরি হয়েছে। আমার মনে হয়, আজকে যাত্রীর চাপ কমে যাবে।
আরও পড়ুন
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে ৬ জুলাইকে ‘বিশ্ব পল্লী উন্নয়ন দিবস’ হিসেবে ঘোষণার রেজ্যুলেশন গৃহীত
যমুনা সেতুতে সড়ক দুর্ঘটনায় বাবা-ছেলেসহ নিহত ৩
সুপার টাইফুন ইয়াগির আঘাতে চীনে ২ জনের মৃত্যু