নিজস্ব প্রতিবেদক:
বেঁধে দেয়া দামে ডলার বিক্রি করছে না কোনো ব্যাংক। বরং ঘোষিত দরের চেয়ে ব্যাংকগুলো অনেক বেশি দামে ডলার কেনাবেচা করছে। ফলে শুধু কাগজে-কলমেই থেকে যাচ্ছে আমদানির জন্য ডলারের দাম ৯৫ টাকা ৫ পয়সার দর। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো ডলার কেনাবেচার যে দর ঘোষণা করছে ওই দরের সঙ্গে বাস্তবতার কোনো মিল নেই। মূলত ব্যাংকগুলোতে ডলারের সঙ্কট আরো প্রকট হওয়ায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। ব্যাংকিং খাত সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বর্তমানে ব্যাংকে চাহিদা অনুযায়ী ডলার পাওয়া যাচ্ছে না। সেজন্য প্রতিদিনই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে দিতে হচ্ছে ডলারের জোগান। কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রায় প্রতিদিনই ৫ থেকে ১১ কোটি ডলার বিক্রি করছে। ফলে কমে যাচ্ছে রিজার্ভের পরিমাণও। বর্তমানে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো বিদেশি এক্সচেঞ্জ হাউজ থেকে ১১০ টাকা থেকে ১১০ টাকা ৫০ পয়সা দরে রেমিট্যান্সের ডলার কিনছে। আর আমদানির জন্য করপোরেট সেলের আওতায় অন্য ব্যাংকের কাছে ১১১ টাকা থেকে ১১২ টাকায় বিক্রি করছে। আর ওই দামে ডলার কিনে বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তাদের আমদানি করতে হচ্ছে। তাতে বেড়ে যাচ্ছে আমদানি ব্যয়। ফলে বাড়ছে পণ্যের দামও। সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, ইতালি, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যে সরকারি ব্যাংকগুলোর যেসব এক্সচেঞ্জ হাউজ রয়েছে, তারা ওই দামে ডলার কিনছে। ফলে প্রবাসীরাও ডলারের বেশি দাম পাচ্ছে। এমন অবস্থায় অনেক প্রবাসী ডলারের দাম আরো বাড়িয়ে বিক্রি করতে চাইলে ব্যাংকগুলো বাড়াতে চাচ্ছে না।
সূত্র জানায়, ব্যাংকগুলো বৈদেশিক মুদ্রা কেনাবেচার জন্য প্রতিদিন বিভিন্ন খাতের দর আগাম ঘোষণা করে। ওই ঘোষণা ব্যাংকের প্রতিটি বৈদেশিক বাণিজ্য শাখায় প্রদর্শন করতে হয়। একই সঙ্গে তা বাংলাদেশ ব্যাংকেও পাঠাতে হয়। ঘোষিত দরে ৯৪ টাকা ৫ পয়সার মধ্যেরেমিট্যান্সের ডলার কেনার কথা। কিন্তু দেশের ভেতরে এই দরে কিনলেও বিদেশে বেশি দামে ডলার কেনা হচ্ছে। আন্তঃব্যাংকে ডলারের দাম ৯৫ টাকা বেঁধে দেয়া আছে। কিন্তু আন্তঃব্যাংকে ওই দামে কোনো ব্যাংক ডলার বেচাকেনা করে না। ফলে কার্যত অচল হয়ে পড়েছে আন্তঃব্যাংক মুদ্রা বাজার। এমন অবস্থায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে আন্তঃব্যাংক মুদ্রা বাজার সচল করার দাবি জানিয়েছে ব্যাংকাররা। কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংকও কিছুই করতে পারছে না। কারণ বাজারে চাহিদা অনুযায়ী ডলার মিলছে না। বর্তমানে আন্তঃব্যাংকের বিকল্প হিসাবে গড়ে উঠেছে করপোরেট সেল। তার আওতায় এক ব্যাংক অন্য ব্যাংকের কাছে আগাম এক সপ্তাহ, ১৫ দিন, ৩ মাস, ৬ মাস মেয়াদি ডলার বিক্রি করছে। তাতে দাম রাখা হচ্ছে ১১১ থেকে ১১২ টাকা।
সূত্র আরো জানায়, বিদেশি এক্সচেঞ্জ হাউজ থেকে ব্যাংকগুলো যেসব ডলার ১১০ থেকে ১১১ টাকায় কিনছে সেগুলো এখানে বিক্রি করছে। ওসব ডলার কিনে বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারা আমদানি করছে। অথচ বাংলাদেশ ব্যাংক আমদানির জন্য প্রতি ডলারের দাম বেঁধে দিয়েছে ৯৫ টাকা ৫ পয়সা। কিন্তু ওই দরে আমদানির জন্য ডলার পাওয়া যাচ্ছে না। রপ্তানিকারকরা তাদের ব্যাক টু ব্যাক এলসির চাহিদা মেটানোর পর অবশিষ্ট ডলার থাকলে তা ব্যাংকের কাছে ৯৪ টাকা ৫ পয়সা থেকে ৯৮ টাকা ২০ পয়সা দরে বিক্রি করে। তাছাড়া যেসব রেমিট্যান্সের অর্থ আসে সেগুলো থেকেও কিছু ডলার ওই দরে বিক্রি হয়। সরকারি ব্যাংকসহ বেসরকারি ব্যাংকগুলো বিদেশি এক্সচেঞ্জ হাউজ থেকে চড়া দামে ডলার কেনায় এখন প্রবাসীরা কম দামে ডলার ছাড়ছে না। ফলে ৯৪ টাকার মধ্যে এখন রেমিট্যান্সের ডলার প্রবাহও কমে গেছে। আর বাজারে ডলারের সরল প্রবাহ না পেয়ে ব্যাংকগুলো এখন নিজেরাই বিদেশি এক্সচেঞ্জ হাউজমুখী হয়েছে চড়া দামে রেমিট্যান্সের ডলার কিনছে। আর ওই প্রতিযোগিতায় পড়ে সরকারি ব্যাংকগুলো যেমন ডলারের দাম বাড়িয়েছে, তেমনি আন্তর্জাতিক এক্সচেঞ্জ হাউজগুলোও বাড়িয়ে দিচ্ছে দাম। বিভিন্ন ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তির মাধ্যমে ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন, মানিগ্রাম, স্মল ওয়ার্ল্ড ১০৫ টাকা থেকে ১১০ টাকা দরে রেমিট্যান্সের ডলার কিনে ব্যাংকে জোগান দিচ্ছে। ব্যাংকগুলো আরো এক টাকা বেশি দামে কেনে। তারপর গ্রাহকদের কাছে আরো এক টাকা বেশি দরে বিক্রি করছে। অর্থাৎ প্রতি ডলারের দাম পড়ছে ১০৭ টাকা থেকে ১১২ টাকা।
আরও পড়ুন
বাংলাদেশে চিংড়ির রফতানি পরিমাণ কমছে ধারাবাহিকভাবে
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর দাবিতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের সামনে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ