October 11, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Thursday, March 10th, 2022, 8:19 pm

বেনজেমার অবিশ্বাস্য হ্যাটট্রিকে শেষ আটে রিয়াল

অনলাইন ডেস্ক :

তারকাসমৃদ্ধ পিএসজির বিপক্ষে প্রথম লেগের পরাজয়ে রিয়াল মাদ্রিদের চ্যালেঞ্জ আগে থেকেই ছিল বেশ কঠিন। কিলিয়ান এমবাপের প্রথমার্ধের গোলে সেটা হয়ে উঠল পাহাড়সম। বিরতির পর প্রবল চাপ তৈরি করেও মিলছিল না গোলের দেখা। একটা সময় সেটা অসম্ভবই মনে হচ্ছিল। কিন্তু এরপর যেভাবে তারা ঘুরে দাঁড়াল, তা অসাধারণের চেয়েও বেশি কিছু। প্রতিপক্ষের ভুল আর সৌভাগ্যের ছোঁয়ায় হ্যাটট্রিকের আনন্দে ভাসলেন করিম বেনজেমা। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের কোয়ার্টার-ফাইনালে পা রাখল রেকর্ড চ্যাম্পিয়নরা। সান্তিয়াগো বের্নাবেউয়ে বুধবার রাতে ফিরতি লেগে ৩-১ গোলে জিতে শেষ আটে উঠল রিয়াল। প্রথম লেগে ১-০ গোলে জিতেছিল পিএসজি। দুই লেগ মিলিয়ে ৩-২ অগ্রগামিতায় পরের ধাপে গেল কার্লো আনচেলত্তির দল। প্রথম লেগে হারের পরই আনচেলত্তি ছুড়েছিলেন হুঙ্কার; ফিরতি পর্বে কেবল রিয়ালের ১১ জনের বিপক্ষে নয়, পুরো বের্নাবেউয়ের সঙ্গে লড়তে হবে পিএসজিকে। যে লড়াইয়ে বলা যায় ভরাডুবিই হলো মেসি-নেইমার-এমবাপেদের নিয়ে গড়া দলটির। ৬১ হাজারের বেশি দর্শকের সামনে প্রথমার্ধটা প্রত্যাশিতই কাটে তাদের। প্রথম ৪৫ মিনিটে দুই দলই সমান আটটি করে শট নেয়, রিয়ালের তিনটি ও পিএসজির চারটি ছিল লক্ষ্যে। দ্বিতীয় অর্ধে বলা যায় পিএসজিকে উঠে দাঁড়াতেই দেয়নি ১৩ বারের চ্যাম্পিয়নরা। পুরোটা সময়ে বল দখলে পিছিয়ে থাকলেও সর্বমোট গোলের উদ্দেশ্যে ২১টি শট নেয় রিয়াল, যার সাতটি লক্ষ্যে। সেখানে পিএসজি মোট ১০টি শট নিতে পারে, তার মানে দ্বিতীয় ভাগে মাত্র দুটি শট নিতে পারে তারা। টিকে থাকতে গোল করতেই হতো, সেই লক্ষ্যে প্রথম মিনিট থেকে চাপ বাড়ানোর চেষ্টা করে রিয়াল। পাঁচ মিনিটের মধ্যে দ্বুার প্রতিপক্ষের রক্ষণ ভেঙে বক্সে ঢুকেও পড়ে তারা। দুবারই বল যায় মার্কো আসেনসিওর পায়ে; প্রথমবার শটই নিতে পারেননি তিনি, দ্বিতীয়বারে তার ভলি রক্ষণে প্রতিহত হয়। কিলিয়ান এমবাপের একক প্রচেষ্টার প্রতি-আক্রমণে অষ্টম মিনিটে এগিয়ে যেতে পারতো পিএসজি। কিন্তু ফরাসি ফরোয়ার্ডের শট ঝাঁপিয়ে ঠেকান থিবো কোর্তোয়া। চার মিনিট পর নিজেদের ভুলে আবারও গোল খেতে বসেছিল স্বাগতিকরা। এবারও এমবাপের নিচু শট ঠেকিয়ে দেন রিয়াল গোলরক্ষক। সমানতালে চলতে থাকা আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণের মাঝে ২৫তম মিনিটে জানলুইজি দোন্নারুম্মার নৈপুণ্যে বেঁচে যায় পিএসজি। দূর থেকে বেনজেমার বুলেট গতির শটে ঝাঁপিয়ে কোনোমতে আঙুল ছোঁয়ান ইটালিয়ান গোলরক্ষক, বল দূরের পোস্ট ঘেঁষে বেরিয়ে যায়। ৩১তম মিনিটে দুই তারকার দারুণ বোঝাপড়ায় নিশ্চিত সুযোগ পায় পিএসজি। সতীর্থকে বল বাড়িয়ে চোখের পলকে ছয় গজ বক্সে ঢুকে পড়েন মেসি। রক্ষণচেরা পাস বাড়ান নেইমার। বল ধরে দুরূহ কোণ থেকে শটটি যদিও লক্ষ্যে রাখতে পারেননি আর্জেন্টাইন তারকা। দুই মিনিট পর জালে বল পাঠিয়ে উচ্ছ্বাসে মাতেন এমবাপে। তবে আক্রমণের শুরুতে নুনো মেন্দেস অফসাইডে ছিলেন। ভিএআরের সিদ্ধান্তে থেমে যায় তাদের উদযাপন। হতাশা ঝেড়ে ফেলতে অবশ্য মোটেও সময় নেননি এমবাপে। নিজেদের সীমানা থেকে থ্রু বল বাড়ালেন নেইমার। দারুণ ক্ষীপ্রতায় ছুটে বল ধরে ডি-বক্সে ঢুকে ঠান্ডা মাথায় সামনে এক পলক দেখে ডিফেন্ডার দাভিদ আলাবাকে কোনো সুযোগ না দিয়ে শট নিলেন বিশ্বকাপ জয়ী তারকা। ঝাঁপিয়ে বলের নাগাল পেলেন না কোর্তোয়া। ইউরোপ সেরা প্রতিযোগিতাটিতে নবম খেলোয়াড় হিসেবে রিয়ালের বিপক্ষে টানা তিন ম্যাচে গোল করলেন এমবাপে। কনিষ্ঠতম হিসেবে করলেন তিনি, ২৩ বছর ৭৯ দিন বয়সে। দ্বিতীয়ার্ধের নবম মিনিটে বল পায়ে দারুণ কারিকুরিতে কোর্তোয়াকে কাটিয়ে আবারও লক্ষ্যভেদ করেন এমবাপে। তবে এবার তিনি নিজেই অফসাইডে ছিলেন। নিজেদের অমার্জনীয় ভুলে ৬১তম মিনিটে গোল হজম করে পিএসজি। অনেক দূর থেকে গোলরক্ষককে অহেতুক ব্যাকপাস দিলেন মার্কো ভেরাত্তি। সতীর্থকে পাস বাড়াতে এক মুহূর্ত দেরি করে ফেললেন দোন্নারুম্মা, ছুটে গিয়ে চ্যালেঞ্জ জানালেন বেনজেমা। চাপের মুখে বল ক্লিয়ার করতে গিয়ে ছয় গজ বক্সের অন্য পাশে ভিনিসিউসের পায়ে বল তুলে দিলেন ইউরো-২০২০ এর সেরা গোলরক্ষক। ওখান থেকে ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ডের পাস পেয়ে ফাঁকা জালে গোলটি করেন বেনজেমা। জমে ওঠে লড়াই। গোল পেয়ে আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠা রিয়াল কয়েক মিনিটে দারুণ কয়েকটি সুযোগ তৈরি করে। বেনজেমার হেড অল্পের জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হওয়ার পর ভিনিসিউসের শট রুখে দেন গোলরক্ষক। ৭২তম মিনিটে ছয় গজ বক্সের বাইরে ফাঁকায় বল পেয়ে উড়িয়ে মারেন ভিনিসিউস! প্রবল চাপ ধরে রেখে খানিক পরই দুই মিনিটের মধ্যে আরও দুই গোল করে চালকের আসনে উঠে বসে রিয়াল। ৭৬তম মিনিটে মদ্রিচের পাস বক্সে পেয়ে ঘুরেই শট নিলেন বেনজেমা। ছুটে এসে স্লাইড করে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলেন মার্কিনিয়োস, তার পায়ে লেগেই বল একটু ওপরে উঠে গোলরক্ষককে ফাঁকি দিয়ে খুঁজে নিল ঠিকানা। সেই ধাক্কা কাটিয়ে না উঠতেই আবারও গোল হজম করল পিএসজি। প্রতি-আক্রমণে ডি-বক্সে ঢুকে ভিনিসিউস যার কাছে বল হারান সেই মার্কিনিয়োসই ক্লিয়ার করতে গিয়ে তুলে দেন বেনজেমার পায়ে। প্রথম ছোঁয়ায় নিচু শটে কাছের পোস্ট দিয়ে স্কোরলাইন ৩-১ করেন তিনি। দুই লেগ মিলিয়ে স্কোরলাইন ৩-২, লড়াইয়ে প্রথমবারের মতো এগিয়ে গেল রিয়াল। বাকি সময়েও সমানভাবে চাপ ধরে রেখে উৎসবে মেতে ওঠে তারা। যোগ করা সময়ের শেষ দিকে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন ম্যাচ জুড়ে বিবর্ণ থাকা মেসি। কিন্তু ফ্রি কিকে বল অল্পের জন্য ক্রসবারের ওপর দিয়ে উড়ে গেলে আর নায়ক হয়ে ওঠা হয়নি তার। ম্যাচে ফেরা হয়নি পিএসজির। কাড়ি কাড়ি অর্থ ঢেলেও তাই আরও একবার অধরা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়ের স্বপ্ন আগেভাগেই ভেঙে গেল প্যারিসের ধনী ক্লাবটির।