November 5, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Sunday, July 18th, 2021, 8:04 pm

বেশিরভাগ জেলায় মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণে নানা অনিয়মের অভিযোগ

অনলাইন ডেস্ক :

দেশে সব জেলায় মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ প্রকল্পেও নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। নির্মিত বেশিরভাগ ভবনেরই নির্মাণসামগ্রীর প্রয়োজনীয় টেস্ট রিপোর্ট পাওয়া যায়নি। পাওয়া যায়নি ঠিকাদারের প্রোগ্রাম অব ওয়ার্কের কোনো নথিও। ইতিমধ্যে কোনো কোনো ভবনের বিভিন্ন স্থানে প্লাস্টারে ফাটল দেখা দিয়েছে। পানি ও বৈদ্যুতিক লাইনে সমস্যা বিদ্যমান। তাছাড়া রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে বিভিন্ন ধরনের ফিটিংস, ফার্নিচার ইত্যাদি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। মূলত ভবন নির্মাণের পরিকল্পনাতেই ত্রুটি ধরা পড়েছে। ভবনের নিচতলায় কোনো শৌচাগার রাখা হয়নি। আর মার্কেটের জন্য যে দোকান নির্মাণ করা হয়েছে তা ভবনের সামনের প্রাচীরের কারণে ভাড়া দিতে সমস্যা হচ্ছে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দেশে ৬৪টি মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবনের মধ্যে ইতিমধ্যে ৬৩টি ভবন হস্তান্তর করা হয়েছে এবং একটি ভবন (ঢাকা) চলতি মাসেই হস্তান্তর করা হবে। প্রকল্পটি প্রাথমিক অবস্থায় ৪৮ জেলায় এবং পরে ১৬টি জেলা অন্তর্ভুক্ত করে মোট ৬৪টি জেলায় সংস্থান রেখে ডিপিপি অনুমোদন করা হয়। তাছাড়া ভবনের জন্য যন্ত্রপাতি ও ফার্নিচার কেনা, গণপূর্ত অধিদপ্তরের ৩ বার রেট শিডিউল (২০০৮, ২০১১ ও ২০১৪) পরিবর্তন, সব ভবনের জন্য কনফারেন্স টেবিল, বঙ্গবন্ধুর ম্যূরাল স্থাপন, বীরশ্রেষ্ঠদের ভাস্কর্য, মুক্তিযুদ্ধের বই, সিডি, তৈল চিত্র এবং ২৮ ইঞ্চি এলইডি/এলসিডি টেলিভিশন সংস্থান রাখার জন্য ডিপিপি সংশোধন করা হয়। ফলে খরচ বাড়ে। সব জেলাতে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কার্যালয়ের জন্য নির্মিত ভবনের তৃতীয় তলা নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু সেখানে বয়োবৃদ্ধ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ওঠানামার জন্য কোনো লিফট নেই। তাছাড়া ভবনের সামনে যানবাহন পার্কিং করার জন্য কোনো জায়গাও নেই। আর যেসব ভবন ভাড়া দেয়া যায়নি সেসব ভবনের কোনো রক্ষণাবেক্ষণ করা হয় না। অনেক ভবনে ইতোমধ্যেই ফাটলও দেখা দিয়েছে।
সূত্র জানায়, মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ প্রকল্পের মেয়াদ দফায় দফায় বাড়ানো হয়েছে। ফলে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সময় বৃদ্ধি পেয়েছে ২৬৭ শতাংশ। একই সঙ্গে বেড়েছে ব্যয়ও। মূল ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) অনুসারে মোট প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছিল ১১৮ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। প্রথম সংশোধনীর মাধ্যমে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১৩০ কোটি ২০ লাখ টাকায়। সেক্ষেত্রে বেড়েছে প্রায় ১০ শতাংশ। পুনরায় সংশোধিত ডিপিপিতে প্রাক্কলিত ব্যয় বাড়িয়ে করা হয় ১৫২ কোটি ৬৬ লাখ ৭৬ হাজার টাকা, যা মূল ব্যয়ের চেয়ে ২৮ দশমিক ৫ শতাংশ বেশি এবং সংশোধিত ডিপিপির চেয়ে ১৭ দশমিক ৩ শতাংশ বেশি। মূল প্রকল্পটি ২০১০ সালের জুলাই থেকে ২০১৩ সালের জুনে হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু প্রথম সংশোধনের মাধ্যমে এক বছর বাড়িয়ে ২০১৪ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়। তারপর দ্বিতীয় সংশোধনের সময় আবারো এক বছর বাড়িয়ে ২০১৫ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়। তাতেও বাস্তবায়ন শেষ না হলে আন্তঃখাত সমন্বয়ের প্রথম সংশোধনীর মাধ্যমে ৩ বছর বাড়িয়ে করা হয় ২০১৭ সালের জুন পর্যন্ত। তাছাড়া প্রাইস কনটিনজেন্সি করা হয় ২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত। শেষ পর্যন্ত আন্তঃখাত সমন্বয় দ্বিতীয় সংশোধনীর মাধ্যমে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হয়েছিল। প্রকল্পটির ভূমি অধিগ্রহণ করতে দেরি হওয়ায় বাস্তবায়নে বিলম্ব হয়েছে। তাছাড়া ঠিকাদারদের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী প্রতিটি ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে ঠিকাদাররা সময়ক্ষেপণ করেছে। নির্মাণকাজের জন্য বারবার সময় বৃদ্ধি করার ফলে প্রতিটি ভবন নির্মাণে গড়ে ৩ থেকে ৪ বছর সময় বেশি লেগেছে।
সূত্র আরো জানায়, প্রকল্পটির মোট প্রাক্কলিত ব্যয় ১৫২ কোটি ৬৬ লাখ ৭৬ হাজার টাকা। আর গত এপ্রিল পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ১৩৩ কোটি ২৪ লাখ ৮৫ হাজার টাকা। প্রাক্কলনের বিপরীতে ব্যয় হয়েছে ৮৭ দশমিক ২৮ শতাংশ। তার মধ্যে মূলধনী খাতের ব্যয় হয়েছে ৮৭ দশমিক ৭৩ শতাংশ এবং রাজস্ব খাতের ব্যয় হয়েছে ৬৭ দশমিক ২৮ শতাংশ। তবে প্রকল্পের কোনো কোনো ভবনের স্থাপত্য ও ইমারতের নকশারও পরিবর্তন দেখা যায়। তাছাড়া মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন ভাড়াটিয়ারা তাদের সুবিধামতো বিভিন্ন ফ্লোরের আর্কিটেকচারাল প্ল্যান পরিবর্তন করছে। সেক্ষেত্রে একটি সুস্পষ্ট নির্দেশনা জরুরি। নির্মাণ কাজের ক্ষেত্রে ভবনের মূল নকশা পরিবর্তন করা হলে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন সাপেক্ষে করা উচিত। তাছাড়া ভবন নির্মাণ কাজ শেষ না হলে আসবাবপত্র কেনার ক্ষেত্রেও সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন।
এদিকে এ প্রসঙ্গে মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক ড. সৈয়দ শাহজাহান আহমেদ জানান, প্রকল্পটিতে অনেক প্রকল্প পরিচালকই দায়িত্ব পালন করেছেন। যে কারণে ত্রুটির বিষয়গুলো ঠিকভাবে বলা সম্ভব হচ্ছে। তবে প্রকল্পটি গত মাসে শেষ হয়েছে। এখন সংশোধনের কোনো বিষয় নেই।
অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে আইএমইডি’র সচিব প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী জানান, নিবিড় পরিবীক্ষণের মাধ্যমে দেখা হয়েছে প্রকল্পটির কোথায় কোথায় ত্রুটি ছিল। ওসব বিষয়ে সুপারিশ দিয়ে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। আইএমইডি’র লক্ষ্য হলো বর্তমান ত্রুটি-বিচ্যুতি সংশোধনের পাশাপাশি আগামীতে একই ধরনের প্রকল্প হাতে নেয়ার ক্ষেত্রে যাতে ওসব সমস্যা না হয় সে বিষয়ে সতর্ক থাকা।