November 2, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Friday, November 12th, 2021, 8:25 pm

বেড়েই চলেছে দেশের আমদানি ও রফতানির মধ্যে ব্যবধানের পরিমাণ

ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

ক্রমাগত বেড়েই চলেছে দেশের আমদানি ও রফতানি মধ্যে ব্যবধানের পরিমাণ। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমদানিতে জোয়ার লেগেছে। ফলে চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিক অর্থাৎ জুলাই-সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশে পণ্য বাণিজ্যে সার্বিক ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬৫০ কোটি ৩০ লাখ (৬.৫ বিলিয়ন) ডলার। যা গতবছরের একই সময়ের চেয়ে ৩ গুণেরও বেশি। ২০২০-২১ অর্থবছরের ওই তিন মাসে বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ ছিল ২০৪ কোটি (২.০৪ বিলিয়ন) ডলার। সদ্য প্রকাশিত বাংলাদেশ ব্যাংক বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের হালনাগাদ তথ্যানুযায়ী বাংলাদেশ চলতি অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে ১ হাজার ৭৩২ কোটি ১০ লাখ (১৭.৩২ বিলিয়ন) ডলারের বিভিন্ন ধরনের পণ্য আমদানি করেছে। ওই অঙ্ক গতবছরের একই সময়ের চেয়ে ৪৭ দশমিক ৫৯ শতাংশ বেশি। ২০২০-২১ অর্থবছরের ওই ৩ মাসে ১ হাজার ১৭৫ কোটি ৬০ লাখ ডলারের পণ্য আমদানি হয়েছিল। আর বাংলাদেশ ২০২১-২২ অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বরে বিভিন্ন পণ্য রফতানি করে ১ হাজার ৮১ কোটি ৮০ লাখ (১০.৮১ বিলিয়ন) ডলার আয় করেছে। যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ বেশি। ওই হিসাবেই অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে পণ্য বাণিজ্যে সার্বিক ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৬ দশমিক ৫০ বিলিয়ন ডলার। এমন ধারা অব্যাহত থাকলে গত অর্থবছরের চেয়ে অনেক বেশি বাণিজ্য ঘাটতি নিয়ে অর্থবছর শেষ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, করোনা মহামারীর কারণে আমদানি কমে যাওয়ায় গত অর্থবছরের প্রথমার্ধে দেশের বাণিজ্য ঘাটতি সহনীয় পর্যায়ে ছিল। কিন্তু রফতানির প্রধান বাজার ইউরোপ-আমেরিকাসহ অন্যান্য দেশে করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করায় দ্বিতীয়ার্ধে এসে আমদানি বাড়তে শুরু করে। শেষ পর্যন্ত অতীতের সব রেকর্ড ছাপিয়ে পণ্য বাণিজ্যে প্রায় ২৩ বিলিয়ন (২ হাজার ৩০০ কোটি) ডলারের ঘাটতি নিয়ে ২০২০-২১ অর্থবছর শেষ হয়। ওই অর্থবছরের শেষের কয়েক মাসে আমদানিতে উল্লম্ফনের কারণে অর্থনীতির অন্যতম প্রধান দুই সূচক আমদানি ও রফতানির ব্যবধান চূড়ায় ওঠে।
সূত্র জানায়, গত দেড় বছরের বেশি সময় কোভিড-১৯ মহামারীর মধ্যেই অর্থনৈতিক কর্মকা- পরিচালিত হয়েছে। প্রথমদিকে আমদানি কমলেও পরে বেড়েছে। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসছে। তাই আমদানি বাড়ছে। পদ্মা সেতু, বঙ্গবন্ধু টানেল, মেট্রোরেলসহ বড় বড় প্রকল্পের কাজ মহামারীর মধ্যেও এগিয়ে যাচ্ছে। ওসব প্রকল্পের জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম আমদানিতে মোটা অঙ্কের অর্থ ব্যয় হচ্ছে। তাছাড়া বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেল, খাদ্যসহ অন্যান্য পণ্যের দামও বেড়েছে। ওসব কারণেই আমদানি খাতে খরচ বেশি হচ্ছে।
এদিকে দেশের আমদানি-রফতানি বাণিজ্যের বিদ্যমান পরিস্থিতি প্রসঙ্গে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএসস) গবেষক ও রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান জায়েদ বখত জানান, আমদানি-রফতানির বিদ্যমান পরিস্থিতিতে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। কারণ রেমিটেন্স কমলেও রফতানির গতি বেশ ভালো। আর বিদেশী মুদ্রার রিজার্ভ এখনো সন্তোষজনক অবস্থায় আছে। এমন অবস্থায় আমদানি বাড়লেও কোন সমস্যা নেই। আর আমদানি বাড়া মানে বিনিয়োগ বাড়া। বিনিয়োগ বাড়া মানে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হওয়া। তার মানে সামগ্রিকভাবে অর্থনীতিতে গতি সঞ্চার হওয়া।
অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর জানান, দেশের আমদানির সঙ্গে রফতানিও পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। যা স্বস্তিদায়ক। আশা করা যায় রফতানির ইতিবাচক ধারা বেশ কিছুদিন অব্যাহত থাকবে। ফলে আমদানি যা বাড়ছে তা যদি ঠিকঠাক মতো বিনিয়োগে আসে, তাহলে অর্থনীতির জন্য ভালো হবে। আশার কথা হচ্ছে, পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে আগামী বছর থেকেই যান চলাচল করবে। মেট্টোরেলও পুরোদমে চালু হবে। কর্ণফুলী টানেলের নির্মাণ কাজও শেষ হবে। তাছাড়া আরো কয়েকটি বড় প্রকল্পের কাজ চলছে। কয়েকটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের কাজও শেষ হয়েছে। আরো কয়েকটির কাজ চলছে।