October 13, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Thursday, January 12th, 2023, 9:42 pm

বেড়েই চলেছে দেশে গাড়ি বিক্রি ও নিবন্ধনের পরিমাণ

ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

বেড়েই চলেছে দেশে গাড়ি বিক্রি ও নিবন্ধনের পরিমাণ। গাড়ির ক্ষেত্রে সরকারের নিয়ন্ত্রণমূলক পদক্ষেপেও গাড়ি বিক্রি ও নিবন্ধনে নতুন রেকর্ড গড়েছে। সরকারই এেেদশে ব্যক্তিগত অন্যতম বড় ক্রেতা। কিন্তু বিদ্যমান অর্থনৈতিক সঙ্কটে গত বছরের জুলাইয়ে সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত ও সংবিধিবদ্ধ রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানি ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের গাড়ি কেনার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। তাছাড়া ডলার সঙ্কট তীব্র হতে শুরু করলে ব্যাংকগুলোও গাড়ি আমদানির ঋণপত্র (এলসি) খুলতে গড়িমসি শুরু করে। বর্তমানে প্রায় বন্ধ গাড়ি আমদানির ঋণপত্র খোলা। গাড়ি আমদানিতে আরোপ করা হয়েছে শতভাগ মার্জিন নীতি। কিন্তু তারপরও দেশে ব্যক্তিগত গাড়ি বিক্রি বেড়েছে। আর আগের বছরের চেয়ে নিবন্ধনে প্রায় ৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। আর সামগ্রিকভাবে দেশে প্রায় ৩০ শতাংশ বেড়েছে সব ধরনের গাড়ির নিবন্ধন। বারভিডা এবং বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দেশে ২০২২ সালে ৫ লাখ ৭১ হাজার ১৫১ ইউনিট গাড়ি নিবন্ধিত হয়েছে। তার আগের বছর নিবন্ধনের পরিমাণ ছিল ৪ লাখ ৪৫ হাজার ৩০ ইউনিট। তবে গত বছর দেশে যতো গাড়ি নিবন্ধিত হয়েছে তার ৮৮ শতাংশই মোটরসাইকেল। মোটরসাইকেল নিবন্ধনে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩৫ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ। ডলার সঙ্কটে বাংলাদেশ ব্যাংক গাড়ি আমদানিতে শতভাগ মার্জিন নির্ধারণ করেছে। আগে একটি গাড়ি আমদানি করতে ব্যবসায়ীরা মূল্যের ৫ শতাংশ পরিশোধ করেই ঋণপত্র খুলতে পারতো। কিন্তু শতভাগ মার্জিন নীতির কারণে গাড়ি আমদানির জন্য এলসি খুলতে ব্যবসায়ীদের মূল্যের পুরোটাই পরিশোধ করতে হচ্ছে। তার মধ্যে টাকার অবমূল্যায়নের কারণে ডলারের দাম বেড়েছে। তাছাড়া বাড়ানো হয়েছে শুল্ক-কর। ফলে গাড়ির দামও বেড়েছে। আবার গত বছরের ৩ জুলাইয়ের পর থেকে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো গাড়ি কেনা বন্ধ রেখেছে। তারপরও বিআরটিএ গত বছর ১৬ হাজার ৬৯৫ ইউনিট গাড়ি (প্রাইভেট কার) নিবন্ধন দিয়েছে, যা ২০২১ সালের তুলনায় ২১ শতাংশ বেশি।
সূত্র জানায়, সরকারের নিয়ন্ত্রণমূলক পদক্ষেপের কারণে ব্যক্তিগত গাড়ি বিক্রি প্রবৃদ্ধি কাক্সিক্ষত মাত্রায় হয়নি। কারণ দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বিবেচনায় ব্যক্তিগত গাড়ি বিক্রিতে আরো বেশি প্রবৃদ্ধি হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। গাড়ি আমদানিতে দুই মাস ধরে কোনো এলসি খোলা হচ্ছে না। ওই সময়ে দেশে অন্তত ৫ হাজার গাড়ি আমদানি হওয়ার কথা ছিল। আবার বৈদেশিক মুদ্রার সংকটের কারণেও গাড়ি সাপ্লাই চেইন ভঙ্গুর অবস্থায় আছে। ডলারের কারণে গাড়ির দাম বেড়ে যাচ্ছে, ট্যাক্স বেড়ে যাচ্ছে। তাতে সমাজের উচ্চবিত্ত শ্রেণীর মানুষের কাছে গাড়ি কেনাটা সহজলভ্য হলেও মূল ভোক্তা মধ্যবিত্ত শ্রেণীর সক্ষমতা কমে যাচ্ছে। যা পুরো খাতটির জন্য হুমকি হয়ে উঠছে।
সূত্র আরো জানায়, দেশে গাড়ির বাজার বিগত ২০২২ সালে সামগ্রিকভাবে তুলনামূলক ভালো ছিল। আর অর্থনৈতিক সংকট না থাকলে গাড়ির বাজারে আরো বেশি প্রবৃদ্ধি হতো। বিআরটিএ শ্রেণীভেদে ২০ ধরনের গাড়ি নিবন্ধন দিয়ে থাকে। ২০২২ সালে বিআরটিএ যতো গাড়ি নিবন্ধন দিয়েছে তার ৮৮ শতাংশই ছিল মোটরসাইকেল। নিবন্ধিত মোটরসাইকেলের পরিমাণ ৫ লাখ ৬ হাজার ৯১২ ইউনিট। গত বছরের তুলনায় নিবন্ধনে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩৫ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ। যদিও বাংলাদেশে ভোক্তা পর্যায়ে বিক্রি হওয়া মোটরসাইকেলের একটি উল্লেখযোগ্য অংশই অনিবন্ধিত থেকে যায়। অনিবন্ধিত মোটরসাইকেলের সংখ্যা হিসাবে আনলে ২০২২ সালে বিক্রি হওয়া মোটরসাইকেলের সংখ্যা ৬ লাখ ইউনিট ছাড়িয়ে যাওয়ার কথা। গত বছর দেশে মোটরসাইকেলের বাজারে প্রায় ৩০ শতাংশ প্রবৃিিদ্ধ হলেও কিছু সরকারি বিধিনিষেধ এবং সিদ্ধান্ত বাজারের স্বাভাবিক প্রবৃদ্ধিকে বাধাগ্রস্ত করেছে। বিগত ২০২২ সালে অন্যান্য মোটরযানের মধ্যে ৭ হাজার ৬০৬টি অটোরিকশা, ২ হাজার ৬৮৮টি বাস, ৪ হাজার ৪২৪টি কাভার্ড ভ্যান, ৯ হাজার ৮০৪টি পিকআপ, ১ হাজার ৬০২টি ট্রাক্টর, ৪ হাজার ৫২৮টি ট্রাক বিআরটিএ থেকে নিবন্ধিত হয়েছে। তার মধ্যে ট্রাক নিবন্ধনের পরিমাণ ২০২১ সালের তুলনায় ২১ দশমিক ৭৮ শতাংশ কমেছে। পিকআপেরও১০ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ নিবন্ধন কমেছে। বিপরীতে বাসের নিবন্ধন বেড়েছে ৭৭ দশমিক ১৯ শতাংশ। গত বছর প্রতি মাসে গড়ে ৩৭৭টি ট্রাক, ২২৪টি বাস, ৮১৭টি পিকআপ ও ৪২ হাজার ২৪৩টি মোটরসাইকেল বিক্রি হয়েছে।
এদিকে গাড়ি বিক্রি বিষয়ে মোটরসাইকেল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি ও রানার গ্রুপের চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান খান জানান, গত বছর মোটরসাইকেলের বাজার খারাপ ছিল না। কিন্তু কিছুকিছু সিদ্ধান্ত মোটরসাইকেলের বাজারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া মোটরসাইকেল বিক্রি করা যাবে না, এক জেলার মোটরসাইকেল অন্য জেলায় চলতে পারবে না এমন বেশকিছু নিষেধাজ্ঞা বিভিন্ন সময়ে দিয়েছে সরকার। আর ওসব নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়ন হোক আর না হোক তা বাজারকে প্রভাবিত করেছে। পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে মোটরসাইকেল চলতে না দেয়ার সিদ্ধান্তও বাজারে প্রভাব ফেলেছে। বিক্রির স্বাভাবিক প্রবৃদ্ধিকে বাধাগ্রস্ত করছে। ওসব বিধিনিষেধের কারণে ভবিষ্যতে বাংলাদেশ থেকে মোটরসাইকেল রপ্তানির সম্ভাবনাও সংকুচিত হয়ে আসছে।
অন্যদিকে এ বিষয়ে বাংলাদেশ রিকন্ডিশন্ড ভেহিকলস ইম্পোর্টার্স অ্যান্ড ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বারভিডা) সাবেক সভাপতি আবদুল হক জানান, ২০২২ সালে দেশে ১৬ হাজার ৬৯৫ ইউনিট গাড়ি নিবন্ধন হয়েছে। বাংলাদেশ যেভাবে অর্থনৈতিক উন্নতি করছে, তাতে দেশের ১০ শতাংশ মানুষের কাছে গাড়ি (প্রাইভেট কার) থাকা উচিত ছিল। কিন্তু এখন দেশের ১ শতাংশ মানুষও গাড়ি ব্যবহার করে না। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখলে গত বছর দেশে ব্যক্তিগত গাড়ি বিক্রি ও নিবন্ধন আরো বেশি হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু অর্থনৈতিক সংকটের কারণে হয়তো এটা সম্ভব হয়নি।