অনলাইন ডেস্ক :
জেসন রয় যদি এবারের আইপিএলে খেলতেন, ফিল সল্টকে হয়তো দর্শক হয়েই থাকতে হতো। নিয়তির পালায় এখন রয়ই দর্শক। তার বদলি হিসেবে সুযোগ পেয়ে সল্ট রাঙাচ্ছেন আইপিএল। ব্যাট হাতে ঝড় তুলছেন নিয়মিত। ম্যাচের পর ম্যাচে তা-ব চালাচ্ছেন পাওয়ার প্লেতে। ইংলিশ এই ব্যাটসম্যান বোলারদের জন্য হয়ে উঠেছেন আতঙ্ক আর কলকাতার জন্য আশীর্বাদ। আশীর্বাদ তো বটেই, কলকাতা নাইট রাইডার্সের জন্য তিনি হয়ে উঠেছেন আসলে আরও বেশি কিছু। গতবারের দল থেকে তারা ধরে রেখেছিল জেসন রয়কে। কিন্তু টুর্নামেন্ট শুরুর মাস দেড়েক আগে ব্যক্তিগত কারণে সরে দাঁড়ান এই ইংলিশ ব্যাটসম্যান। কলকাতা তখন বিপদে। হন্যে হয়ে একজন বিকল্প খুঁজছিল তারা। নজর পড়ে তাদের রয়ের দেশের সল্টের ওপর। গত আইপিএলে দিল্লি ক্যাপিটালসে ছিলেন সল্ট।
বিশ্বের শীর্ষ ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট লিগে প্রথমবারের অভিযানে ৯টি ম্যাচ তিনি খেলতে পেরেছিলেন। খুব খারাপ করেননি, আবার দারুণ কিছুও ছিল না তার পারফরম্যান্স। দুটি ফিফটিতে রান করেছিলেন ২১৮। স্ট্রাইক রেট অবশ্য ছিল নজর কাড়ার মতোই, ১৬৩.৯০। তার দলের হয়ে টুর্নামেন্টে যা ছিল সর্বোচ্চ। তবে দিল্লি তাকে ধরে রাখেনি। নতুন দল পাওয়ার আশায় গত নিলামে ভিত্তিমূল্য আগের ২ কোটি থেকে কমিয়ে এবার দেড় কোটি রুপিতে আনেন তিনি। নিলামের ঠিক আগের সপ্তাহেই ইংল্যান্ডের হয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে টানা দুই ম্যাচে উপহার দেন বিধ্বংসী দুটি সেঞ্চুরি। তবু লাভ হয়নি। কোনো দল তাকে নিলাম থেকে নেয়নি। দল না পেয়ে নিলামের পর বিস্ময় প্রকাশ করেছিলেন তিনি নিজেও।
পরে গত মাসে রয়ের বদলি হিসেবে কলকাতা যে সল্টকে বেছে নিল, এতে মূল কারণ ছিল তার ব্যাটিংয়ের ধরন। তার স্ট্রাইক রেট। কলকাতার হয়ে এবার তিনি খেলে চলেছেন সেই প্রত্যাশা মিটিয়েই। মৌসুমে দলের প্রথম ম্যাচেই ৪০ বলে ৫৪ রানের ইনিংস খেলেন। আত্মবিশ্বাসটাও পেয়ে যান। সেই ম্যাচেই তার স্ট্রাইট রেট ছিল সবচেয়ে কম। পরের আট ম্যাচের ছয়টিতেই দশের বেশি রান করেছেন, সবকটিতেই তার স্ট্রাইক রেট ছিল আরও বেশি। ৪৭ বলে অপরাজিত ৮৯, ১৪ বলে ৪৮, ৩৭ বলে ৭৫, ৩৩ বলে ৬৮- এমন দুর্দান্ত সব ইনিংস তিনি উপহার দিয়ে চলেছেন। ৯ ইনিংসে ৪৯ গড়ে ৩৯২ রান করে এখনও পর্যন্ত আসরের পঞ্চম সর্বোচ্চ রান তার। স্ট্রাইক রেট ১৮০.৬৪। শীর্ষ সাত রান স্কোরারের মধ্যে তার ধারেকাছে নেই আর কারও স্ট্রাইক রেট। পাশাপাশি কিপিংও করছেন তিনি, দলের ভারসাম্যে রাখছেন বড় ভূমিকা।
তবে মারকুটে ব্যাটিংই তার আসল পরিচয়। ইনিংসের প্রথম বল থেকেই আক্রমণই তার কাছে শেষ কথা। পাওয়ার প্লেতে তার মারকাটারি ব্যাটিং আর সুনিল নারাইনের সঙ্গে বিস্ফোরক জুটি এবারের আসরে কলকাতার এখনও পর্যন্ত সাফল্যের বড় কারণ। দিল্লি ক্যাপিটালসের বিপক্ষে সোমবারের ম্যাচেই যেমন, কলকাতার লক্ষ্য ছিল কেবল ১৫৪। এবারের আইপিএলে এটিকে বলা যায় ‘ছোট স্কোর।’ সেই রান তাড়ার কাজটি আরও অনায়াস হয়ে ওঠে সল্টের ব্যাটে। পাওয়ার প্লেরে ৬ ওভারেই ৭৯ রান তুলে ফেলে তারা। সল্টের রান তখন ৬০। ম্যাচে এরপর আর বাকি থাকে কী! ম্যাচের পর নিজের ব্যাটিং দর্শন নিয়ে সল্ট বলছেন, সময় আর সংস্করণের দাবি মিটিয়েই প্রথম বল থেকে আগ্রাসনের পথে ছোটেন তিনি। “কখনও কখনও এটা প্রবল ঝুঁকিপূর্ণ বটে, তবে এতে সবকিছু নিজের পক্ষে আনা সহজ হয় এবং যে ঝুকিটা নিতে চাই না, তা এড়ানো যায়।
প্রতিটি ওপেনিং ব্যাটারই এখন এই ভারসাম্য বের করার চেষ্টা করছে। এতে মাঝেমধ্যে টানা কয়েক ইনিংস ব্যর্থতা আসতে পারে, কিন্তু নিজের ওপর ভরসা রেখে যেতে হয় এবং সঠিক বিকল্প বেছে নিতে হয়।” সল্টের ব্যাটিং যেমন, তেমনি সুনিল নারাইনের সঙ্গে তার জুটিও এবারের আইপিএলের সবচেয়ে আলোচিত অধ্যায়গুলোর একটি। নারাইন নিজে করেছেন ১৮২.৩৫ স্ট্রাইক রেটে ৩৭২ রান। নিয়মিতই দলকে বিস্ফোরক শুরু এনে দিচ্ছেন এই দুজন। ৯ ইনিংসের পাঁচটিতেই অর্ধশত রানের জুটি গড়েছেন তারা। উদ্বোধনী জুটিতে রান তুলেছেন মোট ৪৮৫, সব দল মিলিয়ে যা আসরের সর্বোচ্চ।
তাদের জুটিতে ওভারপ্রতি রান এসেছে ১২.৪৩ করে! সল্ট জানালেন, মাঠের ভেতরে-বাইরে দুজনের দারুণ রসায়ন ও নারাইনের অভিজ্ঞতা বড় ভূমিকা রাখছে জুটির সাফল্যে। “এই টুর্নামেন্টে আমরা পরস্পর দারুণভাবে মিলে গেছি। আমাদের একজন যদি শুরুতে ছন্দ পেয়ে যায়, আরেকজন তখন তাকে স্ট্রাইক দেয়। আমি ছুটতে থাকলে সে স্ট্রাইক দেয়, তার ক্ষেত্রে দেই আমি। এটা দারুণ যে, এ ক্ষেত্রে আমরা একই মনোভাবের।” “মাঠের বাইরে আমরা হাসাহাসিই বেশি করি। মাঠে ততটা নয়। ম্যাচের আগের দিনই সাধারণত কথা যা হয়। সুনিল সবকিছু খুব সাধারণ রাখতে পছন্দ করে। তবে খেলাটা নিয়ে গভীর চিন্তা করে সে। সবটুকু অভিজ্ঞতাকে সঙ্গী করে এগিয়ে যেতে চায় সে। আমরা এমনিতে ভালো সময়ই কাটাই। তার অভিজ্ঞতা আমাদের জুটিতে খুব কাজে লাগে।”
আরও পড়ুন
কানপুর টেস্টে মুমিনুলের সেঞ্চুরি, বাংলাদেশের সংগ্রহ ২৩৩ রান
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরার বিয়য়ে যা বললেন তামিম
অক্টোবরে বাংলাদেশে সফরে আসছে দক্ষিণ আফ্রিকা