July 27, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Sunday, April 2nd, 2023, 8:15 pm

ভারতীয় অলরাউন্ডার সেলিম দুরানি আর নেই

অনলাইন ডেস্ক :

‘ইম্প্যাক্ট’ ক্রিকেটারের যে ধারণা এখন ক্রিকেট বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয়, সেলিম দুরানি সেই কার্যকারিতা দেখিয়েছেন ষাট-সত্তরের দশকেই। মাঠের ভেতরে-বাইরে বর্ণময় এক চরিত্র ছিলেন তিনি, ছিলেন সময়ের চেয়ে এগিয়ে থাকা কার্যকর এক ক্রিকেটার। জীবনের ইনিংসে তার সময় এবার ফুরিয়ে গেল। ৮৮ বছর বয়সে পরপারে পাড়ি জমালেন সাবেক এই ভারতীয় অলরাউন্ডার। গুজরাটের জামনগরে ছোট ভাই জাহাঙ্গির দুরানির সঙ্গে বসবাস করছিলেন তিনি। গত জানুয়ারিতে পড়ে গিয়ে উর্বস্থির হাড় ভেঙে যাওয়ার পর অস্ত্রোপচার করাতে হয়েছিল তার। ১৯৩৪ সালের ১১ সেপ্টেম্বর সেলিম দুরানির জন্ম কাবুলে। আফগানিস্তানে জন্ম নেওয়া একমাত্র ভারতীয় ক্রিকেটার হিসেবে ইতিহাসে আলাদা একটা পরিচিতি তার সবসময়ই ছিল। তবে শুধু জন্ম-পরিচয়ে নয়, ভারতীয় ক্রিকেটে আলাদা জায়গা নিয়ে আছেন তিনি ২২ গজের পারফরম্যান্সেই। ১৯৬০ থেকে ১৯৭৩ পর্যন্ত ২৯ টেস্ট খেলেছেন বাঁহাতি এই অলরাউন্ডার। এক সেঞ্চুরি ও সাত ফিফটিতে ২৫.০৪ গড়ে রান এক হাজার ২০২, বাঁহাতি স্পিনে উইকেট ৭৫টি। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে সাড়ে ৮ হাজার রানের সঙ্গে আছে ৪৮৪ উইকেট। তবে পরিসংখ্যান দিয়ে তাকে বিবেচনা করা যাবে না মোটেও। খেলার ধরন ও কার্যকারিতায় তার জুড়ি ছিল না। সেই সময়ের তুলনায় অনেক আগ্রাসী এক ব্যাটসম্যান ছিলেন তিনি। নিজের দিনে সেরা সব বোলারদের ওপর বইয়ে দিতেন ঝড়। বল হাতে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ছিল উইকেট শিকারের প্রবণতা। ব্যাট হাতে গতিময় কোনো ইনিংস কিংবা বোলিংয়ে এক স্পেলেই খেলার মোড় ঘুরিয়ে দেওয়ার দারুণ উপযোগিতা ছিল তার। সব মিলিয়ে ছিলেন আনন্দদায়ী এক ক্রিকেটার, ছিলেন দারুণ দর্শকপ্রিয়। ভারতীয় ক্রিকেটের দারুণ কিছু জয়ের সঙ্গে মিশে আছেন তিনি। ১৯৬১-৬২ মৌসুমে টেড ডেক্সটারের ইংল্যান্ড দলের বিপক্ষে কলকাতায় নিয়েছিলেন ৮ উইকেট, পরের টেস্টে চেন্নাইয়ে ১০ উইকেট। ভারতের সিরিজ জয়ে ২৩ উইকেট নিয়ে তিনিই ছিলেন নায়ক। সেটি ছিল তার ক্যারিয়ারের মাত্র দ্বিতীয় সিরিজ। ওয়েস্ট ইন্ডিজে ভারতের প্রথম টেস্ট জয়েও তার ছিল বড় অবদান। ১৯৭১ সালের সেই ত্রিনিদাদ টেস্টে দলের দারুণ প্রয়োজনের সময় কয়েক বলের ব্যবধানে তিনি আউট করে দেন ক্লাইভ লয়েড ও ক্যারিবিয়ান অধিনায়ক গ্যারি সোবার্সকে। ১৭ ওভার বোলিংয়ে সেবার মাত্র ২১ রান দিয়েছিলেন তিনি। সেই টেস্টেই অভিষেকে দুই ইনিংসে ফিফটি করে কিংবদন্তি হয়ে ওঠার পথে যাত্রা শুরু সুনিল গাভাস্কারের। জীবনের শেষ সিরিজেও তিন টেস্টে দুটি ফিফটি ছিল দুরানির। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সেই সিরিজে কলকাতায় করেন ফিফটি, পরের টেস্টে চেন্নাইয়ে দুই ইনিংসে করেন ৩৮ ও ৩৮। কিন্তু বিতর্কিতভাবে পরের টেস্টে তাকে বাদ দেওয়া হয়। কানপুরের গ্যালারিতে তখন প্ল্যাকার্ড ছিল, ‘নো নুরানি, নো টেস্ট।’ পঞ্চম টেস্টেই একাদশে ফিরে খেলেন ৭৩ ও ৩৭ রানের ইনিংস। মুম্বাইয়ে সেই টেস্টই হয়ে থাকে তার শেষ। খেলার ধরন ছাড়াও দারুণ সুদর্শন ও আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্বের কারণে প্রবল জনপ্রিয়তা ছিল দুরানির। চলচ্চিত্র তারকাদের সঙ্গেও তার তুলনা হতো নিত্য। ১৯৭৩ সালে বলিউডের একটি সিনেমাতেও তিনি অভিনয় করেন, যেখানে তার বিপরীতে ছিলেন সেই সময়ের গ্ল্যামারাস অভিনেত্রী পারভিন ববি। ভারতের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ক্রীড়া পুরস্কার অর্জুনা অ্যাওয়ার্ড জয়ী প্রথম ক্রিকেটার ছিলেন তিনি। ২০১১ সালে তাকে লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড দেয় বিসিসিআই।