এপি, নয়াদিল্লি :
ভারতের দক্ষিণাঞ্চলে একাধিক ভূমিধসে অন্তত ৯৩ জন নিহত হয়েছে। এ ঘটনায় ধ্বংসস্তূপের নিচে আরও বহু মানুষ আটকা পড়েছেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) ভোরে কেরালার ওয়ানাড় জেলার পার্বত্য এলাকায় এসব ভূমিধসে ঘরবাড়ি ধসে পড়েছে, গাছ উপড়ে গেছে এবং সেতু ধ্বংস হয়েছে।
উদ্ধারকারীরা কাদা ও ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে পড়াদের উদ্ধারের চেষ্টা করছে, কিন্তু রাস্তাঘাট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এবং ভঙ্গুর মাটির কারণে তাদের প্রচেষ্টা ব্যাহত হচ্ছে।
কর্তৃপক্ষ এখনও এই বিপর্যয়ের সম্পূর্ণ ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করতে পারেনি।
কেরালার মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন বলেছেন, ভূমিধসে অন্তত ৯৩ জন নিহত হয়েছেন এবং শতাধিক মানুষ আহত হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এছাড়া তিন হাজারেরও বেশি মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
ধ্বংসস্তূপের নিচে কতজন আটকে রয়েছেন তা স্পষ্ট করে বলতে পারেননি মুখ্যমন্ত্রী।
এদিকে, স্থানীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, হতাহতদের বেশিরভাগই চা বাগানের শ্রমিক।
টেলিভিশনের ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, উদ্ধারকর্মীরা কাদা ও উপড়ে পড়া গাছের মধ্য দিয়ে পথ বের করে আটকে পড়াদের কাছে পৌঁছে তাদের নিরাপদে সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন। এসময় রাস্তা থেকে ভাসিয়ে নেওয়া যানবাহনগুলিকে ফুলে ওঠা নদীতে আটকে থাকতে দেখা গেছে। স্থানীয় টিভি নিউজ চ্যানেলগুলোও সাহায্য চেয়ে আটকে পড়া লোকজনের ফোন কল প্রচার করেছে।
হেলিকপ্টারের মাধ্যমে আটকে পড়াদের উদ্ধারের চেষ্টা করছে কর্তৃপক্ষ। এছাড়া একটি অস্থায়ী সেতু নির্মাণের জন্য ভারতীয় সেনাবাহিনীকে নিযুক্ত করা হয়েছে।
রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী বীণা জর্জ বলেন, ‘আটকে পড়াদের উদ্ধারের জন্য আমরা সব ধরনের চেষ্টা করছি।’
এদিকে, একটি এক্স পোস্টে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ‘পশ্চিমঘাট পর্বতমালার অংশ’ পার্বত্য জেলা ওয়ানাড়েতে ভূমিধসে হতাহতের ঘটনায় ‘মর্মাহত’ বলে জানিয়েছেন।
মোদি লিখেছেন, ‘যারা তাদের প্রিয়জনকে হারিয়েছেন, তাদের প্রতি আমার সমবেদনা এবং আহতদের জন্য প্রার্থনা করছি।’
একইসঙ্গে নিহতদের পরিবারকে দুই লাখ রুপি করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।
টানা বৃষ্টিপাতের কারণে ইতোমধ্যে কেরালায় সতর্কতা জারি করেছে ভারতের আবহাওয়া বিভাগ।
বৃষ্টিপাতের কারণে রাজ্যজুড়ে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। মঙ্গলবার কিছু কিছু জায়গায় স্কুল বন্ধ করে দিয়েছে প্রশাসন। এদিন দিনভর আরও বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে স্থানীয় আবহাওয়া অধিদপ্তর।
ভারতীয় আবহাওয়া বিভাগ জানিয়েছে, রাজ্যের উত্তর ও মধ্য অঞ্চলে ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ওয়ানাড়ে জেলায় ২৮ সেন্টিমিটার (১১ ইঞ্চি) বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
বরাবরই ভারী বৃষ্টিপাত, বন্যা ও ভূমিধসের প্রবণতা লক্ষ করা যায় ভারতের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্য কেরালায়। ২০১৮ সালে ভয়াবহ বন্যায় এ রাজ্যে প্রায় ৫০০ জনের মৃত্যু হয়েছিল।
বর্ষা মৌসুমে ভারতে নিয়মিতভাবে তীব্র বন্যা হয়, যা জুন থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে চলে। দক্ষিণ এশিয়ার বার্ষিক বৃষ্টিপাতের বেশিরভাগ অংশ ভারতেই হয়ে থাকে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তন ও বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে ভারতজুড়ে বর্ষা আরও অনিয়মিত হয়ে উঠেছে।
আরও পড়ুন
রাজধানীতে ঈদে মিলাদুন্নবী (স) উপলক্ষে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা ও সমাবেশ
১ জুলাই-১৫ আগস্ট পর্যন্ত মানবাধিকার লঙ্ঘনের তথ্য জমা দেওয়ার আহ্বান জাতিসংঘের ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং দলের
সাবেক সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর গ্রেপ্তার