October 8, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Friday, August 5th, 2022, 8:37 pm

ভেনামি চিংড়ির পাইলট প্রকল্প বাণিজ্যিক ভিত্তিতে উৎপাদনের সম্ভাবনা

‘বিশ্ববাজার ধরতে বাগদার পাশে ভেনামি চাই, ভেনামির সমৃদ্ধি রপ্তানির প্রবৃদ্ধি’-স্লোগানকে সামনে রেখে সম্ভাবনাময় চিংড়ি শিল্পকে আন্তর্জাতিক বাজারে টিকিয়ে রাখতে বাগদার বিকল্প হিসেবে স্বপ্ন দেখাচ্ছে ভেনামির পাইলট প্রকল্প।

মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন মৎস্য অধিদপ্তরের অনুমোদন সাপেক্ষে বাংলাদেশে পরীক্ষামূলকভাবে ভেনামি চিংড়ি চাষের সম্ভাব্যতা যাচাই এবং চাষ প্রবর্তনে দ্বিতীয় বারের মত খুলনার পাইকগাছার লোনা পানি গবেষণা কেন্দ্রের ৬টি পুকুরে পরীক্ষামূলকভাবে চাষ করা হয়েছে ভেনামি চিংড়ির।

প্রকল্পের ধারাবাহিক সফলতা ফুটে উঠেছে শুক্রবার ভেনামি চিংড়ি আহরণ-২২’এ। সফলতায় রীতিমত তৃপ্তির ঢেকুর তুলছেন, মৎস্য অধিদপ্তরের পাশাপাশি ভেনামির সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা।

আহরণ কর্মসূচীর উদ্ভোধন করেন-মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মুহাম্মদ ইয়ামিন চৌধুরী, মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খন্দকার মাহাবুবুল হক, বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট বি.এফ.আর.আই’র মহাপরিচালক ইয়াহিয়া মাহমুদ।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন খুলনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জয়দেব পাল, পাইকগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মমতাজ বেগম, বিএফএফইএ’র মি. হুমায়ূন কবির, পাইকগাছা লোনা পানি কেন্দ্রের ইনচার্জ ও মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড.লতিফুল ইসলাম, উপজেলা সিরিয়র মৎস্য কর্মকর্তা, এমইউসি ফুডস্’র কর্মকর্তাসহ অন্যান্যরা।

জেলা মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এর আগে পোনা অবমুক্তির মাধ্যমে শুরু পাইলট প্রকল্পের পুকুর সমূহে নমুনয়ন ও পরিদর্শনেও ফুটে ওঠে ধারাবাহিক সফলতার চিত্র।

প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, খুলনার পাইকগাছা লোনা পানি কেন্দ্র বি.এফ.আর.আই’র ৬টি পুকুরে দুই দশমিক আট হেক্টর বা ছয় দশমিক ৯ একরের দুই দশমিক চার হেক্টর আয়তনের পুকুর সমূহে গড়ে তোলা হয়েছে এ পাইলট প্রকল্প। যেখানে পিএল মজুদ থেকে এক বছর পর্যন্ত প্রকল্পের স্থায়ীকাল ধরা হয়েছে।

সূত্র আরও জানায়, বহুবিধ সংকট ও প্রতিবন্ধকতায় আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশ হিমায়িত চিংড়ি রপ্তানি ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে। কারণ অনুসন্ধানে দেখা গেছে বিশ্ব বাজারে বর্তমানে প্রায় ৭২ শতাংশ ভেনামি চিংড়ির দখলে। বাকি ২৮ শতাংশ নিয়ে অন্যান্যদের সাথে আমাদের প্রতিযোগিতা করতে হয়। বাংলাদেশে ভেনামির বাণিজ্যিক চাষ শুরু না হলেও কেবল পরীক্ষামূলক শুরু হয়েছে। বাগদা ও গলদার উৎপাদন খরচ ভেনামির তুলনায় অনেক বেশি। ফলে কম মূল্যের ভেনামির সাথে আমাদের প্রতি মুহূর্তে প্রতিযোগিতা করতে হয়। এছাড়া ভেনামি চিংড়ির মূল্যেই লোকসান দিয়ে রপ্তানি করতে হয় বাগদা ও গলদা। দেশীয় প্রজাতির বাগদা ও গলদার উৎপাদন ক্রমশ নিম্নমুখী হওয়ায় রপ্তানির পরিমাণও নিম্নমুখী। চিংড়ি রপ্তানি শিল্পের প্রধান সমস্যা হলো কাঁচামালের স্বল্পতা। বর্তমান সেমি. ইনটেনসিভ পদ্ধতিতে বাগদা চিংড়ির উৎপাদন একর প্রতি সর্বোচ্চ এক হাজার ৫০০ কেজি। অথচ ভেনামির উৎপাদন একর প্রতি সর্বনিম্ন পাঁচ কেজি। সুতরাং ভেনামির বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হলে আগামী পাঁচ বছরে বাংলাদেশের চিংড়ি উৎপাদন প্রায় পাঁচ গুণ বেশি হবে।

তাছাড়া বিশ্বে প্রতিমুহূর্তে ভেনামির উৎপাদন, চাহিদা ও জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পাচ্ছে। শুধুমাত্র এশিয়াতে ২০১৯ সালে ভেনামি উৎপাদিত হয় ৩১ লাখ ১২ হাজার ১৭০ কেজি; যার মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান শূন্য।

অন্যদিকে, বাংলাদেশের চিংড়ি উৎপাদনের তুলনায় প্রক্রিয়াজাতকৃত রপ্তানিকারক কারখানার সংখ্যা বেশি। ফলে এ খাতের কারখানাসমূহ তাদের সক্ষমতার ১২-১৫ শতাংশের বেশি কখনো ব্যবহার করতে পারেনি। কারখানাগুলোর কাঁচামালের সংকট উত্তরণের লক্ষ্যে দেশীয় বাগদার পাশাপাশি অধিক উৎপাদনশীল ভেনামি প্রজাতির চিংড়ি চাষের বিকল্প নেই।

সূত্র জানায়, দেশের রপ্তানির স্বার্থে বিএফএফইএ-এর সদস্যভূক্ত প্রতিষ্ঠান এম.ইউ.সি ফুডস লি. যশোর ২০-২১ অর্থবছরে বিএফআরআই’র লোনা পানি কেন্দ্র পাইকগাছায় বাংলাদেশের সর্বপ্রথম পাইলট প্রকল্প নিয়ে এগিয়ে আসে। তারা পাইকগাছা লোনা পানি কেন্দ্রের নির্বাচিত পুকুরে ৩১ মার্চ ২১’ ভেনামির পোনা অবমুক্ত ও ১ জুলাই ২১’ আহরণ (হারভেস্ট) করা হয়। সেখানে প্রতি হেক্টরে উৎপাদন হয়, আট হাজার ৬২০ কেজি। মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে যা খুবই সন্তোষজনক। এরপর সর্বশেষ ৫ আগস্ট ২২’ আহরণ (হারভেস্ট) হয়েছে। এবারে গতবারের তুলনায় উৎপাদন বেশি হবে বলেও আশা করা হচ্ছে।

মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, রপ্তানিকারকদের দাবির মুখে সরকারের মৎস্য অধিদপ্তর সর্বপ্রথম থাইল্যান্ড থেকে ভেনামি প্রজাতির চিংড়ির পোনা আমদানি করে খুলনাঞ্চলের আটটি প্রতিষ্ঠানকে পরীক্ষামূলক চাষের অনুমতি দেয়। প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে-এমইউসি ফুডস, ফাহিম সি ফুডস, গ্রোটেক অ্যাকোয়াকালচার লিমিটেড, রেডিয়েন্ট শ্রিম্প কালচার, আইয়ান শ্রিম্প কালচার, ইএফজি অ্যাকোয়া ফার্মিং, জেবিএস ফুড প্রডাক্টস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ও প্রান্তি অ্যাকোয়া কালচার লিমিটেড। এছাড়াও অনুমতির অপেক্ষায় রয়েছে সাতক্ষীরার দেবহাটার আলহেরা মৎস্য প্রকল্প, খুলনার রূপসার ফ্রেস ফুডস লিমিটেড, জেমিনি সি ফুডস লিমিটেড এবং সাতক্ষীরার কালীগঞ্জের নলতা আহসানিয়া ফিস লিমিটেড। তাদের অবকাঠামো সংস্কার হলে দ্রুত তাদেরকেও ভেনামি চিংড়ি চাষের অনুমতি দেয়া হবে বলে জানানো হয়। এছাড়াও কক্সবাজারের আরও চারটি প্রতিষ্ঠানকে ভেনামি চিংড়ি চাষের অনুমতি দেয়া হয়েছে। তারাও খুব শিগগিরই ভেনামির আবাদ শুরু করবে বলে বিএফএফইএ সূত্র জানায়।

এর আগে ফ্রোজেন ফুডস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন দীর্ঘদিন ধরে সরকারের সঙ্গে আলোচনার পর গত ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে উচ্চ ফলনশীল ভেনামি জাতের চিংড়ির পরীক্ষামূলক চাষের অনুমতি দেয়া হয় কক্সবাজারের অ্যাগ্রি বিজনেস এবং সাতক্ষীরার এনজিও সুশীলনকে। ইতোমধ্যে কক্সবাজারের অ্যাগ্রি বিজনেস ব্যর্থ হলেও সুশীলন প্রকল্প বাস্তবায়নে সফলতা দেখায়।

—-ইউএনবি