November 9, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Monday, July 25th, 2022, 8:32 pm

মধ্যপ্রাচ্যে বাইডেন-পুতিন: এগিয়ে কে?

অনলাইন ডেস্ক :

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ছয় মাসে গড়িয়েছে। এখন পর্যন্ত এই যুদ্ধ থামার কোনো লক্ষণ নেই। বিশ্বের সর্বত্রই এ যুদ্ধের প্রভাব ছড়িয়ে পড়লেও আরব বিশ্ব এখনো চুপ রয়েছে। রোববার ইউক্রেন ইস্যুতে আরব বিশ্বের সমর্থন চেয়েছে রাশিয়া। মিসরের কায়রোয় আরব লিগের বিশেষ অধিবেশনে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ এ সমর্থন চেয়েছেন। ইউক্রেন যুদ্ধকে ঘিরে এখন মধ্যপ্রাচ্যে বড়সড় ক‚টনৈতিক দৌড়ঝাঁপ চলছে। স¤প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন দুজনই অঞ্চলটিতে ঢু মেরেছেন। প্রথমে বাইডেন সৌদি আরব, ইসরাইল ও অধিকৃত ফিলিস্তিন সফর করেন। এর কয়েক দিন পর গত সপ্তাহে পুতিন ইরান সফর করেন। ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরুর পর রাশিয়াকে শুরু থেকেই কোণঠাসা করতে ব্যস্ত যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্ব। তাদের সেই চেষ্টা ব্যর্থ করতে মরিয়া রাশিয়া। রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী এক দেশ থেকে আরেক দেশ ছুটে বেড়াচ্ছেন। মিসরের পর আফ্রিকার কয়েকটি দেশেও তার সফরের পরিকল্পনা রয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, রাশিয়া ইরান, চীন ও তুরস্কের মতো দেশের সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্ক তৈরি করছে। যাতে রাশিয়া প্রমাণ করতে পারে, পশ্চিমারা যে তাকে ‘একঘরে’ করতে চেয়েছে, তা করা যায়নি। তেহরানে গত ১৯ জুলাই রাশিয়া, তুরস্ক ও ইরানের শীর্ষ নেতারা ২০১৯ সালের পর প্রথমবারের মতো একত্র হয়েছিল। বৈঠকে পুতিন, তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান ও ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি আলোচিত সব বিষয়ে একমত হন। বৈঠকে সিরিয়ার বিষয়ে মতপার্থক্য দূর করা ও ইউক্রেন যুদ্ধ-সংশ্লিষ্ট বিষয় স্থান পায়। অন্যদিকে জো বাইডেনের মধ্যপ্রাচ্য সফরের বৈঠকে জর্ডান, মিসর ও ইরাকের প্রধানরাও অংশ নেন। স¤প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান দাবি করেন, ইউক্রেন যুদ্ধে ব্যবহারের জন্য ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন কেনার চেষ্টা করছে রাশিয়া। সুলিভানের দাবির প্রতিক্রিয়ায় ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির আবদুল্লাহিয়ান বলেছেন, যদিও রাশিয়ার সঙ্গে প্রতিরক্ষাসহ নানা ক্ষেত্রে ইরান সহযোগিতার সম্পর্ক বজায় রেখেছে, কিন্তু আমরা ইউক্রেন সংঘাতে কোনো পক্ষকেই সহযোগিতা করব না। রাশিয়া, ইউক্রেন ও বেলারুশের পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক বিশ্লেষক নিকোলাই মিকোভিচের মতে, ইরান মস্কোকে (রাশিয়া) সাহায্য করতে ভয় পাচ্ছে। কারণ, ইউক্রেন যুদ্ধে ব্যবহার করা হবে এমন কোনো সামরিক সহায়তা দিলে পশ্চিমাদের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক আরও তিক্ত হবে। সে কারণে ‘একঘরে’ একটি দেশের সঙ্গে ড্রোন বাণিজ্যে যেতে চাইবে না তেহরান (ইরান)। তবে ইরান-রাশিয়ার সম্পর্কের কিছুটা উন্নয়ন ঘটেছে। রুশ জ¦ালানি সংস্থা গ্যাজপ্রম ইরানের রাষ্ট্রীয় তেল কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করেছে। আমেরিকার অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার শিকার দুটো দেশই (ইরান-রাশিয়া) এখন নিজস্ব মুদ্রা রিয়াল ও রুবলে বাণিজ্যিক লেনদেন শুরু করেছে। এর ফলে দেশ দুটির মার্কিন নিষেধাজ্ঞার চাপ কমবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা। দ্য গার্ডিয়ানের এক সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে, মস্কো ও তেহরানের অভিন্ন স্বার্থ রয়েছে। দেশ দুটি এখন আর মনে করে না, তারা ঘনিষ্ঠ হলে বড় কোনো ক্ষতি হবে। রাশিয়া তো মার্কিন নিষেধাজ্ঞা তোয়াক্কাই করে না। ইরানও মার্কিন নিষেধাজ্ঞা প্রভাব কাটানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্য সফরে বাইডেন স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিলেন, যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্য থেকে সরবে না। এমনকি এমন কোনো শূন্যস্থান রাখা হবে না যা রাশিয়া, চীন, ভারত কিংবা ইরান পূরণ করবে। বাইডেনের এমন ঘোষণার পরও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছে অঞ্চলটি। অথচ রাশিয়া অর্থাৎ পুতিনের গ্রহণযোগ্যতা এই অঞ্চলে বেড়েই চলছে।মার্কিন প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেয়ার পর সৌদি-যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের ব্যাপক অবনতি ঘটে। সৌদি আরবের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ ও সৌদি রাজতন্ত্রের সমালোচক সাংবাদিক জামাল খাশোগির হত্যাকাÐে যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান কে ‘খুনি’ বলতেও দ্বিধা করেননি মার্কিন প্রেসিডেন্ট। এমনকি সৌদিকেও আন্তর্জাতিক স¤প্রদায় থেকে ‘একঘরে’ করার উদ্যোগ নেয়ার প্রতিশ্রæতি দিয়েছিলেন তিনি। এখন ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ বাস্তবতায় তিনি পূর্বকার আলাপ ভুলে গেছেন। গত সপ্তাহে সৌদি যুবরাজের সঙ্গে বৈঠকের পর বাইডেনের নৈতিক অবস্থান নিচে নেমেছে। এমনকি তিনি যে উদ্দেশ্য নিয়ে সৌদি গিয়েছেন (জ¦ালানি দাম কমানো) সেটিও পূরণ হবে বলে মনে হচ্ছে না। সৌদি আরবকে তিনি বেশি তেল উত্তোলনের যে অনুরোধ করেছিলেন, তাতে এখনো সাড়া পাননি। আল জাজিরার হোয়াইট হাউস সংবাদদাতা কিমবার্লি হ্যালকেটের মতে, রাজনৈতিক অর্জন বিবেচনায় বাইডেন মধ্যপ্রাচ্য সফরে কিছু পাননি। তাকে ‘খালি হাতে’ দেশে ফিরতে হয়েছে। অন্যদিকে জো বাইডেনের সৌদি সফরের পরপরই তেলের বাজার নিয়ে কথা বলেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ও সৌদি যুবরাজ ফোনালাপ করেছেন। ফোনালাপে পুতিন তার তেহরান সফর নিয়েও যুবরাজের সঙ্গে কথা বলেন। পরে ক্রেমলিনের এক বিবৃতিতে বলা হয়, ওপেক প্লাসে সহযোগিতা জোরদারের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন পুতিন ও সালমান।শুধু সৌদি আরব নয়, তুরস্কের সঙ্গেও মস্কোর সম্পর্কের উন্নতি ঘটেছে। কৃষ্ণ সাগরে আটকে থাকা শস্য রফতানির জন্য শুক্রবার যে চুক্তি সই হয়েছিল এর মূলে রয়েছে তুরস্ক। তুরস্কই কৃষ্ণসাগর থেকে অবরোধ তুলে নিতে মস্কোর সঙ্গে চুক্তি নিয়ে আগ্রহ দেখিয়েছিল। বাইডেন মধ্যপ্রাচ্য সফরে প্রথমেই পা রাখেন ইসরাইলে। তার এ সফরকে ইসরাইলের সঙ্গে আরব দেশগুলোর সম্পর্ক জোরদারের প্রচেষ্টা হিসেবে দেখা হচ্ছে। যদি তার এ প্রচেষ্টা সফল হয় তাহলে ইরান-রাশিয়া আরও কাছাকাছি আসবে। কারণ, ইরান-ইসরাইল কয়েক বছর ধরে পরোক্ষ যুদ্ধে রয়েছে। বাস্তবতা হলো, ইরান-ইসরাইলের সংঘাত হলে তা কাউকে সন্তুষ্ট করবে না। বৈশ্বিক তেলের বাজার আরও অস্থিতিশীল হয়ে উঠেবে। অঞ্চলটিতে অস্ত্রের দীর্ঘমেয়াদি প্রতিযোগিতা ও অস্থিরতা বাড়বে।