December 4, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Wednesday, July 5th, 2023, 6:00 pm

মহাবিশ্ব তৈরির রহস্য সন্ধান করছে যে টেলিস্কোপ

অনলাইন ডেস্ক :

বিজ্ঞানের জগতে সবচেয়ে বড় প্রশ্নগুলোর একটি এই মহাবিশ্ব কী দিয়ে তৈরি? এর উত্তর খুঁজতে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা থেকে ইউক্লিড নামে ইউরোপীয় একটি টেলিস্কোপ মহাকাশে উৎক্ষেপণ করা হয়েছে। এ মিশনের নামও দেওয়া হয়েছে ইউক্লিড, যা দূরবর্তী কোটি কোটি গ্যালাক্সির ছবি তুলে এই বিশ্বব্রহ্মা-ের একটি নিখুঁত ত্রিমাত্রিক বা থ্রিডি ম্যাপ তৈরি করবে। বিজ্ঞানীরা এই ম্যাপের সাহায্যে কথিত ডার্ক ম্যাটার ও ডার্ক এনার্জি সম্পর্কে ধারণা পাওয়ার চেষ্টা করবেন। ধারণা করা হয়, মহাবিশ্বে আমরা যা কিছু দেখি তার সবকিছুর আকার ও বিস্তৃতিকে এই দুটো জিনিসই নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। তবে গবেষকরা স্বীকার করে নিয়েছেন যে, এই ডার্ক ম্যাটার ও ডার্ক এনার্জি সম্পর্কে তারা এখন পর্যন্ত তেমন কিছুই জানেন না। এর কোনোটি সরাসরি চিহ্নিতও করা যায় না। এখন এই দুটো বিষয় সম্পর্কে জানতে ইউক্লিডের তৈরি থ্রিডি ম্যাপ ব্যবহার করা হবে। এর সাহায্যে বিজ্ঞানীরা বুঝতে চেষ্টা করবেন ডার্ক এনার্জি ও ডার্ক ম্যাটার মহাবিশ্বের সময় ও স্থানের ওপর কী ধরনের প্রভাব ফেলেছে।

যুক্তরাজ্যের ল্যাঙ্কাস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও জ্যোতির্বিজ্ঞানী অধ্যাপক ইসোবেল হুক বলেন, জ্ঞানের এ অভাবের কারণে আমরা আমাদের উৎস সম্পর্কে আসলেই কোনো ব্যাখ্যা দিতে পারি না। তবে ইউক্লিড মিশন থেকে যা কিছু জানা যাবে সেগুলো এই মহাবিশ্বকে বুঝতে আমাদের সাহায্য করবে। ‘এ মিশন অনেকটা কোথায় স্থলভূমি আছে তা জানার আগে জাহাজে করে যাত্রা করার মতো। এই গবেষণা থেকে জানার চেষ্টা করব যে, আমরা এ মহাবিশ্বের কোথায় অবস্থান করছি, কীভাবে আজকের পর্যায়ে এসেছি ও বিগ ব্যাং মুহূর্তের পর থেকে কীভাবে অপরূপ সব গ্যালাক্সি তৈরি হলো, কীভাবে তৈরি হলো সৌরজগত এবং জন্ম হলো প্রাণের।’ ইউক্লিড টেলিস্কোপটি তৈরিতে খরচ হয়েছে ১৪০ কোটি ইউরো।

স্পেস এক্সের ফ্যালকন-৯ রকেটে করে শনিবার কেপ ক্যানাভেরাল থেকে এটিকে মহাকাশে পাঠানো হয়েছে। টেলিস্কোপটি অবস্থান করবে পৃথিবী থেকে ১৫ লাখ কিলোমিটার দূরে। গন্তব্যে গিয়ে পৌঁছাতে এর সময় লাগবে এক মাসের মতো। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এর সাহায্যে ফিরে যাওয়া যাবে মহাবিশ্বের ১ হাজার বছর আগের ইতিহাসে। পৃথিবীর পাশাপাশি এটি সূর্যের চারদিকেও একই গতিতে প্রদক্ষিণ করবে। প্রাথমিকভাবে এটি ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থা এসার প্রকল্প হলেও এ মিশনে যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসারও উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে। বিশেষ করে, টেলিস্কোপটির বিজ্ঞান ও প্রকৌশলগত বিষয়ে। ইউক্লিড মহাকাশে কী করবে: আগে পরিচালিত গবেষণা থেকে ধারণা করা হয়, মহাবিশ্বে যত শক্তি আছে তার ৭০ শতাংশ ডার্ক এনার্জি। প্রায় ২৫ শতাংশ ডার্ক ম্যাটার। বাকি ৫ শতাংশ নক্ষত্র, তারকা, গ্যাস, ধুলোবালি, গ্রহ ও আমাদের মতো দৃশ্যমান বস্তু।

বিশ্বব্রহ্মান্রডের রহস্যময় এই ৯৫ শতাংশ জগত সম্পর্কে ধারণা পেতেই ইউক্লিড টেলিস্কোপ ছয় বছর ধরে দুটি গবেষণা চালাবে। এর মধ্যে প্রধান কাজ হবে ডার্ক ম্যাটার কোথায় কীভাবে রয়েছে, তার একটি মানচিত্র তৈরি করা। ডার্ক ম্যাটার সরাসরি চিহ্নিত করা না গেলেও, জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা মাধ্যাকর্ষণ শক্তির দৃশ্যমান প্রভাবের কারণেই মহাবিশ্বে এর অস্তিত্ব সম্পর্কে নিশ্চিত। উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে, এই ম্যাটারের উপস্থিতি না থাকলে গ্যালাক্সিগুলো তাদের আকৃতি ধরে রাখতে পারত না। এই শক্তি ‘স্ক্যাফল্ডিং’ হিসেবে কাজ করে। এটি অনেকটা অদৃশ্য আঠারো মতো যা মহাবিশ্বকে একত্র করে রেখেছে।