October 8, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Sunday, September 3rd, 2023, 9:37 pm

মানুষের দুর্বল মুহুর্তে সুযোগ নিচ্ছে এ্যাম্বুলেন্স মালিক ও চালকরা

ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

মানুষের বিশেষ বিপদের সময় তাদের সেবা দিয়ে থাকে এ্যাম্বুলেন্স সেবা দানকারীরা। কেউ গুরুতর অসুস্থ হলে বা কোন দুর্ঘটনা ঘটলে সেই ক্ষেত্রে রুগীকে দ্রুত হাসপাতালে নিতে এম্বুলেন্সের প্রয়োজন অপরিসীম। আবার কেউ মারা গেলে তার মহরদেহ হাসপাতাল থেকে বাড়ীতে নিয়ে যাওয়ার জন্যও এ্যাম্বুলেন্স খুবই প্রয়োজনীয়। কিন্তু এই বিপদের সময় মানুষের দুর্বল মুহুর্তের সুযোগ নিয়ে চড়া ভাড়া আদায় করছে এ্যাম্বুলেন্স ব্যবসায়ীরা। নির্ধারিত ভাড়ার কয়েকগুণ বেশি টাকা রোগীর স্বজনদের কাছ থেকে নিচ্ছেন অ্যাম্বুলেন্স চালকরা।

অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিষযটি প্রকাশ্যে হলেও স্বাস্থ্য বিভাগের শীর্ষ কর্মকর্তারা দেখেও না দেখার ভান করছেন। সরকারি অ্যাম্বুলেন্স স্বল্পতার কারণে বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স ব্যবসার একটি সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। ফলে অ্যাম্বুলেন্স নিতে আসা রোগীরা সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে। সিন্ডিকেটের কারণে রোগী মারা যাওয়ার ঘটনাও ঘটছে। হাসপাতালে প্রতিটি ওয়ার্ডে অ্যাম্বুলেন্স ব্যবসায়ীদের লোকজন দর্শনার্থী সেজে ঘোরাফেরা করে। তারা যখন বুঝতে পারে যে ওই রোগী মারা যেতে পারে, তখন ওই রোগীর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে খুব ভাল আচরণ শুরু করে। পরবর্তীতে রোগী মারা গেলে লাশ পরিবহনের জন্য অ্যাম্বুলেন্সের সন্ধান দেন। একে তো স্বজনের মৃত্যু, তার ওপর লাশ যত তাড়াতাড়ি সম্ভব লাশ বাড়ি নেওয়া যায় ততই মঙ্গল-এ ধরনের চিন্তা থেকে চালকদের দাবীকৃত গলাকাটা ভাড়ায় লাশ নিয়ে হাসপাতাল ত্যাগ করে স্বজনরা।

হাসপাতালের সামনে অবস্থান করা অ্যাম্বুলেন্সগুলোর সঙ্গে দরদাম করে কোনো লাভ হয় না। তারা প্রথমবার যে ভাড়া বলবে সেটাই ‘শেষ ভাড়া’। কারণ, আগের সিন্ডিকেট সদস্য অন্য চালকদের কাছে মৃত ব্যক্তির নাম ঠিকানা এবং কোথায় যাবে সব বলে দেয়। ফলে নতুন করে কোন অ্যাম্বুলেন্স কম ভাড়ায় যেতে রাজি হবে না। জানা গেছে, চিকিৎসা সেবা নিতে এসে দালালদের খপ্পরে পড়ে রোগীর পরিবার সর্বশান্ত হয়। এরপর রোগীর মৃত্যু হলে লাশ বাড়ি পর্যন্ত নিতে গিয়ে পোহাতে হয় নানা ঝক্কি-ঝামেলা। আবার শুধুর চড়া ভাড়া নিচ্ছেন তাই নয় অ্যাম্বুলেন্স আর লাশবাহী গাড়ির মালিকরা মানুষের দুর্বল মুহূর্তের সুযোগ নিয়ে কম পয়সার অদক্ষতাকে প্রশ্রয় দেন। হাসপাতালকে কেন্দ্র করে অ্যাম্বুলেন্সের মতো একটি জরুরি পরিবহনসেবাকে ঘিরে এই নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি চলছে বছরের পর বছর ধরে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, অ্যাম্বুলেন্স ভাড়ার ২০ শতাংশ কমিশন দিতে হয় হাসপাতালের কর্মচারী অথবা ওয়ার্ডবয়দের। এ ছাড়া অ্যাম্বুলেন্সের সংখ্যা বেশি হয়ে যাওয়ায় ট্রিপ কমে গেছে। এ কারণে খরচ পোষাতে মালিকেরা রোগীদের কাছ থেকে বাড়তি ভাড়া আদায় করেন। এ ক্ষেত্রে অ্যাম্বুলেন্সমালিক ও চালকদের ঐক্য রয়েছে। এরকম অ্যাম্বুলেন্স ও লাশবাহী ফ্রিজিং গাড়ি নিয়ে রাজধানীর সরকারি- বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে চলছে সিন্ডিকেট বানিজ্য। আবার হাসপাতালগুলোতে অ্যাম্বুলেন্স পার্কিং নিয়ে রয়েছে স্থানীয় রাজনৈতিক সিন্ডিকেট। মোট ভাড়ার ওপর ৫শ থেকে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত কমিশন যায় ওই রাজনৈতিক সিন্ডিকেটের পকেটে। রাজধানীকেন্দ্রিক অ্যাম্বুলেন্সচালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বেসরকারি একেকটি অ্যাম্বুলেন্স ঢাকার ভেতর রোগী বহন করতে দেড় থেকে চার হাজার টাকা পর্যন্ত ভাড়া আদায় করে। ঢাকার হাসপাতাল থেকে অ্যাম্বুলেন্সে করে আশপাশের জেলায় যেতে হলে একজন রোগীকে চার হাজার থেকে ছয় হাজার টাকা গুনতে হয়। একটু দূরের জেলার ক্ষেত্রে ভাড়া দিতে হয় দূরত্ব ভেদে ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা।

শাহীন নামে এক ভুক্তভুগী জানান, ঢাকা থেকে তার স্বজনের লাশ গ্রামের বাড়ি কুষ্টিয়াতে নিয়ে যাওয়ার জন্য এ্যাম্বুলেন্স ঠিক করা হয়। ওই এ্যাম্বুলেন্সের ভাড়া চুক্তি হয় ১৫ হাজার টাকায়। কিন্তু তাদের গ্রামে লাশ পৌছানোর পর এ্যাম্বুলেন্সের চালক নানা সমস্যা দেখিয়ে ভাড়া দাবি করে ২০ হাজার টাকা। লাশ নিয়ে এমন মুহুর্তে তাদের আর ভাড়া নিয়ে দর কষাকষির অবস্থা নেই। তারা পরে নির্ধারিত ভাড়ার সাথে অতিরিক্ত আরও পাঁচ হাজার টাকা দেন চালককে। বেসরকারি এ্যাম্বুলেন্স মালিকরা বলছেন, আমরা এত মানবিক কিভাবে হব এটা আমাদের ব্যবসা। আমরাতো ব্যবসা করি। এগুলা চিন্তা করলেতো আমরা ব্যবসা করতে পারবোনা। এ্যাম্বুলেন্স মালিক সমিতি বলছে, কোন দুরত্বে কত ভাড়া তার তেমন কোন নিয়ম নেই। এ বিষয়ে আমাদের জানা নেই। দেশের বিভিন্ন স্থানে এ্যাম্বুলেন্স যাতায়াতের সময় লাগে অনেক।

তাছাড়া সেতু ও ফেরির টোল দিতে হয়। অথচ অ্যাম্বুলেন্সের কাছ থেকে টোল নেওয়ার কোন বিধান নেই। আমাদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। রাস্তায় আমাদের হয়রানি করে ট্রাফিক পুলিশ। কোনো রোগীকে হাসপাতালে নামানোর পরপরই রং-পার্কিংয়ের মামলা নিয়ে হাজির হয়ে যায়। হাসপাতালগুলো পার্কিংয়ের জায়গা দেয় না। তাহলে আমরা রোগী নামাবো কোথায়?’ বাংলাদেশ অ্যাম্বুলেন্স মালিক কল্যাণ সমিতির সভাপতি মো. গোলাম মোস্তফা বলেন, আমরা অনেক আগে থেকেই এসব বিষয়ে একটি নিতীমালা চেয়ে আসছি। একটি নিতীমালা থাকলে হয়তো ভাড়া নির্ধারণ করা সম্ভব হতো আর সেবার মানও আরও উন্নত হতো। তিনি আরও বলেন, আমরা চাই রোগীরেদ এই সময় তাদের সাথে আরও মানবিক হতে। আমাদের সেবার মান আরও উন্নত করতে। এ ক্ষেত্রে একটা ভাড়া নির্ধারণ করে দিলে আর কেউ হয়রানির শিকার হবে না। বিআরটিএ ও স্বাস্থ্য বিভাগ যদি আমাদের গাড়ির কাগজে ‘ভাড়ায় চালানো যাবে না লিখে না দেয়-তাহলে পুলিশের হয়রানিও বন্ধ হয়ে যাবে। তাহলে সমস্যা অনেকটাই কমে আসবে।