October 5, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Tuesday, June 14th, 2022, 8:51 pm

মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের দ্রুত প্রত্যাবাসনে কাজ করার আহ্বান রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমার

মিয়ানমার বিষয়ক জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ দূত যাতে দ্বিপক্ষীয় প্রত্যাবর্তন ব্যবস্থার দ্রুত বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কাজ করে সে আহ্বান জানানো হয়েছে।

মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ, টেকসই এবং মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবর্তনের মধ্যেই এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান নিহিত রয়েছে বলে জানিয়েছেন জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা।

তিনি রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে সহায়তার জন্য রাখাইন রাজ্যে কর্মসূচি বাড়াতে জাতিসংঘের প্রতি আহ্বান জানান।

সোমবার জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে মিয়ানমার বিষয়ক মহাসচিবের বিশেষ দূত ড. নোলিন হাইজারের ব্রিফিংয়ের পর বক্তব্যে রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা এসব কথা বলেন।

রাষ্ট্রদূত বলেন, জীবন বাঁচাতে নিজভূমি থেকে রোহিঙ্গাদের পলায়নের পর পাঁচ বছর কেটে গেছে, যা সাম্প্রতিক ইতিহাসে সবচেয়ে বৃহ‍ৎ জোরপূর্বক নির্বাসনের ঘটনা। কিন্তু তাদের নিরাপদ প্রত্যাবর্তনের প্রতিশ্রুতি অপূর্ণই রয়ে গেছে। এ পর্যন্ত একজন রোহিঙ্গাও নিজ দেশ মিয়ানমারে ফেরত যায়নি। বাংলাদেশে মানবিক আশ্রয়ে থাকা এক দশমিক পাঁচ মিলিয়ন রোহিঙ্গা গভীর অনিশ্চয়তার মধ্যে দিনাতিপাত করছে। যে সকল রোহিঙ্গা মিয়ানমার ছেড়ে যেতে পারেনি তারা হয় আইডিপি ক্যাম্পে আশ্রয় পেয়েছে অথবা জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত ও নিরাপত্তাহীনতার অব্যাহত হুমকির মধ্যে রয়েছে।

সঙ্কটের মূল কারণগুলো চিহ্নিত করে তা সমাধানের মাধ্যমে এর পুনরাবৃত্তি রোধে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য নিরাপত্তা পরিষদের প্রতি আহ্বান জানান রাষ্ট্রদূত ফাতিমা যাতে এই সমস্যর সমাধান হয়। রোহিঙ্গাদের খাদ্য, আশ্রয়, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও সুরক্ষা দিয়ে বাংলাদেশের প্রচেষ্টার কথা তুলে ধরে তিনি প্রত্যাবাসন উপযোগী সঠিক পরিস্থিতি সৃষ্টিতে আরও এগিয়ে আসতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান।

রাবাব ফাতিমা বলেন, শুধু আমাদের একক প্রচেষ্টার মাধ্যমে এ সমস্যার স্থায়ী সমাধান সম্ভব নয়। জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত এই জনগোষ্ঠীকে মর্যাদাপূর্ণভাবে নিজ ভূমি মিয়ানমারে প্রত্যাবর্তনের অনুকূল পরিবেশ তৈরিতে প্রয়োজন যথোপযুক্ত পদক্ষেপ ও কর্মসূচি। আর এটাই সবচেয়ে কাঙ্খিত টেকসই সমাধান যা রোহিঙ্গাদের দীর্ঘদিনের লালিত আকাঙ্খা।

তিনি বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি মিয়ানমারের সমস্ত লঙ্ঘন ও অপরাধের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার গুরুত্বের ওপর জোর দেন এবং ওআইসির পক্ষে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে গাম্বিয়ার করা চলমান মামলার প্রেক্ষিতে উক্ত আদালত জারিকৃত অস্থায়ী ব্যবস্থার বাস্তবায়ন পর্যবেক্ষণ করতে নিরাপত্তা পরিষদের প্রতি আহ্বান জানান।

রাষ্ট্রদূত ফাতিমা বলেন, বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে আমার সরকার সবকিছুই করছে। আমরা আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (ওআইসি) এবং মিয়ানমারের স্বাধীন তদন্ত প্রক্রিয়ার (আইআইএমএম) সকল প্রচেষ্টায় পূর্ণ সমর্থন দিচ্ছি। রাষ্ট্রদূত ফাতিমা রোহিঙ্গা মুসলমানদের ন্যয়বিচার নিশ্চিত এবং এই ঘটনার ভবিষ্যৎ পুনরাবৃত্তি রোধ করতে সকল দেশকে, বিশেষ করে আঞ্চলিক দেশগুলোকে এ সংক্রান্ত চলমান জবাবদিহিমূলক ব্যবস্থায় সহযোগিতা দেয়া ও তাদের প্রবেশাধিকার দিতে সহযোগিতা করার আহ্বান জানান।

আসিয়ান ও মিয়ানমারের মধ্যে সমাপ্ত পাঁচ দফা ঐক্যমত্যের দ্রুত ও পূর্ণ বাস্তবায়নসহ মিয়ানমারের সংকটের সমাধান খুঁজে বের করার প্রচেষ্টা গ্রহণের জন্য আসিয়ানের প্রশংসা করেন বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি। দীর্ঘস্থায়ী রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী রাজনৈতিক সমাধানের জন্য আসিয়ান সদস্য দেশ এবং এই অঞ্চলের অন্যান্য দেশগুলির সঙ্গে সম্পৃক্ততা অব্যাহত রাখার জন্য মিয়ানমার বিষয়ক বিশেষ দূতের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

বিশেষ দূত তার ব্রিফিংয়ে মিয়ানমারের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, এই পরিস্থিতি রোহিঙ্গা মুসলিমসহ বেসামরিক নাগরিকদের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে এবং অস্থিরতা সৃষ্টি করছে। তিনি বাংলাদেশ সরকারের উদারতার স্বীকৃতি জানিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে রোহিঙ্গাদের প্রতি তাদের দায়িত্বের কথা স্মরণ করিয়ে দেন। তিনি মিয়ানমারে তার ভবিষ্যত কর্মপরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন যার মাধ্যমে শান্তি, উন্নয়ন এবং মানবিক কাজের সঙ্গে যুক্ত সকল পক্ষকে এই সঙ্কটের সমাধানে সর্বোচ্চভাবে কাজে লাগাবেন মর্মে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।

—ইউএনবি