নিজস্ব প্রতিবেদক :
মিসরের উচ্চশিক্ষা ও বিজ্ঞান গবেষণা মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ড. খালেদ আবদেল গাফফারের সঙ্গে তার কার্যালয়ে সাক্ষাত করেছেন দেশটিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম। পূর্ব নির্ধারিত এ বৈঠকে মন্ত্রীকে তার আন্তরিকতার জন্য ধন্যবাদ জানান রাষ্ট্রদূত। চলমান কোভিড-১৯ মহামারি পরিস্থিতিতে শিক্ষাখাত পরিচালনায় মিসরের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দক্ষতা ও কৌশল জানতে আগ্রহ প্রকাশ করে আলোচনা শুরু করেন তিনি। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন কায়রোস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের দূতালয় প্রধান মুহাম্মদ ইসমাঈল হুসাইন ও মিসরের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সাংস্কৃতিক বিষয়ক ও মিশন সেক্টরের প্রধান ড. আশরাফ আল আজাজীসহ মন্ত্রণালয়ের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তারা। দেশটির রাষ্ট্রপতির নির্দেশনায় মিসর সরকার কীভাবে বর্তমান পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কার্যকরভাবে পরিচালনা করছে বৈঠকে রাষ্ট্রদূতকে তার একটি সংক্ষিপ্ত ধারণা দেন মন্ত্রী। এছাড়াও তিনি বাংলাদেশ ও মিসরের মধ্যে যে ঘনিষ্ঠ ও ভ্রাতৃত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে, বিশেষ করে উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা ক্ষেত্রে তার ভূয়সী প্রশংসা করেন। রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য বাৎসরিক শিক্ষাবৃত্তির সংখ্যা বাড়ানোর অনুরোধ করলে ড. খালেদ আবদেল গাফফার বলেন, বাংলাদেশ ও মিসরের মধ্যে ১৯৭৪ সালে শিক্ষা বিনিময়ের একটি সমঝোতা স্মারক হয়েছিল। যেটি ২০১৫ সালে মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে। রাষ্ট্রদূত মনিরুল ইসলাম অবিলম্বে পুরনো চুক্তিটি নবায়নের অনুরোধ জানান। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন এবং মিসরের বিশ্ববিদ্যালয় সুপ্রিম কাউন্সিলের মধ্যে সহযোগিতার জন্য আরেকটি সমঝোতা স্মারক সই হতে পারে। মন্ত্রী জানান, দুই দেশের শিক্ষার্থী, শিক্ষক, বিজ্ঞানীদের মাঝে বৃত্তির সংখ্যা বাড়ানো ও বিবিধ সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টির লক্ষ্যে চুক্তি দু’টি সইয়ের জন্য কাজ করা উচিত। তিনি বলেন, মিসরে উচ্চশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে ১২টি বড় বড় গবেষণা কেন্দ্র রয়েছে। শিক্ষা বিনিময় চুক্তিতে বৈজ্ঞানিক গবেষণাও অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। মন্ত্রী আরও বলেন, ২০২১ সালের ডিসেম্বরে কায়রোতে অনুষ্ঠিত ‘ইসলামিক ওয়ার্ল্ড এডুকেশনাল, সায়েন্টিফিক অ্যান্ড কালচারাল অর্গানাইজেশন (আইএসইএসসিও)’ -এর সাধারণ সম্মেলনে হতে যাচ্ছে। সেই সম্মেলনে অংশগ্রহণের জন্য বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানান ড. খালেদ আবদেল গাফফার। সে জন্য বাংলাদেশের শিক্ষামন্ত্রীর কাছে আমন্ত্রণ পাঠানো হবে বলে উল্লেখ করে মিসরের শিক্ষামন্ত্রী বলেন, সে সময়েই ‘এমওইউ’টি সই করার উপযুক্ত সময়। এসময় দুই দেশের মধ্যে ডিগ্রিগুলোর সমমান থাকা উচিত বলে মন্ত্রীকে জানান রাষ্ট্রদূত। ড. খালেদ আবদেল গাফফার সম্মত হয়ে তা বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দেন। বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত উচ্চশিক্ষা খাতে বিশেষ করে চিকিৎসা, আইসিটি, কৃষি, পর্যটন এবং নার্সিংয়ের ক্ষেত্রে আরও সহযোগিতার জন্য অনুরোধ জানালে মন্ত্রী বলেন, ‘স্টাডি ইন ইজিপ্ট’ নামে একটি শিক্ষা প্রকল্প রয়েছে যা থেকে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা মিসরের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সম্পর্কে জানতে ও ভর্তি হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য পাবে। রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশের সঙ্গে সহযোগিতা বৃদ্ধির জন্য মন্ত্রীকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানিয়ে বাংলাদেশের কিছু উপহার সামগ্রী প্রদান করেন ও আশ্বাস দেন যে, দূতাবাস যেকোনো সময়ে উচ্চশিক্ষা মন্ত্রণালয়কে আন্তরিকভাবে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত। মন্ত্রীকে তার সুবিধামতো সময়ে বাংলাদেশ সফরেরও আমন্ত্রণ জানান মনিরুল ইসলাম। মিসরীয় মন্ত্রী বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের কাছ থেকে উপহার পেয়ে খুশি হন এবং আগামী দিনগুলোতে আরও সহযোগিতা করার আশ্বাস দেন। ৪৭ বছর আগের মিসর-বাংলাদেশ শিক্ষা বিনিময় চুক্তির মাধ্যমে প্রতি বছর মিসরের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রির জন্য ১০টি বৃত্তি রয়েছে। চুক্তি মোতাবেক সেই বৃত্তিতে টিউশন ফি, থাকা খাওয়া, আসার বিমান ভাড়া ও শিক্ষা খরচসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকেন বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা।
আরও পড়ুন
এলডিসি গ্রাজুয়েশনে বাংলাদেশের সুষ্ঠু উত্তরণে পূর্ণ সহায়তার আশ্বাস জাতিসংঘের
জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ডে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা নিয়ে ইউনূস-আইসিসির আলোচনা
দেশ সংস্কারে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই ও পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনতে সহায়তা দেবে যুক্তরাষ্ট্র