October 13, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Wednesday, November 16th, 2022, 7:46 pm

মেসির সাক্ষাৎকার : ‘মেসি হয়ে জন্মাবার কিছু খারাপ দিক আছে’

অনলাইন ডেস্ক :

পিএসজি ও আর্জেন্টিনার মহাতারকা লিওনেল মেসি সম্প্রতি আর্জেন্টিনার হয়ে ১৯৮৬ বিশ্বকাপজয়ী তারকা হর্হে ভালদানোকে একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। ‘ইয়ুনিভার্সো ভালদানো’ নামে ছিয়াশির বিশ্বকাপ ফাইনালের গোলদাতার শোয়ে উপস্থিত হয়ে মেসি কথা বলেছেন তার জীবনের নানা সময়কাল নিয়ে। তার বেড়ে ওঠার সময়কাল, গার্দিওলা কীভাবে ফুটবলের জন্য ক্ষতিকর তা থেকে শুরু করে লুইস এনরিকের স্পেন দল নিয়েও কথা বলেছেন মেসি।
বাবা-মা ভেবেছিল মেয়ে হয়ে জন্মাব :
আমার বাবা-মা একজন মেয়ে শিশু প্রত্যাশা করেছিলেন। আমার বাবা কোনোভাবে ধরে নিয়েছিলেন যে, আমি মেয়ে হয়ে জন্মাতে পারি। তারা এমনকি একটা নামও ঠিক করে রেখেছিল আমার জন্য।
আমি সব সময় বলে এসেছি, আমি যখন চার কিংবা পাঁচ বছর বয়সে প্রিমেরা ডিভিশনে পৌঁছালাম, আমার খেলার ধরনটা একই ছিল। আমি (ঈশ্বরের) উপহারটা শুধু আরও শানিত, আরও উন্নতি করতে চেয়েছি। আমার বেড়ে ওঠাটা বলের সঙ্গেই, যখন থেকে আমার ভাবতে শেখা শুরু। আমি সাধারণত আমার সহোদর, কাজিন, বয়স্ক মানুষের সঙ্গে খেলে অভ্যস্ত ছিলাম। আমি খেলতে ভালোবাসতাম। আমি আমার ভাইদের সঙ্গে খেলতে চাইতাম এবং তারা আমাকে দলে নিত না। আমি প্রায়ই উত্ত্যক্ত বোধ করতাম এবং এটা নিয়ে ঝগড়া করতাম। আমি স্কুলে অলস ছিলাম, এটা ছিল কঠিন। আমি নিশ্চিতভাবেই ভালো বাচ্চা ছিলাম। ফুটবল খেলতে না দিয়ে তারা আমাকে শাস্তি দিতেন।
বার্সেলোনায় চলে আসা:
আমি বার্সেলোনায় ১৫ দিন ছিলাম। শেষ দিনে বড়দের দলের সঙ্গে আমাদের একটা ম্যাচ ছিল। আমার কাছে বার্সার সবকিছুই অত্যন্ত চমৎকার লেগেছিল। তারা আপনাকে কিট দিচ্ছে, বুট দিচ্ছে, মাঠ দিচ্ছে। অনুশীলন শুরু করলে তারা আপনাকে বল দিচ্ছে, যাতে করে আপনি গা গরম করতে পারেন। আমি পূর্বে এমনটা কখনো দেখিনি। আমি অত্যন্ত চমকে গিয়েছিলাম। ড্রেসিং রুমের পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নেয়াটা আমার জন্য কঠিন ছিল। কিন্তু একবার মাঠে নেমে পড়তে পারলে আমি প্রফুল্লতা অনুভব করতাম। আর্জেন্টিনার মতো রাস্তায় বেরিয়ে পড়ে ফুটবল খেলাটা আমি এখানে মিস করতাম। আমি মনে করি, ফুটবল অনেক বদলে গেছে। একজন ফুটবলারকে আলাদা করে দেখা কঠিন, যে অন্যান্যের চেয়ে আলাদা। ফুটবল ক্রমে আরও বেশি টেকটিক্যাল হয়ে পড়ছে। আমার জন্য সে বছরটা কঠিন ছিল। আমি ছয়টা মাস খেলার বাইরে ছিলাম এবং যখন আমি ফিরলাম, আমি ফের চোট পেলাম। আমার ভাই আর্জেন্টিনায় ফিরে গেল। আমার ছোটবোনের তখন ছয় কি সাত এবং সে মানিয়ে নিতে পারল না। পরিবারটা ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়ে গেল এবং এটা মেনে নেয়া কঠিন। আমার বাবা জিজ্ঞেস করলেন, আমি আর্জেন্টিনায় ফিরে যেতে চাই কিনা কিন্তু, ততদিনে আমি কঠিন সময়টা পেছনে ফেলে এসেছি। আমি অনুভব করতাম আমার কারণে আমরা আলাদা হয়ে গেছি, কিন্তু আমি ফুটবলটা খেলা ছাড়া আলাদা কিছু দেখিনি।
সিনিয়র দলে জায়গা করে নেয়া:
১৪ বছর বয়সে, প্রথম বছরটা ভালো ছিল। পরবর্তী বছর থেকে আমি ক্লাবের বয়সভিত্তিক পর্যায়ের মধ্য দিয়ে গেলাম। দুই বছরের মধ্যেই আমি প্রধান দলের সঙ্গে অনুশীলন করার সুযোগ পেলাম, বি দলের সঙ্গে -সব কিছু কেমন দ্রুত ঘটে গেল। আমি খুব গোছানো ছিলাম। আমি সবকিছু গোছানো পেতে পছন্দ করতাম এবং যখন কোনকিছু পরিকল্পনামাফিক চলতো না খুব বিরক্ত হতাম।
গ্যাম্পার ট্রফির আগে চীন ও জাপানে রাইকার্ডের (তৎকালীন বার্সা কোচ) সঙ্গে প্রাক-মৌসুম কাটালাম। দলে বিদেশি খেলোয়াড়ের জন্য কোনো জায়গা অবশিষ্ট ছিল না। সে সময়ে মার্কুয়েজ (রাফায়েল), রোনালদিনহো ও এত (স্যামুয়েল) সেখানে ছিল, যতদূর মনে করতে পারি। জুভেন্তাসের বিপক্ষে গ্যাম্পারের ম্যাচ সবকিছু বদলে দেয়। এটা আমার প্রতি ক্লাবের দৃষ্টিভঙ্গিই বদলে দিয়েছিল। রোনালদিনহো, ডেকো, মোত্তা (থিয়াগো), সিলভিনহো, জাভি, পুয়োল, প্রত্যেকেই শুরু থেকে এটাকে আমার বাড়ি ভাবতে সাহায্য করেছে। তারা আমার সঙ্গে যেভাবে আচরণ করেছে তা সত্যিই চমৎকার। এমন একটা ড্রেসিং রুমে থাকাটা সহজ নয় এবং তারা এটা আমার জন্য সহজ করে দিয়েছিল। আমি বাবাকে বলেছিলাম, আর্জেন্টিনার জন্য এমন কিছু করতে হবে যাতে লোকে জানে আমি আছি। আমি বয়সভিত্তিক (আর্জেন্টিনা) দলের হয়ে দুটি প্রীতি ম্যাচ খেললাম এবং তারা আমাকে চিনল। আমি ১৭ কী ১৮ বছর বয়সে শুরু করি। আমি অনূর্ধ্ব -২০ এর সঙ্গে গেলাম এবং জিতলাম।
আর্জেন্টিনা জাতীয় দলে:
আমি সব সময় মানুষের ভালোবাসাটা টের পেতাম কিন্তু আর্জেন্টিনায় সবসময়ই কিছু অংশ আমাকে প্রশ্নবিদ্ধ করত। আমি যাই করি তার ওপর তাদের একটা মতামত থাকত। ২০১২ সালের কোপা আমেরিকায় আমরা খুব বাজেভাবে শুরু করি। যেদিন আমরা টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নিলাম, সেটা ছিল আমাদের খেলা ওই আসরের অন্যতম সেরা খেলা। আমরা পেনাল্টিতে হেরে শেষ করেছিলাম। প্রথম দুই ম্যাচে আমরা খুব বাজে খেলেছিলাম। এটা এতটাই বাজে ছিল যে, ঠিক ২০১০ বিশ্বকাপের মতো। ২০০৬ সালের আগে আমি কখনো জার্মানিতে খেলিনি এবং তারা আমার সমালোচনা করা শুরু করে দিল। ২০০৭ সালে ভেনেজুয়েলায় আমরা কোপা আমেরিকার ফাইনাল হারি। তখন থেকেই সবকিছু বড়তে পরিণত হচ্ছিল।
‘ক্ষতিকর’ গার্দিওলা:
বার্সেলোনায় গার্দিওলার সময়টা অসাধারণ ছিল। তিনি এমন একটা প্রজন্ম খুঁজে পেয়েছিলেন যারা ছিল অনন্য। এটা ছিল চিত্তাকর্ষক। যার বিপক্ষে যেখানেই খেলা হোক না কেন, জানতাম, আমরাই জিতব। আমাদের পরাজয়ের বেদনা ছিল, কিন্তু আমাদের উচ্চ পর্যায়ের আত্মবিশ্বাস কাজ করত অনুশীলনে। আমার আক্ষেপ আছে সময়টা বেশিদিন উপভোগ করতে না পারার জন্য।
গার্দিওলা ফুটবলের প্রচুর ক্ষতি করে গেছেন, কারণ তার এটা দেখতে খুব সহজ হয়ে গেছে এবং সকলেই অনুকরণ করতে চায়। সে শ্রেষ্ঠতম কোচ, সন্দেহ ছাড়াই, তার মধ্যে বিশেষ কিছু আছে।
গার্দিওলা এক বিকেলে অনুশীলন মাঠে আমাকে ডাকলেন, সাতটার দিকে। আমি তখন বাড়িতে। আমি গেলাম এবং সে আমাকে জানাল -আমি রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে ফলস নাইনের ভূমিকায় খেলতে চলেছি। প্রথমদিককার গোলগুলোর মধ্যে একটি, হেনরিরটি (থিয়েরি হেনরি), তিনি যেমন ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন ঠিক তেমনই হয়েছিল।
লুইস এনরিকেও গার্দিওলার মতো:
লুইস এনরিকের সঙ্গে গার্দিওলার অনেক মিল। গার্দিওলার ছিল বিশেষ কিছু কিন্তু এনরিকে যেভাবে প্রস্তুতি নেয় এবং খেলাটা পড়ে সেটা অনেকটাই তার মতোই। সে তার মতোই গ্যাপ খুঁজে বের করে প্রতিপক্ষকে আঘাত করে। তারই ওই একই দর্শন। এটা সহজেই চেনা যায়, এটা তার জাতীয় দল (স্পেন)। আমি জানি তার সঙ্গে কাজ করতে কেমন লাগে। এই জাতীয় দলটা তেমনই, যেমনটা তিনি চান। আমাদের মাঝে সামান্য তর্ক হয়েছিল কিন্তু তা আমরা পরে মিটিয়ে নিয়েছি। কয়েক মুহূর্ত পরে আমার অনুশোচনা হয়েছে আরও বেশি ভাবনাচিন্তা না করার জন্য কিংবা ভিন্নভাবে আচরণ না করতে পারার জন্য। এনরিকের সঙ্গে সেই শেষ দিন থেকে আজ পর্যন্ত আমার চমৎকার সম্পর্ক বিদ্যমান।
কিছুটা ব্যক্তিগত:
মেসি হয়ে জন্ম নেবার কিছু খারাপ দিক আছে। আমি এমন অনেক কিছুই করতে পছন্দ করি যেটা চোখের অগোচরে থাকুক। আমি যখন পরিবার ও বাচ্চাদের সঙ্গে থাকি, এটা আমাকে বাইরের জীবন থেকে মুক্তি দেয়। ৭ কিংবা ৮ বছর বয়স থেকে আমি আমার স্ত্রীকে চিনি। যখন আমি বার্সেলোনায় আসি, এখানে যোগাযোগের কোনো উপায় ছিল না। আমরা সপ্তাহে একবার কথা বলতাম এবং সেটাও খুব স্বল্প সময়ের জন্য কারণ আমরা খরচা করতে চাইতাম না। এই সম্পর্কটা আজীবন আমার মাথার ভেতরে ছিল। আমি যখন আমার বন্ধু বা পরিবারের সঙ্গে থাকি, আমি তখন মেসি নই, সম্পূর্ণ আলাদা এক ব্যক্তি যেন। ইদানীং আমি সবকিছু আগের চেয়ে বেশি উপভোগ করছি, দিনে দিনে, আর্জেন্টিনা দলটার সঙ্গে যুক্ত সবকিছুই। ব্রাজিলের কোপা আমেরিকার সময় থেকেই এখানে চমৎকার একটা গ্রুপ হয়েছে।
স্ক্যালোনিকে যেমন দেখেন:
স্ক্যালোনি সবসময় চমৎকার ব্যক্তিত্ব নিয়ে চলেন। সে দুর্দান্ত একজন ম্যানেজার। তার সবচেয়ে ভালো গুণ হলো, সে একজন দুর্দান্ত যোগাযোগ স্থাপনকারী এবং যেভাবে তিনি গ্রুপটাকে পরিচালনা করেন। সে এই বিশ্বাস খেলোয়াড়দের মধ্যে ঢুকিয়ে দেয় যে, তার চিন্তাটা দলের জন্য সর্বোত্তম। সে তার আইডিয়ার সন্তুষ্ট এবং অন্যরা কি বলল সে বিষয়ে ভাবে না।
২০২২ বিশ্বকাপের ফেবারিট যারা:
যে কোনো জাতীয় দল প্রতিপক্ষ হিসেবে কঠিন, এটা কারা সেটা ভিত্তিহীন। আমরা এখনো ইউরোপিয়ান দলের বিপক্ষে খুব বেশি ম্যাচ খেলিনি। আমার মনে হয় আমরা খুব ভালো অবস্থানে থেকেই সেখানে যাচ্ছি। কিন্তু অন্যের সামনে এটা তুলে ধরার দরকারও নেই এবং আমরা নিজেদের ফেবারিট ভাবছিও না। আপনাকে বাস্তববাদী হতে হবে এবং প্রত্যেকটা খেলা ধরে এগোতে হবে।
আমার মনে হয় ফ্রান্স, যদিও তাদের অনেক খেলোয়াড় ইনজুরিতে, তাদের খুব ভালো সম্ভাবনা। তাদের অনেক ভালো ভালো খেলোয়াড় এবং ভালো কোচ আছেন, যারা একই সঙ্গে অনেকদিন থেকেই আছেন। তারা একটি বিশ্বকাপ জিতেছে। ব্রাজিলের অত্যন্ত গুণগতমানসম্পন্ন একটা স্কোয়াড আছে এবং অনেক বিপজ্জনক খেলোয়াড়ও। তাদের একজন স্ট্রাইকার আছেন, নেইমার। আমার মনে হয়, আমাদেরও খুব ভালো একটা গ্রুপ আছে। জিওর (জিওভান্নি লো সেলসো) ইনজুরি আমাদের জন্য দুর্ভাগ্যজনক। আমরা লড়াই করতে যাচ্ছি। আমরা সেখানে একটা আইডিয়া নিয়ে যাচ্ছি।