October 12, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Monday, October 10th, 2022, 8:44 pm

মৌলভীবাজারে ভুমি অধিগ্রহণের পরও অর্থ পাচ্ছেনা জমির মালিকরা

জেলা প্রতিনিধি, মৌলভীবাজার:

খরস্রোতা মনু নদীর ভাঙন রোধে ও বন্যার স্থায়ী সমাধানে একনেকে এক হাজার কোটি টাকার ‘মনু নদীর ভাঙন থেকে কুলাউড়া, রাজনগর ও মৌলভীবাজার সদর রক্ষা’ প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। বর্ষায় বন্যা নিয়মমাফিক ঘটনা। বর্ষাকালে পানির সঙ্গে বাড়ে দুই পারের লক্ষ লক্ষ মানুষের আতঙ্ক ও উদ্বেগ। মনু নদের পারের বাসিন্দারা যুগ যুগ দরে এ কষ্ট সহ্য করে দিন পার করছেন। বন্যা সমস্যার স্থায়ী সমাধানের দাবিতে তাঁরা আন্দোলনও কম করেননি। ২০২০ সালের ২১ জুন জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন হয়। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ৯৯৬কোটি ২৮লাখ টাকা। যার মেয়াদ ২০২৩সালের জুনে শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু করোনা মহামারী ও অর্থ বরাদ্ধের ছাড় না হওয়ায় দুই বছরে মাত্র ২৭ শতাংশ কাজ হয়েছে।

পাউবো ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ভারতের ত্রিপুরার পাহাড়ি উৎপত্তিস্থল থেকে প্রবাহিত খরস্রোতা মনু নদী কুলাউড়ার শরীফপুর ইউনিয়ন দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। এরপর কুলাউড়া, রাজনগর ও মৌলভীবাজার সদরের ৭৪ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে কুশিয়ারা নদীর মিলিত হয়। উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের সঙ্গে পলিমাটিতে নদীর তলদেশের অনেকটাই ভরাটসহ অনেক স্থানে বিশাল বিশাল চর জেগে উঠেছে। শুকনা মৌসুমে পানির ক্ষীণধারা তলানিতে আর বর্ষাকালে পাহাড়ি ঢল ও ভারী বর্ষণে দ্রুতই নদটি টইটম্বুর হয়ে ওঠে। মনুর পাড় ভাঙা ও বন্যা নিয়মিত ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ১৯৮৪ সালে মৌলভীবাজার শহরে ভয়াবহ বন্যায় ক্ষয়ক্ষতিসহ প্রাণহানি এবং সর্বশেষ ২০১৮ সালে শহরের বড়হাট এলাকায় বাঁধ ভেঙে যায়।

পাউবো ‘মনু নদের ভাঙন থেকে কুলাউড়া, রাজনগর ও মৌলভীবাজার সদর রক্ষা’ নামে একটি প্রকল্প গ্রহণ করে। যার ব্যয় ৯৯৬কোটি ২৮ লাখ টাকার। প্রকল্পটি ২০২০সালের জুন মাসে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন পায় এবং ২০২৩সালের জুনে কাজ শেষ হওয়ার কথা।

পাউবো জানিয়েছে, ৭২ টি প্যাকেজের মাধ্যমে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। এতে আছে নতুন করে আড়াই কি: মি: বন্যা প্রতিরক্ষা দেয়াল নির্মাণ, ৭৬৬ মিটার পুরোনো বন্যা নিয়ন্ত্রণ দেয়াল পুনর্বাসন,৮৬কি:মি: বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ পুনর্বাসন, ৩৫ স্থানের ১২ কিলোমিটার চর অপসারণ, নদের তীর সংরক্ষণ কাজ ইত্যাদি।

পাউবোর সুত্রে জানা জানা গেছে, নভেম্বর ২০২০ইং পর্যন্ত প্যাকেজের নকশা অনুমোদনের জন্য পাঠানো হলেও।ডিজাইন পাওয়া যায়নি আহবান করেও ঠিকাদারী প্রতিষ্টান পাওয়া যায়নি। ফলে কাজের ধীরগতির সৃষ্টি হয়। এর মধ্যে মৌলভীবাজার শহর অংশের আড়াই কি:মি: বন্যা প্রতিরক্ষা দেয়াল নির্মাণ কাজের দরপত্র আহ্বান করা হয় ২০জানুয়ারি ২০২১সালের জানুয়ারী মাসে দরপত্র উন্মুক্ত করা হয়।

অপরদিকে চলতি ২০২২সালের এপ্রিল মাসে ৫৯টি প্যাকেজের টেন্ডার আহবান করা হলে এপ্রিল মাসের শেষার্ধে ঠিকাদারী প্রতিষ্টান গুলোকে ওয়ার্ক অর্ডার দেয়া হয়েছে।

উল্যেখ্য যে, স্বাধীনতার পর মনু নদে খনন হয়নি। চর কাটা হলে পানির স্বাভাবিক স্রোত ফিরে আসবে। সূত্রটি আরও জানায়, জমি অধিগ্রহণেরও মাঠপর্যায়ে জরিপ কাজ চলছে। প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে ১লাখ হেক্টর ফসলি জমি,দেড় লাখ মানুষ নদী ভাঙনের ঝুঁকিমুক্তসহ সাড়ে চার লাখ মানুষ বাঁধ ভেঙে বন্যাজনিত ক্ষয়ক্ষতি থেকে রক্ষা পাবে।

এনিয়ে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীনস্থ মৌলভীবাজারে মনু নদীর চলমান কাজকে বেগবান ও গুনগত মান বৃদ্ধির লক্ষ্যে সকল ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি,প্রকল্প পরিচালক ও প্রকৌশলীসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গদের নিয়ে মতবিনিময় সভা হয় ২৪ আগস্ট দুপুরে। বিষয়বস্তু ছিল প্রকল্পের চলমান কাজের গুনগত মান বজায় রাখা ও কাজের অগ্রগতি বৃদ্ধি নিয়ে। এসময় ছিলেন,প্রকৌশলীগনসহ নিয়োজিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি, প্রকল্প পরিচালক ও প্রকল্পের সাথে সংশ্লিষ্টরা।

এদিকে সরজমিনে মনুপ্রকল্পের আওতাধীন যেসব এলাকায় মানুষের বাড়িঘর অদিগ্রহন করা হয়েছে তারা এখনো কোন পরিবার টাকা পায়নি। তারা আরো বলেন সরকার আমাদের মাতা গোজার সম্বল অধিগ্রহন করেছে দু:খ কষ্ট লাগবো করার জন্য। কিন্তু কাজ চলছে কখন বাড়ি ঘর নিয়ে যাবে আমরা জানিনা। আমরা কোথায় যাবো, কোথায় ঠাই হবে শেষ সম্বল নিয়ে যাওয়ার শঙ্খায় দু:চিন্তায় রয়েছেন।

প্রকল্প কাজের এলাকাগুলোতে চলছে নানাবিদ প্রতিক্রিয়া। শুধু তাই নয় সহজ সরল মানুষের মধ্যে টাকা পয়সা পাবেনা ছড়িয়ে হতাশা ও আতংক সৃষ্টি করছে একটি চক্র। অথচ এই প্রকল্পের ভুমি অধিগ্রহনের বরাদ্ধের টাকাই আসেনি এখনোও বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও জেলা প্রশাসকের কার্যলয়। তবে তারা বলছেন খুব দ্রুত চলে আসছে।

অনুসন্ধানে আরো জানা গেছে, ২০২৩সালের জুনে এ প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। অথচ ২বছরে মাত্র ২৭শতাংশ কাজ হয়েছে। প্রথমার্ধে ২০ জানুয়ারি ২০২১সালে ৪টি কাজের টেন্ডার বিজ্ঞপ্তি আহবান করা হলে বর্তমানে সেটির কাজ চলমান রয়েছে। আর ৪৫টি কাজের টেন্ডার আহবান করাসহ ঠিকাদালী প্রতিষ্টানের কাছে হস্তান্তর করা হয় আগষ্ট ২০২২ইং মাসে। করোনা ভাইরাসে শ্রমিক সংকটের কারনে ৬মাস প্রায় কাজ বন্ধ থাকলেও পানি উন্নয়ন বোর্ড সেটিকে পুষিয়ে নিতে মাঠ পর্যায়ে দেখবাল করছেন বলে সরজমিনে দেখা যায়।

এদিকে, ঠিকাদারী প্রতিষ্টান কর্তৃক নিজ দায়িত্বে গুনগত মানের বালু ব্যবহারের তৈরি জিও ব্যাগসহ অন্যান্য কাজে বালু মহালদারদের কাছ থেকে বালু ক্রয় করে লাগানো হচ্ছে বলে জানা গেছে। এব্যাপারে বালু মহালদার কয়েকজনের সাথে আলাপকালে তারা বলেন, আমরা বালু মহা লিজ নিয়েছি। কাউকে ফ্রি দেয়া যাবেনা। মনু প্রকল্পের কাজের ঠিকাদারী প্রতিষ্টান আমাদের কাজ থেকে উন্নত বালু ক্রয় করে নিচ্ছেন।

 

অনুসন্ধানে সরজমিনে আরো দেখা যায়, মনু নদীর দস্তিদারের চক, টগরপুর, আদিনাবাদ, খাসপ্রেমনগর, ভোলানগর-মিঠিপুর ও প্রেমনগর, খাসপ্রেমনগর এলাকায় টাস্কফোর্স জিও ব্যাগ চিহ্নিত করেছে। ব্লক নির্মাণে নির্ধারিত (সিলেকশন গ্রেড) বালু ও পাথর ব্যবহারসহ সর্বোপুরি কাজের মান সঠিক হচ্ছে কিনা তা পরীক্ষা নিরিক্ষার জন্য একটি টিম কাজ করছে। টিমটি বর্তমানে প্রকল্পের কাজের বিভিন্ন স্থানে কাজ করছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে পাউবো ও ঠিকাদারী প্রতিষ্টান সুত্রে জানা গেছে চলতি বছর ৯০কোটি টাকার অর্থ ছাড় হবে বলে গেছে। তবে এর মধ্যে ঠিকাদারী প্রতিষ্টানের পাওনা রয়েছে প্রায় ৮০ কোটি টাকা। বরাদ্দ বৃদ্ধি না হলে বর্তমান চলমান কাজ ও বর্ষা শেষে যে গতিতে কাজের বাস্তবায়নে অসম্বব হয়ে পড়ার আশংকা রয়েছে।

আরো জানা গেছে, বর্ষাকালীন সময় বালু মাটির বাধের ৮টি ও এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ৯টি কাজের এথনো শুরুই হয়নি এবং আরো ৬টি প্যাকেজের দরপত্র আহবান বাকী রয়েছে। কাচামাল ও দ্রব্যমুল্যেও উর্ধগতির কারনে ঠিকাদারী প্রতিষ্টান পাওয়া যাচ্ছেনা দরপত্র আহবান করার পরও। সকল দরপত্রেই ইজিপিতে আহবান করা হয়েছে। ফলে কাউকে অবৈধ্যভাবে কাজ দেয়ার এষতিয়ারও নেই।

এনিয়ে টাস্কফোর্স টিমের সাথে আলাপকালে তিনি বলেন, আমরা সরজমিনে প্রাথমিকভাবে পরীক্ষা করছি ও যেগুলোর মান নিন্মমানের সেগুলো বাতিল করছি এবং প্রকৃত গুনগত মান সটিকের জন্য কিছু দিনের মধ্যে ভুয়েটে পাটাবো। সেখান থেকে রিপোর্ট আসার পর আমরা ঠিকাদারী প্রতিষ্টানের বৈধতা দেবো।

এদিকে স্থানীয় নারী/পুরুষ একাদিকরা বলেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাজে দীরগতি হওয়ায় সরকারের দেয়া ২০২৩সালে শেষ করতে পারবে কি না সন্দেহ রয়েছে। কাজেই সরকার এই প্রকল্পের কাজের সার্বিক দিক বিবেচনায় নিয়ে সম্পন্নের জন্য দাবী জানান। ফলে আমরা ক্ষক্ষিগ্রস্থ হবোনা আর সরকারের দেয়া কাজের সুফলতা পাবে। এছাড়াও তারা আরো বলেন,সঙ্গে জিও ব্যাগ ও অন্যান্য কাজের মানউন্নয়ের প্রতি দু দৃষ্টিসহ দ্রুত গতিতে কাজ সম্পর্নের জোর দাবী জানান।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মুন ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী মিজানুর রহমান বলেন, ওয়ার্ক অর্ডারের চেয়ে আরও ভালো মানের কাজ হচ্ছে। আমার সাইডের ব্লক বুয়েট পরীক্ষা করে স্বীকৃতি দিয়েছে। ওয়ার্ক অর্ডারের সময়ে কাচামালের মুল্য যে পরিমান ছিল বর্তমানে সেটি অনেক বেড়ে গেছে। তার পর