চলতি বছর খরা ও অনাবৃষ্টির কারণে ফসল আবাদ নিয়ে শঙ্কা থাকলেও মৌসুমের শেষ পর্যায়ে টানা বৃষ্টিতে বাগেরহাটে আমন ধান চাষে আশার আলো জাগিয়েছে।
কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, মৌসুমের শেষ পর্যায়ে কৃষকরা জমিতে ধানের চারা রোপণ করছে। পানির অভাবে দুই সপ্তাহ আগেও লক্ষ্যমাত্রার ৪০ শতাংশ জমি ফাঁকা পড়েছিল। প্রচণ্ড খরায় ধানের জমি ফেঁটে চৌচির হয়ে যায়। তবে গত ১০ সেপ্টেম্বর থেকে ১৫ সেপ্টেম্বর টানা ছয় দিনে বৃষ্টি হওয়ায় আমন রোপণের ব্যস্ততা বেড়ে যায়। ইতোমধ্যে জেলায় লক্ষ্যমাত্রার ৯৫ শতাংশ জমিতে ধান রোপণ শেষ হয়েছে।
সদর উপজেলার পুটিমারী এবং কচুয়া উপজেলার শিয়ালকাঠি গ্রামে সরজমিনে দেখা গেছে, প্রচণ্ড খরায় ফেঁটে চৌচির থাকা জমিতে পানির দেখা মিলেছে। আর ধান রোপণের জন্য প্রস্তুত করা শুকনা জমিতে ১২ থেকে ১৫ ইঞ্চি পানি জমে আছে। এই পানির অভাবে ধানের যেসব চারা শুকিয়ে হলুদ বর্ণ ধারণ করেছিল সেসব ধানের পাতা সবুজ বর্ণে রূপ নিয়েছে।
কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, ২০২১ সালে বাগেরহাটে মে থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত চার মাসে তিন হাজার ২৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রের্কড করা হয়। আর চলতি বছরের মে থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত দুই হাজার ৫৩৮ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। সেই হিসাবে ৪৮৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত কম হয়েছে। আর ১০ সেপ্টেম্বর থেকে ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১৬১ দশমিক ৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রের্কড করা হয়েছে। জেলায় এ বছর ৭৪ হাজার ৪২৫ হেক্টর জমিতে আমন ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। এ পর্যন্ত ৭০ হাজার ৭০৩ হেক্টর জমিতে ধান রোপণ করা হয়েছে। সেই হিসাবে লক্ষ্যমাত্রার ৯৫ শতাংশ জমি রোপণ করা হয়েছে। এ বছর দুই লাখ ৬৬ হাজার ৯৮০ মেট্রিক টন আমন ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। জেলায় দুই লাখ ৪৪ হাজার ৩২৮টি কৃষক পরিবার রয়েছে।
কচুয়া উপজেলার শিয়ালকাঠি গ্রামের কৃষক রুহুল আমিন জানান, বিগত বছরগুলোতে আগস্ট মাসের শেষ সপ্তাহের মধ্যে আমন ধান রোপণ কাজ শেষ করলেও এ বছর অনাবৃষ্টির কারণে সব জমিতে ধানের চারা রোপণ করতে পারেনি। এমনকি বীজপাতাও তুলতে পারছিল না। তার সাড়ে ৪ বিঘা জমির অধিকাংশই ফাঁক পড়েছিল। এ মাসের শেষে বৃষ্টির পানি পেয়ে তারা ফাঁকা জমিতে ধান রোপণ করছে।
একই গ্রামের কৃষক কামরুল হাসান জানান, প্রচণ্ড খরায় তাদের ধানের জমি ফেঁটে চৌচির হয়ে ছিল। এক জমিতে দুই-তিনবার ধানের চারা রোপণ করেও বাঁচাতে পারেনি। ফলনের আশা ছেড়ে দিয়ে ছিল। বৃষ্টির পানি তাদের জন্য আর্শীবাদ হয়ে এসেছে। আমন ধান রোপণের মৌসুম শেষ হলেও তারা এখনো রোপণ করছে ভালো ফলনের আশায়।
বাগেরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আজিজু রহমান জানান, পানির অভাবে মৌসুমের শেষ পর্যায়ে এসে জেলায় লক্ষ্যমাত্রার ৪০ শতাংশ জমি অনাবাদি পড়েছিল। রোপণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে না এবং ফলনে বিপর্যয় ঘটনার আশঙ্কা দেখা দিয়ে ছিল। কিন্তু টানা ছয়দিনের বৃষ্টিতে সেই শঙ্কা কেটে গেছে।
তিনি বলেন, কৃষকরা তাদের ফাঁকা জমিতে ধানের চারা রোপণ করেছে। ইতোমধ্যে লক্ষ্যমাত্রার ৯৫ শতাংশ জমিতে ধানের চারা রোপণ কাজ শেষ হয়েছে। আশা করি আমন ধান রোপণের সম্পূর্ণ লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে।
—-ইউএনবি
আরও পড়ুন
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি