নিজস্ব প্রতিবেদক :
রাজধানীর সড়কে যানজট সমস্যার স্থায়ী কোনো সমাধান নেই, প্রয়োজনের তুলনায় গণপরিবহনের সংখ্যা কম থাকায় সাধারণ মানুষের চলাচলে ভোগান্তি আরও বেশি। যানজটসহ চলাচলে নানা প্রতিবন্ধকতার শহর ঢাকায় যখন এ অবস্থা তখন কিছুটা স্বস্তির বার্তা দেয় রাইড শেয়ারিং প্রতিষ্ঠানগুলো। পাঁচ বছর আগে কর্মব্যস্ত শহরে নগরবাসীর যাতায়াত ব্যবস্থাকে নিরাপদ, স্বস্তিদায়ক করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বাজারে আসে অ্যাপভিত্তিক দেশের প্রথম রাইড শেয়ারিং কোম্পানি উবার। একে একে পাঠাও, ওভাইসহ একাধিক প্রতিষ্ঠান এসেছে। তবে অধরাই রয়ে গেছে যাত্রীদের আরামদায়ক যাতায়াতের স্বপ্ন। চালকদের যথেচ্ছাচার আর কোম্পানিগুলোর অব্যবস্থাপনায় জনপ্রিয়তা হারাতে শুরু করেছে রাইড শেয়ারিংয়ের পরিষেবাটি। অল্প সময়ের মধ্যেই রাইড শেয়ারিং ভোগান্তিতে পরিণত হয়েছে। অতিরিক্ত ভাড়া, ডিজিটাল পেমেন্টে রাজি না হওয়া ও যাত্রী হয়রানি ইস্যুতে চালক, যাত্রী ও প্রতিষ্ঠান একে অপরকে দুষছেন। এভাবেই যুব কর্মসংস্থানের সম্ভাবনাময় খাত রাইড শেয়ারিং বাংলাদেশে মুখ থুবড়ে পড়েছে। নানা সমস্যা আর অভিযোগে জর্জরিত খাতটি করোনা মহামারিতে আরও সমস্যায় পড়েছে। করোনার কারণে দীর্ঘদিন রাইড শেয়ারিং বন্ধ থাকায় টিকে থাকতে লড়াই করছে এ খাতের পরিষেবা প্রতিষ্ঠানগুলো। আয়ের একটি বড় অংশ কমিশন হিসেবে প্রতিষ্ঠানকে দিতে হয় বলে চালকরা অ্যাপ ব্যবহার করতে চান না। চুক্তিভিত্তিক ছাড়া যেতে চান না অধিকাংশ চালক। এ ছাড়া ডিজিটাল পেমেন্ট না নেওয়া, রাইড অর্ডার বাতিলসহ নানা অভিযোগ রয়েছে চালকদের বিরুদ্ধে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মেগাসিটিগুলোতে যানজট এড়াতে দ্রুত পরিবহন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা ও অলস পড়ে থাকা গাড়ি দিয়ে বাড়তি আয় করা রাইড শেয়ারিংয়ের উদ্দেশ্য। কিন্তু বাংলাদেশে লাখো বেকার যুবক রাইড শেয়ারিংকে বিকল্প কর্মসংস্থান হিসেবে নিয়েছেন। তবে সরকারের নজরদারি না থাকায় সম্ভাবনার এ খাতে চরম বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে। ঢাকা রাইড শেয়ারিং ড্রাইভার ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক বেলাল আহমেদ বলেন, একজন চালক দিনে ১৪ থেকে ১৬ ঘণ্টা কাজ করেন। দিনে সর্বোচ্চ এক হাজার ৫০০ থেকে এক হাজার ৮০০ টাকা পর্যন্ত আয় করতে পারেন। কিন্তু এর মধ্যে অর্ধেকের বেশি টাকা জ¦ালানি ও রক্ষণাবেক্ষণে চলে যায়। অ্যাপভিত্তিক প্ল্যাটফর্মগুলো ১৫ থেকে ২৫ শতাংশ কমিশন নেয়। তিনি বলেন, বিনা অজুহাতে অ্যাপ বন্ধ করে দেওয়া হয়। মাস শেষে ধারদেনা করে গাড়ির কাজ (সার্ভিসিং) করতে হয়। বছর শেষে তুলতে হচ্ছে লোন। এতে আমরা দিন দিন দেউলিয়া হচ্ছি। ব্যাংক হয়ে চালকদের পকেটে ঢাকা আসতে দেরি ও কোম্পানিগুলোর ভাড়া অনিয়মের কারণে অনেক চালক বাধ্য হয়ে খ্যাপ বা চুক্তিভিত্তিক গাড়ি চালান বলে অভিযোগ তার। চালকদের সামাজিক স্বীকৃতি প্রদান, কমিশন ১৫ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনা ও পুলিশি হয়রানির অভিযোগ তুলে এরইমধ্যে একবার কর্মবিরতি পালন করেছেন সংগঠনটির সদস্যরা। এদিকে, গত ২৮ অক্টোবর বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) জানিয়েছে, অ্যাপসে রাইড শেয়ারিং না করে চুক্তিভিত্তিক যাত্রী পরিবহন করলে সংশ্লিষ্ট চালক ও যাত্রীর বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ বিষয়ে বেলাল আহমেদ বলেন, আমরাও অ্যাপে গাড়ি চালাতে চাই। তবে সেক্ষেত্রে কোম্পানিগুলোকে কমিশন কমাতে হবে। করোনার ধাক্কা ও চুক্তিভিত্তিক চালানোর প্রবণতায় অ্যাপ ব্যবহার আশঙ্কাজনক হারে কমেছে বলে জানিয়েছেন কোম্পানি সংশ্লিষ্টরা। অ্যাপভিত্তিক রাইড শেয়ারিং প্রতিষ্ঠান ডিজিটাল রাইডের অপারেশন ম্যানেজার শহীদুল ইসলাম বলেন, এখন অল্প করে রাইড হচ্ছে। করোনাকালীন অনেক পিছিয়েছে রাইড শেয়ারিং। নিরাপত্তার কথা না ভেবে যাত্রী, চালকরা খ্যাপে ঝুঁকে গেছেন। অনেক প্রতিষ্ঠান ২৫ শতাংশ কমিশন নেওয়ায় চালকরা খ্যাপে অভ্যস্ত হয়ে গেছেন। তিনি বলেন, করোনাকালে সব যখন বন্ধ ছিল তখন চালকরা রুটি-রুজির জন্য মোড়ে মোড়ে দাঁড়িয়ে খ্যাপ দিয়েছেন। বিআরটিএ এটা নিষিদ্ধ করে আইনও করেছে। কিন্তু ২৫ শতাংশ থেকে অব্যাহতি পাওয়ার জন্য তারা খ্যাপে যাচ্ছেন। শহীদুল ইসলাম আরও বলেন, আমরা ১৫ শতাংশ কমিশন নিচ্ছি, তবে চালকদের অনেক অফার দিচ্ছি। এভাবে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকছি। চালকরা কার থেকে বেশি সুবিধা নিতে পারবেন সেই ধরনের প্রতিযোগিতা করছেন। গ্রাহকরা অভিযোগ করছেন যে চালকরা ডিজিটাল পেমেন্টে নিতে চাচ্ছেন না। আমরা সবার সঙ্গে কথা বলে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছি। ট্রাফিক পুলিশের এক হিসাবে দেখা গেছে, রাজধানীতে রাইড শেয়ারিং করে মোটরসাইকেল চালাচ্ছেন চার লাখেরও বেশি চালক। ২০১৬ সালের শেষে যাত্রা শুরু করে বাংলাদেশের রাইড শেয়ারিং কোম্পানি পাঠাও। একই সময় যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান উবার বাংলাদেশে তাদের কার্যক্রম শুরু করে। বর্তমানে এ দুটো কোম্পানি সিংহভাগ বাজার দখল করে রেখেছে। এ ছাড়া ওভাই, পিকমি, ডিজিটাল রাইড, সহজসহ ১০টির মতো রাইড শেয়ারিং প্রতিষ্ঠান আছে বাংলাদেশে। যোগাযোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মূলত সংশ্লিষ্টদের অক্ষমতার জন্য রাইড শেয়ারিংয়ের মতো পরীক্ষিত খাত এলোমেলো হয়ে পড়েছে। এটা এখন না রাইড শেয়ার না চুক্তিভিত্তিক, অগোছালো জিনিস হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় এ খাতে বিশৃঙ্খলা আর অরাজকতা ভর করেছে। বাংলাদেশে রাইড শেয়ারিং বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান করেছে। এটাকে প্রকৃতপক্ষে রাইড শেয়ার বলা যায় না। রাইড শেয়ারিং এখানে বাণিজ্যিক রূপ পেয়েছে। এখানে স্পষ্ট বাণিজ্যিক নীতিমালা প্রয়োজন ও হয়রানি থেকে যাত্রীদের মুক্তি দিতে গাইডলাইন করা প্রয়োজন বলে মনে করেন তারা।
আরও পড়ুন
বাংলাদেশে চিংড়ির রফতানি পরিমাণ কমছে ধারাবাহিকভাবে
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর দাবিতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের সামনে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ