নিজস্ব প্রতিবেদক:
পদ্মা সেতু নির্মাণের পর ঢাকা থেকে নৌপথে যাত্রী ও নৌযানের সংখ্যা কমে এসেছে। কিন্তু তারপরও ঢাকার পোস্তগোলায় বিপুল ব্যয়ে নতুন একটি লঞ্চ টার্মিনাল নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। যুক্তি হচ্ছে- ঢাকার সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালের ভিড় কমাতে এবং যাত্রীসেবা বাড়াতেই নতুন টার্মিনাল নির্মাণ করা হচ্ছে। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে প্রায় ৩ হাজার ৪০০ কোটি টাকা ব্যয়ে এক প্রকল্পের অধীনে সদরঘাট থেকে এক কিলোমিটার দূরে পোস্তগোলার শ্মশানঘাটে নতুন লঞ্চ টার্মিনাল বানানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, রাজধানীর পোস্তগোলায় বুড়িগঙ্গা নদীতে নতুন লঞ্চ টার্মিনালটি যাত্রীবাহী এবং বর্তমান সদরঘাটটি পণ্যবাহী টার্মিনাল হিসেবে ব্যবহার করা হবে। কিন্তু নৌ বিশেষজ্ঞদের মতে, ঘাট পর্যন্ত নির্বিঘেœ যাত্রীদের পৌঁছার মতো অবকাঠামো নির্মাণ না হলে শুধু টার্মিনাল নির্মাণ করা হলে তা কোনো কাজে আসবে না। তাছাড়া সদরঘাটের পাশাপাশি দেশের গুরুত্বপূর্ণ চাঁদপুর, বরিশাল ও নারায়ণগঞ্জ নদীবন্দরের অবকাঠামোও বড় করা হবে। কারণ ক্রমবর্ধমান চাহিদা ও যাত্রী চাপে ওই চার বন্দরের বিদ্যমান অবকাঠামো অপ্রতুল। বিশেষ করে এসব বন্দর এলাকা অত্যন্ত ঘনবসতি ও যানজটে পূর্ণ। ফলে যাত্রীসেবা বাড়ানোর লক্ষ্যে চার নদীবন্দরের অবকাঠামো বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিআইডব্লিউটিএ।
সূত্র জানায়, প্রকল্প অনুযায়ী ঢাকা নদীবন্দরের যাত্রী চাপ কমাতে বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে শ্মশানঘাটে একটি নতুন যাত্রী টার্মিনাল নির্মাণ করে সদরঘাটের যাত্রী পরিষেবা বাড়ানোর পরিকল্পনা নেয়া হচ্ছে। নতুন টার্মিনালে থাকবে আধুনিক সব সুবিধা। এ টার্মিনালসহ বাকি তিনটি এবং অন্যান্য টার্মিনাল নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৩৪৯ কোটি ৪২ লাখ টাকা। এর মধ্যে বিশ্বব্যাংক দেবে ৩ হাজার ৫২ কোটি ৮০ লাখ টাকা। বাকি ২৯৬ কোটি টাকা দেবে বাংলাদেশ সরকার। বিআইডব্লিউটিএ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। বিগত ২০১৬ সালে প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়। এদিকে গত বছর পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর বাস্তবতা পুরোপুরি বদলে গেছে। বর্তমানে সদরঘাটে যাত্রী চাপ নেই। চাঁদপুর-ভোলার লঞ্চগুলোয় কিছু যাত্রী থাকলেও বরিশালের যাত্রী একেবারেই কমে গেছে।
পদ্মা সেতু চালুর আগে প্রতিদিন রাত ৮টা থেকে ১২টা পর্যন্ত অন্তত ২৫-৩০টি লঞ্চ দক্ষিণাঞ্চলের উদ্দেশে ছেড়ে যেত। সেখানে পদ্মা সেতুর প্রভাবে যাত্রী এতোই কমেছে যে বর্তমানে বরিশালের উদ্দেশে দৈনিক মাত্র চারটি লঞ্চ ছেড়ে যাচ্ছে। ফলে অনেক লঞ্চ বন্ধ করার পাশাপাশি অনেকগুলো নৌ-রুটও বন্ধ করে দিয়েছে বিআইডব্লিউটিএ। এমনকি লঞ্চ মালিকরা লঞ্চ কেটে স্ক্র্যাপ আকারে বিক্রিও করে দিচ্ছেন। অন্যদিকে বাংলাদেশ লঞ্চ মালিক সমিতির সভাপতি মাহবুব উদ্দিন আহমেদ জানান, বর্তমানে যে জাহাজগুলো আছে সেগুলোর জন্য সদরঘাটে পর্যাপ্ত পন্টুন নেই। তাছাড়া নতুন লঞ্চঘাটে যদি আধুনিক যাত্রীসেবা দেয়া যায় তাহলে পর্যটনের নতুন দুয়ার খুলবে। যাদের তাড়া নেই তারা আয়েশ করে লঞ্চে যাবে। অসুস্থ-বৃদ্ধরাও লঞ্চে যাতায়াত করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। সে হিসেবে যাত্রী ও লঞ্চ দুটোই বাড়তে পারে।
এ প্রসঙ্গে প্রকল্প পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মো. আইয়ুব আলী জানান, প্রকল্পটি যখন নেয়া হয়েছিল তখন একরকম বাস্তবতা ছিল। এখন আরেক বাস্তবতার মুখোমুখি। পোস্তগোলায় নতুন লঞ্চ টার্মিনাল নির্মাণের বিষয়টি এখনো বিবেচনার সুযোগ আছে। চলতি মাস শেষ হলে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানানো যাবে। তবে পরিকল্পনা হলো বর্তমান সদরঘাটটি পণ্যবাহী এবং নতুন টার্মিনালটি যাত্রীবাহী হিসেবে ব্যবহার করা হবে। যদিও বরিশালের যাত্রী ও লঞ্চ দুটোই কমেছে, কিন্তু চাঁদপুর-ভোলাসহ কয়েকটি রুটে এখনো চাহিদা রয়েছে।
আরও পড়ুন
বাংলাদেশে চিংড়ির রফতানি পরিমাণ কমছে ধারাবাহিকভাবে
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক