December 6, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Monday, February 20th, 2023, 8:55 pm

যুদ্ধ শুরুর পর প্রথম ইউক্রেন সফরে বাইডেন

অনলাইন ডেস্ক :

ইউক্রেনে রাশিয়ার অভিযানের এক বছর পূর্ণ হতে চলেছে কয়েক দিন বাদেই। তার আগে হঠাৎ করে সোমবার (২০ ফেব্রুয়ারি) কিয়েভ সফরে গেলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। সেখানে তিনি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে দেখা করেছেন। প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, যুদ্ধ যতদিন ধরেই চলুক না কেন ইউক্রেনের পাশে থাকবে ওয়াশিংটন। বাইডেন আরও বলেন, “পুতিন (রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট) প্রায় ১ বছর আগে যখন তার আগ্রাসন শুরু করেছিলেন, তখন তিনি ভেবেছিলেন ইউক্রেইন দুর্বল। আর পশ্চিমারা বিভক্ত। তিনি ভেবেছিলেন তিনি আমাদেরকে উৎরে যেতে পারবেন। কিন্তু তিনি ভুল করেছিলেন।” রাশিয়ার আগ্রাসন সাহসের সঙ্গে প্রতিরোধ করে যাওয়ার জন্য ইউক্রেইনীয়দের প্রশংসা করেছেন বাইডেন। তিনি বলেন, “ইউক্রেইনকে যে মূল্য দিতে হয়েছে তা খুবই চড়া। এ পর্যন্ত ত্যাগ স্বীকারও করতে হয়েছে অনেক। আমরা জানি আগামী সপ্তাহ, বছরগুলোতে কঠিন দিন সামনে আছে।” মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় জেলেনস্কি বলেন, ‘ইউক্রেনবাসীর সমর্থনে আপনার (বাইডেন) এই সফর খুবই গুরত্বপূর্ণ একটি বার্তা।’ টেলিগ্রামে এক পোস্টে বাইডেনের সঙ্গে হাত মেলানোর ছবি প্রকাশ করেছেন জেলেনস্কি। সেখানে তিনি লেখেন, “জোসেফ বাইডেন, কিইভে আপনাকে স্বাগতম! আপনার এই সফর সব ইউক্রেইনীয়র জন্য সমর্থনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রতীক।” বাইডেন কিয়েভে পৌঁছানোর পর শহরটিজুড়ে বেজে ওঠে সাইরেন। তবে এ সময় সেখানে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলার কোনো খবর পাওয়া যায়নি। দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, ইউক্রেইনে বাইডেন এই গোপন সফরে গেছেন পোল্যান্ডের সীমান্ত থেকে ট্রেনে করে। গত শনিবার রাতে বাইডেন একটি রেস্তোঁরায় স্ত্রী জিলের সঙ্গে রাতের খাবার খাওয়ার পর বিনা নোটিশেই ওয়াশিংটন ছাড়েন। পূর্ব ইউরোপে বাইডেন তার নির্ধারিত সফরে থাকার সময় ইউক্রেইনে যাবেন- কর্মকর্তারা সেকথা আগে থেকে জানাননি। বরং গত রোববার রাতে হোয়াইট হাউজ গতকাল সোমবারের একটি সরকারি শিডিউল প্রকাশ করে জানায়, প্রেসিডেন্ট এখনও ওয়াশিংটনে আছেন এবং সন্ধ্যায় তিনি ওয়ারশ’ যাচ্ছেন। অথচ বাইডেন ততক্ষণে অনেকটা পথ পাড়ি দিয়ে ফেলেছেন। এদিকে হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, রাশিয়ার ওপর আরও নিষেধাজ্ঞা দেবেন বাইডেন। এ ছাড়া ইউক্রেনকে কামানের গোলা ও রাডারসহ নানা সমরাস্ত্র সরবরাহ করবে। অস্ত্র নিয়ে কথা বলেছেন জেলেনস্কিও। তাঁর ভাষ্যমতে, বাইডেনের সঙ্গে দূরপাল্লার অস্ত্রের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে তাঁর। বাইডেন এমন সময়ে কিয়েভ সফর করলেন, যখন একদিন বাদেই রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেওয়ার কথা রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, ওই ভাষণে তিনি যুদ্ধের দ্বিতীয় বছরে রাশিয়ার লক্ষ্যগুলো তুলে ধরবেন। গত বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে অভিযান শুরু করেছিল মস্কো। গত কয়েক সপ্তাহে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে বিচ্ছিন্ন কিছু সফলতা পেয়েছে রুশ বাহিনী। তবে কিয়েভ ও তাদের পশ্চিমা মিত্ররা এটিকে দেখছে ভিন্ন দৃষ্টিতে। তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, যুদ্ধের বর্ষপূর্তিতে পুতিন যে ইউক্রেনে জয় পাচ্ছেন তা দেখাতেই মরিয়া হয়ে এ অঞ্চলে লড়াই করছেন রুশ সেনারা। এদিকে যুদ্ধের বর্ষপূতি ঘিরে কূটনৈতিক তৎপরতাও বাড়িয়েছে মস্কো। এর অংশ হিসেবে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই মস্কো সফরে যাচ্ছেন। যদিও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ঘিরে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিরপেক্ষ অবস্থান ধরে রেখেছে বেইজিং। তবে যুদ্ধের কয়েক সপ্তাহ আগেই দুই দেশের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। সে সময় দুই দেশের শীর্ষ নেতারা বলেন, রাশিয়ার ওই ইউক্রেরের মধ্যে বন্ধুত্বের কোনো ‘সীমা নেই’। এরই মধ্যে দিন কয়েক আগে উদ্বেগ প্রকাশ করে ওয়াশিংটন বলেছে, মস্কোকে অস্ত্র সরবরাহ করতে পারে বেইজিং। আর চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওয়াং ওয়েবিন হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, চীনের কাছে কোনো কিছু দাবি করার অবস্থানে যুক্তরাষ্ট্র নেই। আর রাশিয়ার সঙ্গে তাঁদের ‘সহযোগিতামূলক অংশীদারত্ব’ স্বাধীন দুটি দেশের নিজেদের বিষয়। ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চল দনবাসের পুরো নিয়ন্ত্রণ নিতে চাইছে ক্রেমলিন। এ অঞ্চলের উত্তরে ক্রেমিনা থেকে দক্ষিণে ভুহলেদার পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে হামলা চালিয়েছে তারা। কিছুকিছু এলাকায় সফলও হয়েছে। বলা যেতে পারে খনির শহর বাখমুতের আশপাশের এলাকাগুলো রুশ সেনাদের দখলে নেওয়ার কথাই। তবে সামনের দিনগুলো নিয়ে আশাবাদী ইউক্রেন। আগামী কয়েক মাসের মধ্যে পশ্চিমাদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ সমরাস্ত্র পেতে যাচ্ছে দেশটি। ফলে ইউক্রেন এখন পাল্টা হামলা চালানোর পরিকল্পনা করছে। উদ্দেশ রাশিয়ার বাহিনীকে চূড়ান্ত পরাজয় মেনে নিতে বাধ্য করা। এক ভিডিও বার্তায় ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট বলছিলেন, ‘পরিস্থিতি খুবই জটিল। আমরা লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি। আমরা অনুপ্রবেশকারীদের (রুশ বাহিনী) কোমর ভেঙে দিচ্ছি। একই সঙ্গে রাশিয়াকে উল্লেখযোগ্য ক্ষতি মুখে ফেলছি।’ জেলেনস্কি বলেন, ‘দনবাসে, ভুহলেদার, মারিনকা, ক্রেমিনায় রাশিয়া যত ক্ষতির মুখে পড়বে, তত দ্রুত আমরা ইউক্রেনের জয়ের মধ্য দিয়ে এই যুদ্ধ শেষ করতে পারব।’ ইউক্রেইন সফর শেষে বাইডেনের পোল্যান্ডে তিনদিনের সফর শুরু করার কথা রয়েছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।