October 5, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Friday, May 26th, 2023, 9:15 pm

যে কারণে বদলে গেছে শাহিন আফ্রিদির ব্যাটিং

অনলাইন ডেস্ক :

গতি, সুইং এবং আরও সব স্কিল মিলিয়ে বল হাতে শাহিন শাহ আফ্রিদি বরাবরই আগুনে। ইদানীং তিনি চমকে দিচ্ছেন ব্যাটিংয়ে। ২২ গজে ব্যাট হাতে জ¦লে উঠছেন প্রায়ই! তার এই নতুন রূপ জন্ম দিচ্ছে অনেক কৌতূহলের। শহিদ আফ্রিদির মতো বিধ্বংসী একজন যখন তার নিকটাত্মীয়, ব্যাটিংয়ের উন্নতিতে সংযোগ খোঁজাটা অবধারিতই। শাহিন নিজেও জানালেন, শ্বশুরের সংস্পর্শেই বদলে গেছে তার ব্যাটিং। ক্যারিয়ার শুরুর পর অনেকটা সময় ব্যাট হাতে একদমই আনকোরা ছিলেন শাহিন। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে সেই তিনিই দেখাচ্ছেন অন্য ঝলক। একটি-দুটি বাউন্ডারি বা হুট করে এক-দুই দিন ভালো খেলা নয়, তার ব্যাটিংয়ে উন্নতির ছাপ স্পষ্ট।

গত পাকিস্তান সুপার লিগ (পিএসএল) থেকেই মূলত অগ্রগতি বোঝা যাচ্ছে। এমনিতে ১০-১১ নম্বরে ব্যাট করলেও এক ম্যাচে দলের বিপর্যয়ের মধ্যে ছয় নম্বরে উঠে এসে ৫ ছক্কায় করেন ৩৬ বলে ৫২। স্বীকৃত ক্রিকেট ক্যারিয়ারে তার প্রথম ফিফটি সেটি। আগে কখনও ৩০ রানও ছুঁতে পারেননি কোনো সংস্করণে। সেই ব্যাটিং যে ¯্রফে আচমকা হয়ে যায়নি, তা প্রমাণ করে দেন পিএসএলের ফাইনালে। এবার সাতে নেমে ৫ ছক্কায় খেলেন ১৫ বলে অপরাজিত ৪৪ রানের ইনিংস। দলকে দুইশ রানে নিয়ে যান মূলত তিনিই। পরে ৪ উইকেট নিয়ে দলের ১ রানের রোমাঞ্চকর জয়ে তিনিই হন ম্যান অব দা ম্যাচ। এবারের পিএসএলে তার স্ট্রাইক রেট ছিল ১৬৮.৩৫। পিএসএলের পরপর জাতীয় দলের হয়ে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে এক ম্যাচে ৩ ছক্কায় করেন ৭ বলে ২৩। ব্যাট হাতে তার এমন বিধ্বংসী চেহারা তো মনে করিয়ে দেয় শহিদ আফ্রিদিকেই! গত ফেব্রুয়ারিতে পাকিস্তান ক্রিকেটের এই কিংবদন্তির মেয়ের সঙ্গে বিয়ে হয় শাহিনের। পারিবারিক সম্পর্ক আরও আগে থেকেই।

ইএসপিএনক্রিকইনফোকে শাহিন জানালেন, ব্যাটিং নিয়ে শ্বশুরের সঙ্গে কাজ করার সুফল পাচ্ছেন তিনি। “হ্যাঁ, তার সঙ্গে কাজ করার প্রভাব তো আছেই। আমি ও লালা (শহিদ আফ্রিদি) শট অনুশীলন করেছি অনেক, কীভাবে শেষের ওভারগুলোয় বড় শট খেলতে হয়। আমার ব্যাট সুইং নিয়েও খানিকটা কাজ করেছি। টি-টোয়েন্টিতে তার যে অভিজ্ঞতা, এতটা আর কারও নেই। তার সঙ্গে কাজ করতে পারার অভিজ্ঞতা ছিল দারুণ। অনেক শিখেছি আমি।” “আমার কাছে এখনও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আমার বোলিং। তবে বোলিং যদি কোনোদিন ভালো না হয়, ব্যাট হাতেও অবদান রাখতে চাই। ব্যাটিংয়ে না পারলে অন্তত ফিল্ডিংয়ে।” গত বছরের অনেকটা সময় চোটের কারণে মাঠের বাইরে থাকতে হয়েছে শাহিনকে। হাঁটুর লিগামেন্টের চোটে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে তার খেলা ছিল শঙ্কায়। অনেক দিন মাঠের বাইরে থাকার পর ইংল্যান্ডে পুনবার্সন করে অবশেষে বিশ্বকাপ খেলতে পারেন। তবে বিশ্বকাপ ফাইনালে আবার চোট পেয়ে ছিটকে পড়েন লম্বা সময়ের জন্য।

শাহিন জানালেন, চোটের ওই সময়টাই কাজে লাগিয়েছেন তিনি ব্যাটিংয়ের উন্নতির জন্য। “ব্যাটিং আমার সবসময়ই ভালো লাগত, সেই অনূর্ধ্ব-১৬ ক্রিকেটের দিনগুলি থেকেই। এবার যখন চোটে পড়লাম, তখন ব্যাটিং নিয়ে কাজ শুরু করলাম, কারণ বোলিং করতে পারছিলাম না। পুনবার্সনের জন্য যখন ইংল্যান্ডে এলাম, তখন ব্যাটিং নিয়ে অনেক খেটেছি।” ব্যাটিংয়ে উন্নতি হলেও শাহিনের বোলিংয়ের একটি ঘাটতি সাম্প্রতিক সময়ে ছিল চোখে পড়ার মতো। চোট কাটিয়ে ফেরার পর তার সেই আগের ভয়ঙ্কর গতি নেই! সাধারণত ১৪৫ কিলোমিটারে আশপাশে গতিতে বোলিং করেন যিনি, চোট থেকে ফেরার পর গত কিছুদিনে পিএসএল ও নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজে সেখানে তার গতি দেখা গেছে ১৩৫ কিলোমিটারের আশেপাশে। গতি কমে যাওয়ায় কমেছে তার ধারও। শাহিন অবশ্য এখানে দুর্ভাবনার কিছু দেখছেন না।

“গতি নিয়ে সবারই কিছু না কিছু বলার আছে, তবে আমি নিজে ভালো অনুভব করছি। দেখুন, কেউ যদি ১১০ কিলোমিটার গতিতে বোলিং করেও উইকেট নিতে থাকে, তাহলে অনুভূতি ভালোই থাকে। আমি তো উইকেট নিয়েছি। মাঠে শতভাগ দিয়েছি, এটিই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। গতি এখানে বড় ব্যাপার নয়। গতি যদি কমে যায়, সময়ের সঙ্গে আবার বাড়বে।” উইকেট অবশ্য কিছু পাচ্ছেন শাহিন, তবে নিজের সেরা চেহারায় নেই নিশ্চিতভাবেই। পিএসএলে ১২ ম্যাচে ১৯ উইকেট নিলেও রান দিয়েছেন ওভারপ্রতি ৯.১৩। পরে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে ৫ ম্যাচে ৬ উইকেট তার ওভারপ্রতি ৮.৭২ রান দিয়ে। ওয়ানডে সিরিজে অবশ্য ৪ ম্যাচে ৮ উইকেট নিতে পেরেছেন ওভারপ্রতি ৫.৬৮ রান দিয়ে। শাহিনের মতে, দুই দফা চোটের থাবাতেই ছন্দে ফিরতে সময় লাগছে তার। তবে সামনেই আপন রূপে ফেরার আশ্বাস দিলেন ২৩ বছর বয়সী বাঁহাতি পেসার। “টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে দুই মাস ধরে চোটের কারণে বাইরে ছিলাম। বিশ্বকাপের পর আবার দুই-তিন মাস বাইরে ছিলাম। পুরোপুরি ফিরতে সময় লাগে। সেই প্রাণশক্তি ও ফিটনেস ফিরে পাওয়া যায় কেবল ম্যাচ খেলতে থাকলেই।”

“পিএসএল থেকে আমি ভালো অনুভব করছি। ওই টুর্নামেন্টে সময় যত গড়িয়েছে, আরও ভালো হয়ে উঠেছি। পরে পাকিস্তানের হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও ফিরেছি। হাঁটু এখন শতভাগ ঠিক। সময়ের সঙ্গে উন্নতি হবে। যত খেলব, তত ভালো হয়ে উঠব।” শাহিন আপাতত আছেন ইংল্যান্ডে। সেখানে টি-টোয়েন্টি ব্লাস্টে তিনি খেলবেন নটিংহ্যামশায়ারের হয়ে।