November 5, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Tuesday, December 19th, 2023, 9:56 pm

রপ্তানি ক্ষেত্রে বড় সম্ভাবনা হতে পারে লৌহ ও ইস্পাত শিল্প

ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

বাংলাদেশের লৌহ ও ইস্পাত শিল্প এখন দেশীয় বাজারে সীমাবদ্ধ নেই। এ শিল্প এখন বিশ্ব বাজার সৃষ্টি করেছে। আগামীতে এ শিল্প সারাবিশ্বে দারুণভাবে প্রভাব ফেলবে। তবে তার জন্য প্রয়োজন এ খাতের ব্যাপক উন্নতি ও বাজার সম্প্রসারণ। ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তারা বলছেন, স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশে উৎপাদিত স্টিল বা লৌহ ও লৌহজাত পণ্য বিদেশেও রপ্তানির সম্ভাবনা রয়েছে। তাদের হিসেবে, সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা পেলে স্টিল বা ইস্পাত পণ্য রপ্তানি করে বার্ষিক ১০ থেকে ১৫ বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সুযোগ রয়েছে।

সংশ্লিষ্টদের মতে, উচ্চবিনিয়োগের ব্যয়বহুল একটি শিল্প হলো ইস্পাত খাত। একটা দেশের উন্নয়ন বিবেচনা করা হয় সে দেশের মাথাপিছু ইস্পাত ব্যবহার কত সেটা গণনা করে। বাংলাদেশে বর্তমানে মাথাপিছু স্টিল ব্যবহারের গড় হিসাব করা হয় ৪৫ কেজি। অর্থনীতি বড় হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে বিশেষ করে সরকারিভাবে অবকাঠামোগত যে উন্নয়ন হচ্ছে, তাতে ধারণা করা হচ্ছে দ্রুতই এ চাহিদা বেড়ে ১০০ কেজি ছাড়িয়ে যাবে। দেশে মূলত লৌহ শিল্পের প্রবৃদ্ধি ঘটছে ১৯৯০ সালের পর থেকে। নব্বই দশকে খাতটিতে একে একে বিনিয়োগে এগিয়ে আসেন উদ্যোক্তারা। তখন রডের কাঁচামাল সহজলভ্য করে জাহাজ ভাঙার পুরনো লোহা।

শুরুর তিন দশক সনাতন পদ্ধতিতে থাকলেও পণ্যে বৈচিত্র্য আর উৎপাদনে রূপান্তর ঘটিয়ে মূলত ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগের ওপর ভর করে বড় হচ্ছে দেশের ইস্পাত খাত। দেশের শীর্ষ পর্যায়ের উদ্যোক্তারা বলছেন, ইস্পাতের ভবিষ্যৎ চাহিদার কথা মাথায় রেখে আগে থেকেই বাড়িয়ে রাখা হচ্ছে উৎপাদনক্ষমতা। উৎপাদনের তালিকায় একের পর এক যুক্ত হচ্ছে নতুন ও উচ্চশক্তির বিশেষায়িত রড। এজন্য অবশ্য নিত্যনতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখিও হতে হচ্ছে তাদের।

করোনা মহামারীতে কারখানাগুলো দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় গুনতে হয়েছে বড় অংকের লোকসান। কর্মীদের বেতন পরিশোধে এমনকি ব্যবসা চালু রাখা নিয়েই দুশ্চিন্তা তৈরি হয় উদ্যোক্তাদের। আবার কারখানা চালু রাখলেও অতিমারীতে সম্প্রতি তাদের সবচেয়ে বেশি ভুগিয়েছে বিশ্ববাজারে মেল্টিং স্ক্র্যাপের দুষ্প্রাপ্যতা। যদিও বিপর্যয় কাটিয়ে এখন ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে দেশের ভারী এ শিল্প খাত।

ইস্পাতপণ্য প্রস্তুতকারক সমিতি ও উদ্যোক্তাদের তথ্য অনুযায়ী, ১০ বছর আগেও দেশে বছরে সম্মিলিতভাবে এমএস রড উৎপাদন হতো ২৫ লাখ টন। বর্তমানে চাহিদা অনুযায়ী বছরে গড়ে উৎপাদন ও বাজারজাত হচ্ছে প্রায় ৬০ লাখ টন। যদিও বর্তমানে জিপিএইচসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের কারখানা সম্প্রসারণ পদক্ষেপে ইস্পাতের (রড) সম্মিলিত উৎপাদন সক্ষমতা এখন ৯০ লাখ টনে উন্নীত হয়েছে। কারখানার সক্ষমতা যে গতিতে সম্প্রসারণ করা হচ্ছে তাতে আগামী দুই বছরে অর্থাৎ ২০২৩ সালে এক কোটি টনে উন্নীত হবে। আর তখন এমএস রড উৎপাদন বছরে গড়ে ৭০ লাখ টন ছাড়াবে। এ খাতে উদ্যোক্তাদের মোট বিনিয়োগের পরিমাণ প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা। বর্তমানে প্রায় তিন লাখ মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত।

গত কয়েক বছর সরকারি খাতে মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন, অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা, বিদ্যুৎকেন্দ্র ছাড়াও প্রবাসী আয়ে গ্রামে পাকা ঘর নির্মাণ বাড়তে থাকাই ইস্পাত খাতের প্রবৃদ্ধির মূল কারণ। এরই পরেপ্রেক্ষিতে আধুনিক প্রযুক্তি আর কারখানা সম্প্রসারণ করে উৎপাদন বাড়ানোয় মনোযোগ উদ্যোক্তাদের। এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, ইস্পাত বা লৌহ ও লৌহজাত পণ্য রপ্তানিতে বাংলাদেশের উদ্যোক্তাদের কী চ্যালেঞ্জ রয়েছে সেটি খুঁজে বের করতে হবে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় এবং করণীয় নির্ধারণে- এ খাতের উদ্যোক্তাদের সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা তৈরি করতে হবে।

বেসরকারি খাতের অভিভাবক হিসেবে এফবিসিসিআই তাদের সেসব প্রস্তাব নিয়ে নীতিনির্ধারকদের সাথে কথা বলবে। রপ্তানি পণ্য বহুমুখীকরণে লৌহ ও লৌহজাত পণ্য বড় ভূমিকা রাখতে পারে বলেও জানান এফবিসিসিআই সভাপতি। বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক মানের লৌহ ও লৌহজাত পণ্য তৈরি হচ্ছে, প্রযুক্তি উন্নত- এমন দাবি বাংলাদেশ স্টিল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলমের। তিনি বলেন, স্থানীয় কারখানাগুলোর উৎপাদন সক্ষমতার তুলনায় দেশের ইস্পাতের চাহিদা প্রায় ৫০ শতাংশ কম। উদ্বৃত্ত সক্ষমতার (ওভার ক্যাপাসিটি) ইস্পাত যদি আফ্রিকাসহ কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোতে রপ্তানি করা যায় তাহলে এই খাত থেকে প্রতি বছর ১০ থেকে ১৫ বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, যুক্তরাজ্য সহ কমনওয়েলথের সদস্য দেশসমূহে বাংলাদেশের ইস্পাত সহ অন্যান্য রপ্তানি পণ্যের বড় সম্ভাবনা রয়েছে। এজন্য লৌহ ও লৌহজাত পণ্যকে রপ্তানিমুখী শিল্পে রূপান্তরের জন্য সরকারের বিশেষ পৃষ্ঠপোষকতা চান ব্যবসায়ীরা। এরমধ্যে রয়েছে, রপ্তানিমুখী শিল্প হিসেবে লৌহ ও লৌহজাত পণ্যের কাঁচামাল আমদানিতে বিশেষ শুল্ক সুবিধা, আংশিক বন্ড সুবিধা, নগদ সহায়তাসহ রপ্তানির অন্যান্য সহযোগিতা, রপ্তানিমুখী ইস্পাত কারখানায় জ্বালানি মূল্যে সুযোগ-সুবিধা, সরবরাহ ব্যবস্থা উন্নতকরণ সহ অন্যান্য নীতি সহায়তা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নির্মাণসামগ্রীর মধ্যে ইস্পাত সবচেয়ে বড় খাত। এ খাতে বাজারের আকার ৫০ হাজার কোটি টাকার মতো হবে। সরকারি খাতে অসংখ্য বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। ২০৩০ সাল পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে বাড়বে। ইস্পাতপণ্যে সর্বোচ্চ মান নিশ্চিত করতে হলে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের বিকল্প নেই। এজন্যই বিনিয়োগ বেশি হলেও কোম্পানিগুলো সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে এগিয়ে এসেছে। আকরিক লোহা, কয়লা, চুনাপাথর ও সামান্য পরিমাণ পুরনো লোহার টুকরো কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করা হয় মৌলিক কারখানায়। বাংলাদেশ একটা পর্যায়ে মৌলিক ইস্পাত শিল্পের দিকে ধাবিত হবে, এমনটাই প্রত্যাশা তাদের।