নিজস্ব প্রতিবেদক:
রাজধানীর পল্লবী এলাকা থেকে ১ কোটি ২০ লাখ টাকা মূল্যমানের জাল নোটসহ প্রতারক চক্রের অন্যতম হোতা মো. ছগির হোসেন (৪৭) এবং তার দুই সহযোগীকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-৪। গত সোমবার দিবাগত রাতে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে জাল নোট তৈরির সরঞ্জামাদি উদ্ধার করা হয়েছে। র্যাবের মুখপাত্র খন্দকার আল মঈন এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের কাছ থেকে জাল নোট তৈরির মেশিন, কালি এবং এক কোটি টাকার বেশি মূল্যমানের জাল নোট উদ্ধার করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে পল্লবী থানায় মামলা হয়েছে বলে জানান আল মঈন। মঙ্গলবার (৪ঠা জানুয়ারী) রাজধানীর কারওয়ান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, বাণিজ্যমেলা উপলক্ষে কোটি টাকার বেশি জাল নোট বাজারে ছাড়ার প্রস্তুতি চলছিল ঢাকার মিরপুর পল্লবীর একটি বাড়িতে। দীর্ঘ ১০ বছর ধরে এমন জাল টাকা তৈরি করে সারাদেশে ছড়িয়ে দিতেন ছগির হোসেন ও তার দলের সদস্যরা। কয়েক হাত ঘুরে ভোক্তাপর্যায়ে এসব জাল নোট ছড়িয়ে দিতে দেশজুড়ে ছিল ডিলার। পুরো এক লাখ টাকার জাল নোট তৈরিতে খরচ হতো মাত্র চার হাজার টাকা। এর মধ্যে এক হাজার নোটের এক লাখ টাকার বান্ডিল ১৫ হাজারে বিক্রি হতো। আর ৫০০ টাকার নোটের এক লাখের বান্ডিল বিক্রি হতো ১০ হাজার টাকায়। গত সোমবার রাজধানীর পল্লবীতে অভিযান চালিয়ে এ চক্রের মূলহোতা ছগির হোসেনসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে এলিট ফোর্স র্যাব। এ সময় এক কোটি ২০ লাখ টাকা সমমানের জাল নোট, পাঁচটি মোবাইল, দুইটি ল্যাপটপ, একটি সিপিইউ, তিনটি প্রিন্টারসহ জাল নোট তৈরির বিভিন্ন সরঞ্জাম জব্দ করা হয়। গ্রেপ্তাররা হলেন- ছগির হোসেন, মোছা. সেলিনা আক্তার পাখি ও রুহুল আমিন। তিনি বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তাররা জানিয়েছেন, তারা পরস্পর যোগসাজশে দীর্ঘদিন ঢাকা ও বরিশালসহ বিভিন্ন এলাকায় জাল নোট বিক্রি করে আসছিল। চক্রটির মূলহোতা হলেন ছগির। আর বাকিরা তার সহযোগী। চক্রের সঙ্গে ১৫-২০ জন সদস্য জড়িত। টাকা কারবারে গ্রেপ্তার ছগির হোসেন ১৯৮৭ সালে বরগুনা থেকে ঢাকায় এসে প্রথমে একটি হোটেল বয়ের কাজ নেন। পরবর্তীতে ভ্যানে ফেরি করে বিক্রি শুরু করেন গার্মেন্টস পণ্য। এ সময় ছগিরের সঙ্গে ইদ্রিস নামে এক জাল টাকা কারবারির পরিচয় হয়। পরিচয়ের সুবাদে তাদের মধ্যে সম্পর্ক ও জাল নোট তৈরির হাতেখড়ি। ছগির প্রথমে জাল নোট বিক্রি করতেন। পরে রপ্ত করেন নোট তৈরি। ২০১৭ সালে জাল নোটসহ ইদ্রিস ও ছগির আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। বছরখানেক জেল খেটে বেরিয়ে এসে পুনরায় ২০১৮ সাল থেকে পুনরায় শুরু করেন জাল নোট তৈরি। এসব নোট তার চক্রে থাকা রুহুল আমিন, সেলিনা ও অন্যান্য ৭-৮ জনের মাধ্যমে বিক্রি করতেন। ছগির নিজেই পুরান ঢাকা থেকে জাল টাকা তৈরির উপকরণ টিস্যু পেপার, প্রিন্টার, ল্যাপটপ ও প্রিন্টারের কালি ক্রয় করেন। এরপর তার ভাড়া বাসায় গোপনে বিশেষ কৌশলে এ-৪ সাইজের দুইটি টিস্যু পেপার এক করে আঠা লাগিয়ে রঙ্গিন প্রিন্টারে টাকা তৈরি করতেন। তিনি নিজেই প্রিন্টিং করতেন। নিরাপত্তার স্বার্থে প্রিন্টিংয়ের কাজে অন্যান্যের সম্পৃক্ত করা হতো না। জাল নোট তৈরির পর তার অন্যান্য সহযোগীদের মোবাইলে কল করে তার কাছ থেকে জাল নোট নিয়ে যেতে বলতেন। প্রতি এক লাখ টাকার জাল নোট তৈরিতে ছগিরের খরচ হতো ৪-৫ হাজার টাকার মতো। আর লাখ টাকার জাল নোট বিক্রি করতেন ১০-১৫ হাজার টাকায়। তার সহযোগীরা মাঠ পর্যায়ে এ টাকা সরবরাহ ও বিক্রি করতেন। টার্গেট বা চাহিদা অনুযায়ী ছগির প্রতিমাসে তাদের দিতেন বোনাসও। এক প্রশ্নের জবাবে র্যাব কর্মকর্তা খন্দকার মঈন বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে ছগির জানিয়েছেন, করোনাকালীন মাঝে মাঝে ছগির নিজেও এ জাল টাকা স্থানীয় বাজারে ব্যবহার করেছেন। কয়েক বার তিনি সাধারণ জনগণের হাতে পড়েছিলেন ধরাও। সাধারণত কোনো মেলা, ঈদে পশুর হাট, ও অধিক জনসমাগম অনুষ্ঠানে তারা জাল নোট ব্যবহার করতেন। সম্প্রতি পূর্বাচলে আয়োজিত বাণিজ্য মেলা ও শীতকালীন প্রত্যন্ত অঞ্চলের বিভিন্ন উৎসব ও মেলাকে কেন্দ্র করে বিপুল পরিমাণ জাল টাকা তৈরির পরিকল্পনা করেন ছগির। এ লক্ষ্যে দীর্ঘ সময় ধরে তিনি তৈরি করে আসছিলেন জাল টাকা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিতে গ্রেপ্তার ছগির জাল নোট প্রিন্টিংয়ের সময় কাগজের অব্যবহৃত ও নষ্ট অংশগুলো পুড়িয়ে ফেলতেন। এ ছাড়া তিনি যেনো ধরা না পড়েন সে জন্য ঘন ঘন বাসা করতেন পরিবর্তন। অপরদিকে গ্রেপ্তার পাখি ঢাকার কামরাঙ্গীরচরে একটি বিউটি পার্লারে কাজ করতেন। স্বামীর মাধ্যমে এ চক্রের মূলহোতা ছগিরের সঙ্গে পরিচয় হয় তার। এরপর তিনি নিজেও এ চক্রে জড়িয়ে জাল নোট ব্যবসা শুরু করেন। ছগিরের আরকে সহযোগী রুহুল আমিন বিভিন্ন সময় ৫০০ টাকার জাল নোট হাসপাতাল ও মেডিকেলসহ ব্যস্ত এলাকায় বিক্রি ও এক্সচেঞ্জ করেন। জাল নোট তৈরি ও বিক্রির মামলায় ইতোপূর্বে ২০১৭ সালে জেলে ছিলেন তিনি। বর্তমানে তার নামে মামলা রয়েছে।
আরও পড়ুন
সাগর-রুনি হত্যা মামলা তদন্তে উচ্চ পর্যায়ের টাস্কফোর্স গঠনের নির্দেশ
সাইবার আইনের মামলা প্রত্যাহার হচ্ছে, গ্রেপ্তাররা মুক্তি পাচ্ছেন
সাবেক এমপি সুজনের জামিন না মঞ্জুর, কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ