রাশিয়া থেকে ৩ লাখ টন গম আমদানিসহ ১৪টি প্রস্তাব অনুমোদন করেছে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি (সিসিজিপি)। বুধবার(১৩ সেপ্টেম্বর) কমিটির এক বৈঠকে এই অনুমোদন দেওয়া হয়।
অনুমোদন অনুযায়ী, খাদ্য মন্ত্রণালয় রাশিয়ান ফেডারেশন থেকে জিটুজি (সরকারি পর্যায়ে) পদ্ধতিতে ১ হাজার ৩২ কোটি ৯০ লাখ টাকা ব্যয়ে গম আমদানি করবে। এতে প্রতি কেজি গমের দাম পড়বে ৩৩ দশমিক ৪৩ টাকা।
এ ছাড়া তিনটি স্থানীয় বিমানবন্দরের রানওয়ের উপরিভাগে অ্যাসফাল্ট কংক্রিট ঢালাই, দুটি সৌরশক্তি ও একটি বায়ুবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের চুক্তিও অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে ভার্চুয়ালি মন্ত্রিসভার বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়।
শানডং-ভিত্তিক একটি চীনা কোম্পানি যশোর বিমানবন্দরের রানওয়ের উপরিভাগে অ্যাসফল্ট কংক্রিট ঢালাই করার জন্য সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে চুক্তিটি পেয়েছে এবং সৈয়দপুর বিমানবন্দরের রানওয়ে উপরিভাগে অ্যাসফল্ট কংক্রিট ঢালাই করার চুক্তি পেয়েছে স্থানীয় কোম্পানি আব্দুল মোমেন লিমিটেড।
রাজশাহীর শাহ মখদুম বিমানবন্দরের রানওয়ের উপরিভাগে অ্যাসফল্ট কংক্রিট ঢালাই করার চুক্তি সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে চীনা কোম্পানি চায়না সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন কর্পোরেশনকে দেওয়া হয়।
বাংলাদেশের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ ৭৭২ কোটি ৭৪ লাখ টাকার মোট চুক্তি মূল্যে তিনটি লটের অধীনে তিনটি চুক্তি করেছে।
‘বিদ্যুৎ নেই-কোনো অর্থ পরিশোধ নেই’ শর্তে নিজস্ব পরিচালন পদ্ধতির ভিত্তিতে দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও ও কক্সবাজারে দুটি গ্রিড-যুক্ত সৌরবিদ্যুৎ এবং একটি বায়ু বিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপনের অনুমোদন দিয়েছে সিসিজিপি।
প্রস্তাবনা অনুযায়ী, কনসোর্টিয়াম অব গ্রিন প্রোগ্রেস রিনিউয়েবল বি.ভি. অ্যান্ড আইআরবি অ্যাসোসিয়েটস লিমিটেড দিনাজপুরের বোচাগঞ্জ উপজেলা এবং ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলায় ১০০ মেগাওয়াট (এসি) সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করবে।
বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ড (বিপিডিবি) ২০ বছর মেয়াদে এই প্রকল্প থেকে বিদ্যুৎ কিনবে যার জন্য সরকারকে খরচ করতে হবে ৩ হাজার ৫২৫ কোটি ৬০ লাখ টাকা যার শুল্ক হার ১০ দশমিক ৮৭৮২ টাকা কিলোওয়াট ঘণ্টা।
কক্সবাজারের সদর উপজেলায় একটি ১০০ মেগাওয়াট (এসি) সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করবে কনসোর্টিয়াম অব ডিট্রোলিক এসএ ইন্টারন্যাশনাল পিটিই ও পাওয়ারনেটিক এনার্জি লিমিটেড। বিপিডিবি ২০ বছর মেয়াদে এই প্রকল্প থেকে ৩ হাজার ৫৪২ কোটি ৪০ লাখ টাকা খরচ করে বিদ্যুৎ ক্রয় করবে। যার প্রতি কিলোওয়াট ঘণ্টার মূল্য পড়বে ১০ দশমিক ৯২৮১ টাকা।
কক্সবাজারের চকোরিয়ায় ২২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার একটি বায়ু বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করবে জেটি নিউ এনার্জি কোম্পানি লিমিটেড। বিপিডিবি ২০ বছর মেয়াদে প্রকল্প থেকে ১২ হাজার ৪০৮ কোটি টাকা খরচ করে প্রতি কিলোওয়াট ঘণ্টা ১৩ দশমিক ৪১৪ টাকা হারে বিদ্যুৎ কিনবে।
বিপিডিবির জন্য (১) অকুলিন টেক বিডি লিমিটেড, (২)নুরিফ্লেক্স কোম্পানির যৌথ উদ্যোগকে চুক্তি প্রদানের আরেকটি প্রস্তাব অনুমোদন করেছে মন্ত্রিপরিষদ কমিটি। পাশাপাশি এসকিউ ট্রেডিং অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং থেকে ৪৬০ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘টার্নকি বেসিসে ইউনিফাইড প্রিপেইড সিস্টেম আপগ্রেডসহ উন্নত মিটারিং, অবকাঠামোগত নকশা, সরবরাহ, স্থাপন, টেস্টিং কমিশনিং এর অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তিনটি প্রস্তাব সিসিজিপির অনুমোদন পেয়েছে।
প্রস্তাব অনুযায়ী, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) সবনম ভেজিটেবল অয়েল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড থেকে ৫৮ কোটি ১১ লাখ টাকা ব্যয়ে খোলা দরপত্রের মাধ্যমে ৬ হাজার টন মসুর ডাল কিনবে। প্রতি কেজির দাম পড়বে ৯৬ দশমিক ৮৫ টাকা।
টিসিবি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭৯ কোটি ৯২ লাখ টাকা ব্যয়ে বসুন্ধরা মাল্টি ফুড প্রোডাক্টস লিমিটেড থেকে খোলা দরপত্রের মাধ্যমে ৫০ লাখ (৫ মিলিয়ন) লিটার সয়াবিন তেল কিনবে। প্রতি লিটার খরচ হবে ১৫৯ দশমিক ৮৫ টাকা।
এ ছাড়াও টিসিবি ৪৩৩ কোটি ৬২ লাখ টাকায় আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে ব্রিজো মেরিন এসডিএন বিএইচডি, মালয়েশিয়া (স্থানীয় এজেন্ট: সেনা ভোজ্য তেল ইন্ডাস্ট্রিজ ঢাকা) থেকে ৩ কোটি ৩০ লাখ (৩৩ মিলিয়ন) লিটার সয়াবিন তেল আমদানি করবে। প্রতি লিটারের দাম পড়বে ১৫৫ দশমিক ৯৩ টাকা।
সিসিজিপি সার আমদানির জন্য কৃষি মন্ত্রণালয়ের ৪টি প্রস্তাব অনুমোদন করেছে।
অনুমোদন অনুযায়ী, কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ সংস্থা বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) কানাডিয়ান কমার্শিয়াল করপোরেশন থেকে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের চুক্তির আওতায় ১৭৭ দশমিক ৬৫ মিলিয়ন টাকা ব্যয়ে ৫০ হাজার টন মিউরিয়েট-অব-পটাশ (এমওপি) সার আমদানি করবে। প্রতি টনে খরচ হবে ৩২৩ মার্কিন ডলার।
বিএডিসি ১৭৭ কোটি ৬৫ লাখ টাকার রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের চুক্তিতে একই কানাডিয়ান কমার্শিয়াল করপোরেশন থেকে আরও ৫০ হাজার টন মিউরিয়েট-অব-পটাশ (এমওপি) সার আমদানি করবে। প্রতি টনে খরচ হবে ৩২৩ মার্কিন ডলার।
বিএডিসি রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের চুক্তির আওতায় ২৩১ কোটি ৪৪ লাখ টাকা ব্যয়ে মরক্কো ওসিপি, এসএ থেকে ৪০ হাজার টন ডিএপি সার আমদানি করবে। প্রতি টন খরচ হবে ৫২৬ মার্কিন ডলার।
একই মরক্কোর ওসিপি, এস. এ ১২৮ কোটি ৬১ লাখ টাকা ব্যয়ে বিএনডিসি-কে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে চুক্তির অধীনে ৩০ হাজার টন টিএসপি সার সরবরাহ করবে। প্রতি টনে খরচ হবে ২৮৯ দশমিক ৭৫ মার্কিন ডলার।
হাতিরঝিল-রামপুরা সেতু-বনশ্রী-শেখের জায়গা-আমুলিয়া-ডেমরা মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পের জন্য এলইএ অ্যাসোসিয়েটস সাউথ এশিয়া প্রাইভেট ইন্ডিয়াকে ৫৩ কোটি ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি চুক্তি প্রদানের জন্য সড়ক ও জনপথ বিভাগের একটি প্রস্তাব অনুমোদন করেছে মন্ত্রিসভা।
—-ইউএনবি
আরও পড়ুন
বাংলাদেশে চিংড়ির রফতানি পরিমাণ কমছে ধারাবাহিকভাবে
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি