নিজস্ব প্রতিবেদক:
রিগ সঙ্কট রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানির (বাপেক্স) গ্যাসকূপ খনন ও সংস্কার কার্যক্রমে স্থবিরতা বিরাজ করছে। সংস্থাটি দেশে প্রাকৃতিক গ্যাসের উত্তোলন, কূপ খনন ও সংস্কারের লক্ষ্যে পাঁচটি রিগ (কূপ খননযন্ত্র) মেরামত ও আধুনিকায়নের উদ্যোগ নিয়েছিল। ওই লক্ষ্যে দুই বছর আগে নেয়া প্রায় ২০০ কোটি টাকার প্রকল্পেরও মেয়াদ শেষ হতে আর মাত্র কয়েক মাস বাকি। কিন্তু রিগ মেরামতের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্র ও যন্ত্রাংশ আমদানিতে ডলারের সংস্থান না হওয়ায় বাপেক্স সময়মতো ঋণপত্র (এলসি) খুলতে পারেনি। ফলে স্থবির হয়ে পড়েছে প্রকল্পটির কার্যক্রম। তার মধ্যে একটি রিগ হয়ে সংস্কারের অনুপযোগী পড়েছে। ফলে প্রকল্প থেকে ওই রিগটিকে বাদ দিতে হয়েছে। মূলত ভূগর্ভস্থ গ্যাস শনাক্তকরণ ও উত্তোলন কাজে রিগ ব্যবহার হয়। বর্তমানে বাপেক্সের কাজ চালানোর মতো রিগের সংখ্যা চার। এর মধ্যে দুটি আবার বহু বছরের পুরনো। বাপেক্স সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দেশে গ্যাসের উৎপাদন ও সরবরাহ বাড়াতে জ্বালানি বিভাগ ২০২৫ সালের মধ্যে ৪৬টি কূপ খননের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। ওই পরিকল্পনায় রাষ্ট্রায়ত্ত খাতের একমাত্র জ্বালানি তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান-উত্তোলনকারী প্রতিষ্ঠান বাপেক্সের সিংহভাগ কাজ করার কথা। সেজন্য সংস্থাটির সব রিগকেই পর্যায়ক্রমে খননকাজে যুক্ত করার কথা। আর আগামী ২০২৫ সাল পর্যন্ত বাপেক্সের রিগগুলো কখন কোথায় কাজ করবে সে পরিকল্পনাও সাজানো রয়েছে। কিন্তু রিগগুলোর কার্যক্ষমতা কমে গেলে জ¦ালানি বিভাগের কূপ খনন পরিকল্পনায় বড় ধরনের সংকট তৈরি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
সূত্র জানায়, জ্বালানি বিভাগের ৪৬টি কূপ খননের পরিকল্পনাটি বাস্তবায়ন করতে হলে বাপেক্সের রিগগুলোকে সারা বছর প্রকল্পের কাজে যুক্ত থাকতে হবে। কিন্তু রিগগুলোর দুর্বলতা থেকে গেলে একদিকে যেমন কাজগুলো দীর্ঘায়িত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেবে, তেমনি এসব কাজ বিদেশী কোম্পানির হাতে চলে যাওয়ারও আশঙ্কা রয়েছে। তাতে একদিকে যেমন ব্যয় বাড়বে, তেমনি বাপেক্সের কূপ খননকে ঘিরে সরকারের পরিকল্পনাও ব্যর্থ হতে পারে। রিগ সংস্কারে বিগত ২০২১ সালের জুলাইয়ে প্রকল্প নেয়া হয়। আগামী ডিসেম্বরে ওই প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে। প্রকল্পে মোট বরাদ্দ রয়েছে প্রায় ২০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে দুটি রিগ সংস্কারে মোট বরাদ্দ ১০৬ কোটি টাকা। এগুলো হলো রিগ আইপিএস ও আইডেকো। কিন্তু ওই দুই রিগ সংস্কারে এলসি খুলতে না পারায় বরাদ্দের কোনো টাকাই খরচ করতে পারেনি বাপেক্স।
সূত্র আরো জানায়, বাপেক্স রিগ সংস্কার ও আধুনিকায়ন প্রকল্প প্রস্তাবনার যুক্তি ছিল, শুধু পাঁচটি রিগ মেরামত এবং আধুনিকায়নে সংস্থাটির মোট ব্যয় হবে ১৪০ কোটি টাকা। কিন্তু নতুন করে এসব রিগ কিনতে হলে আনুমানিক ব্যয় হতো ১ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা। ওই তুলনায় রিগ সংস্কার করলে তাতে ব্যয় সাশ্রয় হবে প্রায় ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকারও বেশি। বাপেক্সের আইডেকো নামের রিগটি এরইমধ্যে কাজের উপযোগিতা হারিয়েছে। চীনের দুটি প্রতিষ্ঠান রিগটি মেরামত করতে আগ্রহ দেখিয়েছিল। কিন্তু পরবর্তী সময়ে প্রতিষ্ঠানগুলো টেন্ডারে সাড়া দেয়নি। কভিডের পর যন্ত্রাংশের দাম বেড়ে যায়। আর শিপমেন্ট শিডিউলও মিলছিল না।
তাছাড়া রিগটির নির্মাণ হয়েছিল ১৯৮১ সালে। নির্মাতা ছিল ফ্রান্সের একটি প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটি রিগের নকশা সরবরাহে রাজি হয়নি। এ কারণে চীনা প্রতিষ্ঠানগুলো আগ্রহ দেখানোর পরও পুরনো রিগ মেরামতের কার্যক্রম থেকে পিছিয়ে যায়। পরে দুবার টেন্ডার ডেকেও তাদের সাড়া পাওয়া যায়নি। আর বিজয় সিরিজের তিনটি রিগের আধুনিকায়নে বরাদ্দ রাখা হয় প্রকল্পের বাকি অর্থ। সেজন্য এরইমধ্যে কিছু যন্ত্রাংশ আমদানি করা হয়েছে। এতে প্রকল্পের মোট আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ২২ শতাংশ। বিজয় সিরিজের রিগগুলো প্রায় এক যুগ ধরে দেশে কূপ খনন ও সংস্কারকাজে নিয়োজিত রয়েছে। দীর্ঘ সময় ধরে ব্যবহারের কারণে ওসব রিগের কার্যকারিতাও কমে এসেছে।
প্রকল্পে রিগগুলো আধুনিকায়নের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৯৪ কোটি টাকার মতো। রিগগুলো হলো বিজয়-১০, বিজয়-১১ ও বিজয়-১২। এ বিষয়ে বাপেক্সের প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান জানান, রিগ প্রকল্পের মালামাল কিনতে এলসি খোলা হলেও অর্থ পরিশোধ করা হয়নি। রিগের প্রয়োজনীয় মালামাল (ওয়েল টেস্টিং) মালয়েশিয়া থেকে আমদানি করার কথা ছিল, কিন্তু ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান তা সময়মতো সরবরাহ করতে না পারায় তাদের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করা হয়েছে। একইভাবে রিগের মালামাল প্রকল্প এলাকায় না পৌঁছানো পর্যন্ত অর্থ পরিশোধ করা হবে না। সেজন্য প্রকল্পের রিগ মেরামতে বরাদ্দকৃত অর্থ ব্যয় করা যায়নি।
আরও পড়ুন
বাংলাদেশে চিংড়ির রফতানি পরিমাণ কমছে ধারাবাহিকভাবে
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি