October 9, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Friday, April 22nd, 2022, 9:07 pm

রিয়েল এস্টেট ও আবাসন কোম্পানির প্রতারণার বিরুদ্ধে কঠোর হচ্ছে রাজউক

ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) দেশে প্রতারক রিয়েল এস্টেট ও আবাসন কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে যাচ্ছে। দেশের রিয়েল এস্টেট ও আবাসন কোম্পানিগুলোর একটি বড় অংশই নির্ধারিত অর্থ ও কিস্তি পরিশোধের পরও ক্রেতাদের জমি, প্লট কিংবা ফ্ল্যাটের পজিশন বুঝিয়ে দিচ্ছে না। আর ওই ধরনের অভিযোগ থাকা কোম্পানিগুলো ধরতে মাঠে নামছে রাজউক। একই সাথে রাজউক ক্রেতাদের অনিবন্ধিত রিয়েল এস্টেট ডেভেলপার কোম্পানির সাথে চুক্তিবন্ধ না হওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে। পাশাপাশি বেশ কয়েকটি কোম্পানিকে চিঠি দিয়ে সর্তক করা হয়েছে। বর্তমানে রাজউকসহ দেশের নগর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষগুলোর কাছে প্রতারণার হাজারো অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু কর্তৃপক্ষ আইনের ফাঁক-ফোকর দেখিয়ে ওসব অভিযোগ নিষ্পত্তি এবং সম্পত্তি উদ্ধারে কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে নির্ধারিত মূল্য পরিশোধ করা হাজারো ক্রেতা তাদের প্লট ও ফ্ল্যাট পেতে প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং রাজউক সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, রাজধানী, পার্শ্ববর্তী নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, মানিকগঞ্জ ও গাজীপুরসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় বর্তমানে কয়েক হাজার রিয়েল এস্টেট ও আবাসন কোম্পানি গড়ে উঠেছে। শুধু এ ওসব কোম্পানিই নয়, বর্তমানে ঢাকা ও তার আশেপাশে বেশ কিছু আবাসন ব্যবসায়ী ও ভূমি উন্নয়ন কোম্পানিও গড়ে উঠেছে, যারা প্রতারণার সঙ্গে জড়িত। ওসব কোম্পানি চমকপ্রদ বিজ্ঞাপন দিয়ে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে চলেছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ থেকে ওসব কোম্পানির নিবন্ধনের বাধ্যবাধকতা থাকলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই শুধুমাত্র কোম্পানি নিবন্ধন ও সিটি করপোরেশন বা পৌরসভা থেকে ট্রেড লাইসেন্স নিয়েই কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। ওসব ভূমি উন্নয়ন ও আবাসন ব্যবসায়ীদের বেশিরভাগেরই নিজস্ব কোন জমি নেই। যেসব স্থানে তাদের সাইনবোর্ড লাগানো হয়েছে, সেখানে তাদের কোন জমি নেই। তাছাড়া একটি চক্র আবাসন ব্যবসার আড়ালে এমএলএম ব্যবসার মাধ্যমে গ্রাহকদের সাথে প্রতারণা করে আসছিল। সিআইডি রাজধানীর উত্তরা থেকে ওই চক্রের ৬ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে।
সূত্র জানায়, নির্ধারিত অর্থ বা কিস্তি পরিশোধ করেও প্লট বা ফ্ল্যাট না পেয়ে ভুক্তভোগী ক্রেতারা প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দ্বারস্থ হয়েও কোন সুফল না পেয়ে অনেক ক্রেতাই চরম হতাশা। আইনগত সমস্যা দেখিয়ে আবাসন ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিয়েল এস্টেট ও হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশও (রিহ্যাব) কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না। অভিযোগ রয়েছে এমন কোম্পানিগুলোর মধ্যে রয়েছে ঢাকা-মাওয়া সড়ককের জম্মভূমি সিটি, নিকেতন সিটি, বাতায়ন সিটি, মদিনা ঝিলমিল রিভার ভিউ, মেরীল্যান্ড সিটি, স্বপ্নধারা রিয়েল এস্টেট, পদ্মা ফিউচার পার্ক, বিডি প্রোপার্টিজ, ডিভাইস সাউদ সিটি, আশালয় হাউজিং, চিয়ারফুল গ্রীণ সিটি, দিশারী গ্রুপ, ইউরো স্টার মডেল টাউন, সিলভার গ্রীণ সিটি, এশিয়ান টাউন, শান্তি নিবাস, আমেরিকান সিটি, অ্যারাবিয়ান সিটি, কানাডা সিটি, ফ্লোরিডা সিটি, সিডনি সিটি, প্রবাসী পল্লী, স্যাটেলাইট টাউন ও ইটালিয়ান সিটি প্রভৃতি।
সূত্র আরো জানায়, রাজউকের নিবন্ধিত নয় এমন ডেভেলপার কোম্পানির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার নতুন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে রাজউক একটি প্রচারণা কার্যক্রম শুরু করেছে। একটি বড় কোম্পানি রাজধানীর কেরাণীগঞ্জে কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। সেটাকে নিবন্ধনের আওতায় আনা হচ্ছে। তাছাড়া ড্যাপের এরিয়ার মধ্যে অনিবন্ধিত কোম্পানি কাজ করতে পারবে না। রাজউকের এক জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে যথাযথ সময়ে ভবন নির্মাণ ও নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ এবং প্রতারণা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য রাজউকের আওতাধীন এলাকায় ভবন নির্মাণে ইচ্ছুক সংশ্লিষ্টদের অনিবন্ধিত রিয়েল এস্টেট ডেভেলপার কোম্পানির সাথে চুক্তিবন্ধ না হওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়। তাছাড়া ভবন নির্মাণ চুক্তির সময় ডেভেলপার কোম্পানি রাজউকের নিবন্ধিত কি না এবং নিবন্ধন নবায়ন হালনাগদ কি না, তাও যাচাই করে চুক্তি করার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে অনুরোধ করা হয়। আর যে সকল ডেভেলপার কোম্পানি রাজউকের নিবন্ধিত নয় তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এদিকে এমন পরিস্থিতি প্রসঙ্গে রিহ্যাব সভাপতি শামসুল আলামিন জানান, আবাসন ব্যবসায়ীদের দুটি সংগঠন রিহ্যাব ও বাংলাদেশ ল্যান্ড ডেভেলপার্স অ্যাসোসিয়েশন। দুটি সংগঠনই ওসব অভিযোগের বিষয়গুলো দেখভাল করে। তাদের কাছে সুনির্দিষ্ট তথ্যসহ কোন অভিযোগ করা হলে কর্তৃপক্ষ অবশ্যই তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবে। গত বছর কয়েকটি কোম্পানির সদস্যপদ বাতিল করা হয়।
অন্যদিকে এ বিষয়ে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এ বি এম আমানুল্লাহ নুরী জানান, রিয়েল এস্টেট ও আবাসন কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ আসে শত শত। অনেক কোম্পানি আছে যাদের ক্রেতারা টাকা পরিশোধের পর ১০/১৫ বছরেও প্লট বা ফ্ল্যাট পাননি। আবার তারা টাকাও তুলতে পারছে না। ওসব বন্ধ করতে রাজউক বিভিন্ন পদক্ষেপও নিয়েছে। কিন্তু তাতে তেমন সফলতা আসেনি।