November 5, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Wednesday, February 16th, 2022, 7:34 pm

রুনা লায়লার স্মৃতিতে বাপ্পী লাহিড়ী

অনলাইন ডেস্ক :

ভারতীয় সংগীত জগতে নক্ষত্র পতন যেন থামছেই না। একের পর এক কিংবদন্তি চলে যাচ্ছেন না ফেরার দেশে। লতা মঙ্গেশকর ও সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের পর এবার চিরবিদায় নিলেন বাপ্পি লাহিড়ী। তারা প্রত্যেকে স্নেহ করতেন বাংলাদেশের বরেণ্য সংগীতশিল্পী রুনা লায়লাকে।বর্তমানে যুক্তরাজ্যে অবস্থান করা এই গুণী শিল্পী শোকাচ্ছন্ন। বুধবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাসের শেষ ভাগে রুনা লায়লা লিখেছেন, ‘কয়েকদিনের ব্যবধানে লতা দিদি ও সন্ধ্যা দিদির পর এবার বাপ্পিজিকে চিরবিদায় জানাতে হলো। তাদের হারানোর শোক প্রকাশের ভাষা নেই আমার। কান্নাও যথেষ্ট নয়। আমি পুরোপুরি স্তব্ধ ও বিষাদগ্রস্ত।’ বাপ্পি লাহিড়ীর সঙ্গে কাজের কিছু স্মৃতি রোমন্থন করেছেন রুনা লায়লা, “তাঁর সঙ্গে বেশকিছু চলচ্চিত্রের গান ও অ্যালবামে কাজ করার সৌভাগ্য হয়েছে আমার। এরমধ্যে অন্যতম ছিল সুপারহিট অ্যালবাম ‘সুপারুনা’। আমরা বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় অসংখ্য কনসার্ট করেছি।” অসামান্য জনপ্রিয়তা পাওয়া ‘সুপারুনা’ নিয়ে বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে আলাদাভাবে কথা বলেছেন রুনা লায়লা, “১৯৮২ সালে এই পপ অ্যালবামটির রেকর্ডিং হয় লন্ডনের অ্যাবি রোড স্টুডিওতে। একসময়ের বিখ্যাত ব্যান্ড বিটলসের সদস্যরা সেখানেই তাদের গান রেকর্ড করতেন। বাপ্পিজির সঙ্গে সেই স্টুডিওতে রেকর্ডিংয়ের স্মৃতি চিরকাল মনে পড়বে। ‘সুপারুনা’ অ্যালবামটি প্রকাশের দিনেই এর ১ লাখ কপি বিক্রি হয়েছিল। এজন্য প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ইএমআই মিউজিক আমাকে উপহার হিসেবে গোল্ডেন ডিস্ক অ্যাওয়ার্ড দিয়েছিল।” বাপ্পি লাহিড়ীর সুরে কাজের স্মৃতি জানিয়েরুনা লায়লা বলেন, “১৯৭৯ সালে প্রকাশ কাপুর পরিচালিত বলিউডের ‘জান-এ-বাহার’ ছবিতে বাপ্পিজির সুর-সংগীতে একটি গান গেয়েছিলাম। এর শিরোনাম ছিল ‘মার গায়ো রে রসগোল্লা খিলাই কে মার গায়ো রে’। এতে মোহাম্মদ রফি সাহেব ও আনন্দ কুমারও কণ্ঠ দেন। গওহর কানপুরির লেখা গানটি বেশ আলোচিত হয়েছিল।” ১৯৮৪ সালে বাপ্পি লাহিড়ীর সুর-সংগীতে আরেকটি হিন্দি গান গেয়েছেন রুনা লায়লা। এ প্রসঙ্গে তিনি উল্লেখ করেন, “দাসারি নারায়ণ রাও পরিচালিত ‘ইয়াদগার’ ছবিতে ইন্দিবারের লেখা ও বাপ্পিজির সুরে ‘অ্যায় দিলওয়ালে আও’ গানটি গেয়েছিলাম। এতে অভিনয় করেন কমল হাসান ও পুনম ধিলন। এটা আমার পছন্দের একটা গান।” ২০১৮ সালের ১৭ নভেম্বর কলকাতায় জন্মদিন উদযাপন করেন রুনা লায়লা। সেদিন গ্র্যান্ড ওবেরয় হোটেলে গিয়ে তাকে চমকে দেন বাপ্পি লাহিড়ী। সেই স্মৃতি রোমন্থন করে রুনা লায়লাবলেন, “ওইবার জন্মদিন কাটাতে আলমগীর সাহেবকে (নায়ক আলমগীর) নিয়ে কলকাতায় গিয়েছিলাম। আমরা উঠেছিলাম গ্র্যান্ড ওবেরয় হোটেলে। তখন একই হোটেলে সস্ত্রীক ছিলেন বাপ্পিজি। আমি আছি জেনে তিনি প্রথমে ফোনে শুভেচ্ছা জানান। তারপর ফুল ও কেক নিয়ে আমাদের কক্ষে হাজির হন স্ত্রী চিত্রানী লাহিড়ীকে নিয়ে। চার জন মিলে কেক কেটেছি। জন্মদিনে তাঁকে এভাবে পেয়ে যাবো ভাবিনি। ঘটনাটা ছিল আমার জন্য চমক। কেক কাটার পর আমরা আড্ডা দিয়েছি। “সুপারুনা”র রেকর্ডিং নিয়ে স্মৃতিচারণা করেছিলাম। সেটাই ছিল আমাদের শেষ দেখা।” বাপ্পি লাহিড়ীর সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল রুনা লায়লার। সেটাও জানিয়েছেন তিনি, ‘বাপ্পিজি ছিলেন আমার বন্ধু। তিনি ছিলেন রসিক ও মজার মানুষ। একইসঙ্গে সবার প্রিয় ছিলেন।’ রুনা লায়লা মনে করেন, বেঁচে থাকলে সংগীত জগতে আরও অনেক অবদান রাখতে পারতেন বাপ্পি লাহিড়ী, ‘এমন একজন প্রতিভাবানকে বিদায় জানানো কঠিন, তিনি নিজেকে আরও উঁচুতে নিয়ে যেতে পারতেন। অসাধারণ প্রতিভাবান সুরকার ও গায়ক বাপ্পী লাহিড়ীর প্রয়াণে আমি বিষণœ ও মর্মাহত।’ গত বছরের এপ্রিলে বাপ্পি লাহিড়ীর করোনা শনাক্ত হয়। তখন মুম্বাইয়ের ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। কিছুদিন পর সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরেন। একমাস আগে শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় মুম্বাইয়ের ক্রিটিকেয়ার হাসপাতালে যান। গত মঙ্গলবার দিবাগত রাতে ‘অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়ায় (ওএসএ)’ আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন তিনি। তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৯ বছর। প্রায় পাঁচ দশকের সংগীত জীবনে হিন্দি, বাংলা, তেলুগু, তামিল ও গুজরাটি ভাষায় গান তৈরি করেছেন বাপ্পি লাহিড়ী। আশি ও নব্বই দশকে ভারতীয় চলচ্চিত্রে ডিস্কো মিউজিককে জনপ্রিয় করে তুলেছিলেন তিনি। ২০১৮ সালে ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ডসে আজীবন সম্মাননায় ভূষিত করা হয় তাঁকে।