October 8, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Wednesday, January 11th, 2023, 9:46 pm

রেলে বিপুল টাকা ব্যয় হলেও আয় বাড়ানোর উদ্যোগ নেই

ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

বাংলাদেশ রেলওয়ের লোকসান ব্যয় বাড়ছে। কিন্তু ওই অনুপাতে আয় বাড়নোর উদ্যোগ নেই। সরকার বিগত ১৩ বছরে রেলে ১ লাখ হাজার কোটি টাকারও বেশি খরচ করেছে। আরো প্রায় পৌনে ২ লাখ কোটি টাকার ৩৭টি প্রকল্প চলমান। ওসব প্রকল্পে ৯০ শতাংশ অর্থই রেলপথ নির্মাণ, স্টেশন ভবন ও প্ল্যাটফরমের উন্নয়নে (কিছু অংশ কোচ ও ইঞ্জিন কেনায়) ব্যয় চলমান রয়েছে। সেবা বাড়াতে ওসবের প্রয়োজন থাকলেও ট্রেন সঠিক সময়ে পরিচালনা, ট্রেনের গতি বাড়ানো, যাত্রী ও পণ্য পরিবহণের সক্ষমতা বাড়ানো, বন্ধ স্টেশন চালু, বিনাটিকিটি যাত্রী রোধ, টিকিট বিক্রি প্রক্রিয়া সহজ করা ও কালোবাজারি রোধ, ডাবল লাইন রেলপথ নির্মাণ অর্থাৎ সার্বিক সেবা বাড়ানোর উদ্যোগ ও ব্যবস্থাপনার উন্নয়নমূলক কাজ দেখা যাচ্ছে কমই। রেলপথ মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, রেলের অবকাঠামো উন্নয়নে গত কয়েক বছরে দৃশ্যমান বেশকিছু পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। কিন্তু ওই সময়ে ট্রেনের গতি আরো কমেছে, কোনো কোনো ক্ষেত্রে সেবার মানও কমেছে। অথচ শুধু সদিচ্ছা থাকলেই বর্তমান অবকাঠামো ও ইঞ্জিন-কোচ দিয়ে ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন ঘটিয়ে অন্তত তিনগুণ আয় বাড়ানো সম্ভব। বর্তমানে প্রতিটি ট্রেনই কোচ স্বল্পতা নিয়ে চলছে। কোনো কোনো ট্রেনে কাগজে-কলমে যে সংখ্যক কোচ রয়েছে বাস্তবে তারও কম নিয়ে চলছে। কাগজে-কলমে ১২টি যাত্রীবাহী কোচ নিয়ে চলছে ঢাকা-চিলাহাটি রুটে চলাচলকারী নীলসাগর এক্সপ্রেস ট্রেন। কিন্তু বিশেষ সময় ছাড়া এক বছরে ট্রেনটি ১০টির বেশি কোচ নিয়ে চলেনি। ওই ট্রেনে আসন সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৫শ। কিন্তু চাহিদা অন্তত চারগুণ। অন্যান্য ১০৩টি আন্তঃনগর ট্রেনের ৯০ শতাংশেরই অবস্থা প্রায় একই। তাছাড়া অধিকাংশ ট্রেনই সঠিক সময়ে গন্তব্যে পৌঁছায়নি। ওসব ট্রেন দুই ঘণ্টা থেকে ১৬ ঘণ্টা পর্যন্ত দেরিতে চলাচল করেছে। কয়েকটি ট্রেন বাতিলও করতে হয়েছে। ঢাকা-খুলনা, ঢাকা-রাজশাহী, ঢাকা-বেনাপোল রুটে চলাচলকারী ট্রেনগুলোর অবস্থাও প্রায় একই। ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট রুটের ট্রেনগুলো মোটামুটি ঠিক সময়ে চললেও সেগুলোতেও আধা ঘণ্টা থেকে তিন ঘণ্টা পর্যন্ত লেট চলে।
সূত্র জানায়, শুধু রাজনৈতিক কারণে একের পর এক জোড়াতালি দিয়ে নতুন ট্রেন উদ্বোধন করা হচ্ছে। চলমান ট্রেনের কোচ কেটে নতুন ট্রেন চালু করা হচ্ছে। ফলে ব্যয় বাড়ছে আয় বাড়ছে না। তাছাড়া অভিযোগ রয়েছে, বাস মালিকদের সঙ্গে যোগসাজশের কারণে বছরের পর বছর ট্রেন সময়মতো চালানো হয় না এবং বাড়ানো হয় না কোচ ও সেবা। অথচ গত এক বছরে রেল উন্নয়ন খাতে প্রায় ১৭ হাজার কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে। ওই খরচের প্রায় ১৩ হাজার কোটি টাকাই লাইন নির্মাণ ও ইঞ্জিন-কোচ কেনায় খরচ হয়েছে। তার প্রায় পুরোটাই বিদেশি ঋণ। আর রেলের যেসব উন্নয়ন প্রকল্প চলমান রয়েছে সেগুলোর আর্থিক ব্যয় পৌনে দুই লাখ কোটি টাকা। কিন্তু ব্যয় অনুযায়ী আয় খুবই কম। চলতি অর্থবছরে ১৪ হাজার ৯২৮ কোটি টাকা বিনিয়োগসহ রেল খাতে খরচ ধরা হয়েছে ১৮ হাজার ৭৯৪ কোটি টাকা। আর চলতি অর্থবছরে আয় আরও কমতে পারে এবং আরো বেশি ব্যয় বাড়তে পারে।
সূত্র আরো জানায়, রেলের আয় বাড়ানোর সঙ্গে ব্যয় কমানোর কোনো তৎপরতা নেই। যদিও আয় বাড়ানোর লক্ষ্যে গত ১ বছর ধরেই ট্রেনের ভাড়া বৃদ্ধি করার কথা বলা হচ্ছে। ভাড়া বাড়ানো হলে আয় বাড়বে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা। আর কোচ বৃদ্ধিসহ টিকিট কাটা নিশ্চিত করা হলে হাজার কোটি টাকার বেশি আয় বাড়বে। ওই হিসাবে ভাড়া বাড়ানোর চেয়ে কোচ বাড়ানো বেশি যুক্তিসঙ্গত। বছরে ৯ কোটি ২৭ লাখ যাত্রী ট্রেনে ভ্রমণ করে। অর্থাৎ প্রতিদিন প্রায় ২ লাখ ৫৩ হাজার যাত্রী। কিন্তু ওই যাত্রীর বড় অংশই বিনাটিকিটে চলাচল করে। আর ওই হিসাবের বাইরে লক্ষাধিক যাত্রী অতিরিক্ত চলাচল করে। যাদের প্রায় সবাই বিনাটিকিটে ট্রেনে চড়ে। বর্তমানে রেলে লোকবলের অভাব রয়েছে। বিভিন্ন সময় নামমাত্র একটি স্টেশনে ঘণ্টাখানেক অভিযান চালালে শত শত বিনাটিকিটি ধরা পড়ে। এক একটি স্টেশন থেকে গড়ে ৫০ হাজার থেকে ৮ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা আদায় করা হয়। ৯৫ শতাংশ স্টেশন উন্মুক্ত থাকায় অভিযান পরিচালনার সময় মাত্র ১০ থেকে ১৫ শতাংশ বিনা টিকিট ধরে জরিমানা করা সম্ভব হয়। অথচ শুধু বিনাটিকিটি নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে টিকিট বিক্রয়ের দ্বিগুণ আয় সম্ভব। প্ল্যাটফরম টিকিটও নামে মাত্র বিক্রি হয়। বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর, কমলাপুর থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত প্রতিদিন প্রায় ১৫ থকে ২৫ হাজার যাত্রী চলাচল করে। তাদের মাত্র ৫ শতাংশ যাত্রী টিকিট কাটে। বাকি ৯৫ শতাংশই বিনাটিকিটে চড়ে। রাজধানীর কমলাপুর-বিমানবন্দর, বিমানবন্দর-কমলাপুর রুটে টিকিট কাটা নিশ্চিত করা হলে প্রতিদিন ৬ লাখ টাকা আয় বাড়বে। তাছাড়া রেলে বর্তমানে প্রায় ৪ হাজার একর জমি বেদখলে রয়েছে। আর ১০৪ জোড়া যাত্রীবাহী ট্রেন ‘লোকসানের’ কারণে বন্ধ করে রাখা হয়েছে। অনেকের মতে ট্রেন বন্ধ না করে লোকসান কমাতে রেলের দখলকৃত জমি উদ্ধার করে আয় বাড়ানো সম্ভব।
এদিকে এ প্রসঙ্গে রেলওয়ে মহাপরিচালক প্রকৌশলী মো. কামরুল আহসান জানান, আয় বাড়াতে বিশেষ পরিকল্পনা নেয়া হচ্ছে। কোচ আসছে, পরিকল্পনা অনুযায়ী বিভিন্ন ট্রেনে যুক্ত করা হবে। লোকসান কমাতে ওসব পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কাজ করা হচ্ছে। একই সঙ্গে অব্যবহৃত জমিতে বাণিজ্যিকভাবে লিজ দিয়ে আয় বাড়ানো হবে। আর বিনাটিকিট বন্ধে সাধারণ মানুষ তথা টিকিটধারী যাত্রীদেরও সচেতন হতে হবে।
এ প্রসঙ্গে রেলপথমন্ত্রী মো. নুরুল ইসলাম সুজন জানান, বর্তমান সরকার রেলকে ধ্বংসের মুখ থেকে তুলে এনেছে। প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দৃষ্টিতে রেলে ব্যাপক উন্নয়ন হচ্ছে। চলমান প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন হলে রেলে আমূল পরিবর্তন আসবে। রেল সেবামূলক প্রতিষ্ঠান। তবে আয় বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। ভাড়া বাড়ানোও প্রয়োজন। রেলে নতুন ইঞ্জিন-কোচ রেলবহরে যুক্ত করা হচ্ছে। স্বল্প কোচ নিয়ে চলা ট্রেনগুলোতে আরো কোচ সংযুক্ত করা হবে। তাতে যেমন আয় বাড়বে, তেমনি খরচও কমবে। এক ইঞ্জিনে-একই তেলে বহু যাত্রী বহন করা যাবে। তাছাড়া জমি উদ্ধারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী জমি বরাদ্দ দিয়ে আয় বাড়ানোর চেষ্টা চলছে।