নিজস্ব প্রতিবেদক:
রেল ওয়াগনে বাংলাদেশ থেকে গার্মেন্টস পণ্য রপ্তানির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তাতে রপ্তানি বাণিজ্য আরো সহজ হবে এবং খরচও কমবে। পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রা আয়ও অনেকাংশে বাড়বে। তবে কবে থেকে রেল ওয়াগনে পণ্য রপ্তানি কার্যক্রম শুরু হবে তা এখনো জানানো না হলেও ধারণা করা হচ্ছে খুব শিগগিরই তা হতে যাচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ছোট-বড় মিলিয়ে দেশে মোট ২৪টি স্থল ও শুল্ক বন্দর রয়েছে। তারমধ্যে বেনাপোল সবচেয়ে বড় আন্তর্জাতিক স্থলবন্দর। প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে ওই বন্দরের যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় পণ্য আমদানি ও রপ্তানিতে বন্দরের অবস্থান শীর্ষে। ওই বন্দর দিয়ে বছরে কমপক্ষে ১০ হাজার কোটি টাকার পণ্য রপ্তানি ও ৫০ হাজার কোটি টাকার পণ্য আমদানি হয়। ভারত থেকে যেসব আমদানি পণ্য নিয়ে কনটেনার ট্রেন বাংলাদেশে আসার পর পণ্য খালাস করে খালি ফিরে যায় ওসব খালি ট্রেনে রপ্তানি পণ্য ভারতে পাঠানোর জন্য ব্যবসায়ীদের দীর্ঘদিনের দাবি। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ব্যবসায়ীদের ওই দাবির প্রেক্ষিতে পণ্য রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে। ওই লক্ষ্যে ইতোমধ্যে বেনাপোল কাস্টমস হাউজ কর্তৃপক্ষ বন্দর রেল ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেছে। খুব শিগগিরই ওই কার্জক্রম চালু হতে যাচ্ছে।
সূত্র জানায়, চার ধরনের ট্রেনে করে ভারত থেকে বাংলাদেশে পণ্য আমদানি করা হয়। জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত মোট ২৮৮টি ট্রেনে ভারত থেকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য বাংলাদেশে এসেছে। ভারত থেকে আসা ওসব কনটেনার ট্রেনের প্রতিটি বগি ২০ ফুট লম্বা ৬০টি অথবা ৪০ ফুট লম্বা ৩০টি করে কনটেনার থাকে। আমদানি পণ্যের জন্য ভাড়া নির্ধারিত থাকলেও রেল ওয়াগনে পণ্য রপ্তানি এখনো শুরু না হওয়ায় ভাড়া নির্ধারণের বিষয়টি এখনো চূড়ান্ত হয়নি। তবে ওই বিষয়ে বেনাপোল কাস্টমস হাউজের কমিশনার একাধিকবার স্টকহোল্ডারদের সঙ্গে দফায় দফায় মিটিং করেছে। রেলে করে ভারতে মাল পাঠালে ৪ দিনে তা বোম্বে পৌঁছবে এবং সেখান থেকে ২০ দিনের ভেতর ইউরোপের বিভিন্ন বন্দরের পণ্য পৌঁছে যাবে। আর চিটাগাং থেকে পণ্য পাঠাতে ৪০ থেকে ৪৫ দিন লাগে এবং খরচও বেশি।
এদিকে এ প্রসঙ্গে উপ-পরিচালক (ট্রাফিক) বেনাপোল মনিরুল ইসলাম জানান, বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ট্রেনযোগে আমদানি কার্যক্রম চলমান রয়েছে। একই প্রক্রিয়ায় এদেশ থেকে রপ্তানি পণ্য ট্রেনে কিভাবে রপ্তানি করতে এসওপি (স্ট্যান্ডার অপারেটিং প্রসিডিউর) তৈরি করার জন্য ইতোমধ্যে কাস্টমস বিভাগের সাথে বন্দর কর্তৃপক্ষের বৈঠক হয়েছে। বন্দর সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন। একটা এসওপি তৈরির মাধ্যমে দ্রুত ওই রপ্তানি কার্যক্রম ট্রেনের মাধ্যমে শুরু করা হচ্ছে। আর সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এসওপি তৈরির পরই মূলত ওই কার্যক্রম শুরু হবে।
অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে বেনাপোল রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার মোঃ সাইদুজ্জামান জানান, বাংলাদেশ থেকে এই প্রথমবারের মতো রেল ওয়াগনে করে পণ্য রপ্তানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। ইতোপূর্বে ওয়াগনযোগে পণ্য আমদানি হতো কিন্তু খালি ওয়াগনে পণ্য রপ্তানি হতো না। এ বিষয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ে ও ভারত রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের বৈঠক করে দ্রুত যে অবকাঠামো সমস্যা আছে তা সমাধানের ব্যবস্থা নেবে এবং দ্রুত ওই সমস্যার সমাধান হলে রেল ওয়াগন যোগে পণ্য রপ্তানি চালু হবে।
এ প্রসঙ্গে বেনাপোল কাস্টমস হাউজের জয়েন্ট কমিশনার শাফায়েত হোসেন জানান, দেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দেশের সার্বিক উন্নয়ন বৈদেশিক মুদ্রার ওপর নির্ভর করে। রপ্তানি বাড়াতে পারলে বেশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন হবে ও দেশের সমৃদ্ধি হবে। আর সেজন্যই কাস্টমস হাউজ বেনাপোল ওই লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। খুব তাড়াতাড়ি বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি পণ্য ট্রেনযোগে শুরু হবে। ট্রাকের মাধ্যমে যে পণ্য রপ্তানি হয় পাশাপাশি খুব দ্রুত ট্রেনের মাধ্যমেও রপ্তানি কার্যক্রম শুরু হবে।
আরও পড়ুন
বাংলাদেশে চিংড়ির রফতানি পরিমাণ কমছে ধারাবাহিকভাবে
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি