October 9, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Friday, August 18th, 2023, 9:38 pm

রোহিঙ্গাদের অপরাধ নিয়ন্ত্রণে আসছে না

ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

নানা অপরাধের আখড়ায় পরিণত হয়েছে রোহিঙ্গা ক্যাম্প। অপরাধ-কর্ম নিয়ন্ত্রণে আনতে হিমশিম খাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। ক্যাম্পে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের একটি বড় অংশই খুন, অপহরণ, ধর্ষণ, অস্ত্র, মাদক পাঁচার, চোরাচালানসহ নানা অপরাধে জড়িত। বিশ্বের সবচেয়ে বড় এই শরণার্থী শিবিরে সংঘাত, ডাকাতি, ধর্ষণ, অপহরণ, খুন যেন স্বাভাবিক চিত্র। ক্রমাগত অপরাধ-কান্ডে জড়িয়ে পড়া রোহিঙ্গাদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে। মাদক ব্যবসা, অপহরণ ও ছিনতাইসহ নানা অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে তারা স্থানীয় বাসিন্দাদের জনজীবন অতিষ্ঠ করে তুলেছে। আশ্রয় পাওয়ার পাঁচ বছর পর এখন বিভিন্ন ক্যাম্পে অবস্থানকারী রোহিঙ্গারা এমন আচরণ করছে যেন তারাই এখানকার প্রকৃত অধিবাসী।

কক্সবাজার, উখিয়া ও টেকনাফ ঘুরে দেখা গেছে, রিকশা, অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত টমটম, মাহিন্দ্র গাড়ির চালক, খাবার হোটেল, আবাসিক হোটেল, গ্রামীণ অবকাঠামোগত উন্নয়ন কাজে, জেলেদের ফিশিং বোটে, বিভিন্ন প্রকার যানবাহনে ও ব্যবসাবাণিজ্যের উল্লেখযোগ্য কাজ এরইমধ্যে দখল করে নিয়েছে রোহিঙ্গারা। কক্সবাজার জেলা পুলিশের তথ্যানুযায়ী, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ১১৫টি হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়েছে ২০১৭ সালের ২৫শে আগস্ট থেকে ২০২২ সালের ২২শে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ের মধ্যে।

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অপরাধ বাড়ায় উদ্বিগ্ন ক্যাম্পের আশপাশের লোকালয়ের বাসিন্দাসহ পুরো কক্সবাজার জেলাবাসী। সম্প্রতি বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দুই সন্ত্রাসী গ্রুপের গোলাগুলিতে ছয়জন নিহত হয়। গোলাগুলির সময় ঘটনাস্থলে পাঁচজন নিহত হয়। পরে সন্ধ্যায় আরও একজনের মরদেহ ডোবা থেকে উদ্ধার করা হয়। গুলিবিদ্ধ আরও একজনকে গুরুতর অবস্থায় কক্সবাজার সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়। এমন ঘটনার পর থেকে রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। জানা গেছে যে, রোহিঙ্গা ক্যাম্প নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য আরসা ও আরএসওর মধ্যে দ্বন্দ ও সংঘর্ষ চলছে।

এক সূত্র থেকে জানা গেছে, উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি ক্যাম্পে ৩২টি সশস্ত্র সন্ত্রাসী গ্রুপ সক্রিয়। জানা গেছে, ক্যাম্পগুলোতে সশস্ত্র জঙ্গি রয়েছে পাঁচ সহস্রাধিক। আর তাদের নিরস্ত্র সমর্থক রয়েছে ২ লক্ষাধিক। জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থার (ইউএনএইচসিআর) জানায়, রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোয় প্রতিদিন গড়ে জন্ম নিচ্ছে ৯০ থেকে ১০০টি শিশু। রোহিঙ্গাবিষয়ক জাতীয় টাস্কফোর্সের তথ্য মতে, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর বাংলাদেশে প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গার উপস্থিতি ছিল।

কিন্তু ক্যাম্পগুলোয় প্রতিবছর ৪৫ হাজারের বেশি নবজাতক যোগ হচ্ছে। সেই হিসাবে পাঁচ বছরে ক্যাম্পে যোগ হয়েছে প্রায় আড়াই লাখ মানুষ। এক রোহিঙ্গা নেতা বলেন, দীর্ঘ সময় প্রত্যাবাসন না হওয়ার কারণে অনেক রোহিঙ্গা ভাবছে তাদের আর ফিরিয়ে নেয়া হবে না। তারা স্থায়ীভাবে এই ক্যাম্পেই থাকার মনস্থির করেছেন। তিনি আরও জানান, মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ইশারায় ক্যাম্পে এখন খুনাখুনিসহ বিশৃঙ্খলা ঘটছে। ইয়াবা ব্যবসায়ী রোহিঙ্গারা প্রায় সবাই মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সোর্স হিসাবে কাজ করছে।

এক এনজিও কর্মকর্তা বলেন, এনজিও কর্মীরা নিরাপদ-বোধ করছে না। কারণ রোহিঙ্গা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। হুন্ডি, বেআইনী অস্ত্রের ঝনঝনানি, হত্যা, ঘুম ও অপহরণ আশংকাজনক ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। সাধারণ রোহিঙ্গারা বলছেন, রাতের অন্ধকারে প্রায় সময় কিছু দুষ্কৃতিকারী রোহিঙ্গা ক্যাম্প জুড়ে চালায় তান্ডব। আধিপত্য নিয়ে মারামারি, যৌন নির্যাতন, প্রতিপক্ষের ওপর হামলা, এমনকি হত্যার মতো ঘটনাও ঘটানো হয় সেখানে। আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) এর তথ্য অনুসারে, গত সাড়ে পাঁচ বছরে ১৭৩টি হত্যাকান্ড ঘটেছে কক্সবাজারের ৩৩টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে। এদের মধ্যে সাধারণ রোহিঙ্গা, কমিউনিটি নেতা ও স্বেচ্ছাসেবক।

চলতি বছরের সাত মাসে (৭ জুলাই) রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরে একাধিক সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনায় অন্তত ৫৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলছে, মাদক কারবারে জড়িত অনেকেই এখন অপহরণ সিন্ডিকেটের সদস্য। অপহৃত ব্যক্তিকে পাহাড়-জঙ্গলের পরিবর্তে এখন ক্যাম্পে নিয়ে আটকে রাখছে। খুনোখুনি, অপহরণ ও মাদক কারবারের অভিযোগে বিভিন্ন সময় কারাগারে গেলেও অনেক রোহিঙ্গা জামিনে বেরিয়ে নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। ৩৮০টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার ও ১৬৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয় বিভিন্ন ক্যাম্পে অভিযান চালিয়ে।

একই সময়ে ২৬ লাখের বেশি ইয়াবা ও ২৯ কেজি আইসসহ ৭৭৯ রোহিঙ্গাকে ধরা হয়। এ ছাড়া ১৩৬ রোহিঙ্গা অপহরণের ঘটনায় ১৮ মামলায় ২৯ জনকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে ড্রোন ক্যামেরা ও ওয়াচ টাওয়ার বসিয়ে বাড়ানো হয়েছে নজরদারি। কিন্তুু এত নজরদারি থাক সত্তেও কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছেনা অপারাধ কর্মকান্ডের।