July 27, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Friday, April 7th, 2023, 8:29 pm

শঙ্কা কাটিয়ে বাংলাদেশের স্বস্তির জয়

অনলাইন ডেস্ক :

নিজেদের মাটিতে বরাবরই অপ্রতিরোধ্য বাংলাদেশ। কিন্তু টেস্ট ফরম্যাটে ঘরের মাঠে জিততে ভুলে গিয়েছিল বাংলাদেশ। ২০২০ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে জয়ের পর কেটে গেছে তিন বছর। লম্বা সময় পর শুক্রবার আইরিশদের ৭ উইকেটে হারিয়ে গেরো কাটালো স্বাগতিকরা। আর তাতেই ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি ‘পরীক্ষায়’ ঠিকঠাক পাস করার পর আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে একমাত্র টেস্ট পরীক্ষাতেও এলো পাস মার্ক। তিন সিরিজেই ট্রফি বাংলাদেশের, খালি হাতে ফিরে যাচ্ছে আইরিশরা। ঢাকা টেস্টের দ্বিতীয় দিনেই জয়ের সুবাস পাচ্ছিলো বাংলাদেশ। কিন্তু ম্যাচের তৃতীয় দিনের পুরোটা সময় অবিশ্বাস্য ব্যাটিং করে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় আয়ারল্যান্ড। ১৩১ রানের লিড নিয়ে চতুর্থদিনের সকাল শুরু করেছিলো বাংলাদেশ। অনেক শঙ্কা নিয়েই শুক্রবারের সকালটুকু শুরু করেছিল বাংলাদেশ। তবে আইরিশদের খুব বেশি দূর এগোতে দেননি পেসার ইবাদত হোসেন। ৯ ওভারে ৬ রান তুলতেই শেষ দুই ব্যাটারকে ফিরিয়ে জয়ের পথটা সহজ করে দেন ডানহাতি এই পেসার। অবশেষে দ্বিতীয় দিনে জয়ের সুবাস পাওয়া বাংলাদেশ দলের জয় এলো চতুর্থ দিনের দ্বিতীয় সেশনে। ২০২২ সালের শুরুতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সবশেষ টেস্টে জয়ের দেখা পেয়েছিল বাংলাদেশ। এরপর ৯টি টেস্ট খেলে একটিতেও জিততে পারেনি, কেবল একটি ম্যাচ ড্র করেছে। ঘরের মাঠে তো জয়ের ইতিহাস আরও পুরোনো। ২০২০ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সবশেষ ম্যাচ জিতেছিল বাংলাদেশ। তিন বছর পর লাল বলের ক্রিকেটে আরও একটি জয় পেলো বাংলাদেশ। আইরিশদের বিপক্ষে এই জয়টি এক অর্থে ঐতিহাসিকও বটে। কোনো দলের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট খেলতে নেমে জয়ের অভিজ্ঞতা নেই বাংলাদেশের। সেই হিসেবে আয়ারল্যান্ডকে হারানো একটি ইতিহাসও বটে। সবমিলিয়ে ১৩৭ ম্যাচে বাংলাদেশের এটি ১৭তম জয়। তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ ২-০ এবং টি-টোয়েন্টি সিরিজ ২-১ ব্যবধানে জিতেছিল বাংলাদেশ। এমন দুটি সিরিজ কাটানোর পর নবীন টেস্ট খেলুড়ে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে একমাত্র টেস্ট সিরিজের ফলাফল যে বাংলাদেশের পক্ষেই আসবে সেটি অনুমিতই ছিল। সাকিব-তামিম-মুশফিক-মুমিনুলদের মতো অভিজ্ঞ দলটির বিপক্ষে মাঠে নেমেছিল টেস্টের একঝাঁক নতুন ক্রিকেটার। আয়ারল্যান্ডের এই দলটিতে ৭ জনের টেস্ট অভিষেক হয়েছে। বাংলাদেশের মতো অভিজ্ঞ দলের বিপক্ষে এমন নবীন একটি দল কী করে লড়াই করে? তবে সব হিসাবনিকাশ ওলটপালট করে দিয়ে আয়ারল্যান্ডের নবীন দলটিই তামিম-মুমিনুলদের চোখ রাঙিয়েছে। যদিও শেষ পর্যন্ত শুক্রবার সকালে ইবাদতের দারুণ বোলিংয়ের পর মুশফিকের দায়িত্বশীল ইনিংসে ৭ উইকেটে ম্যাচ জেতে বাংলাদেশ। এতটা নাজুক পরিস্থিতিতে পড়তে হতো না সাকিব আল হাসানের দলকে। বোলিং পরিকল্পনাতে বেশ অগোছালো ছিল বাংলাদেশ। অধিনায়ক সাকিব প্রথম ইনিংসে মোটে করেছিলেন তিন ওভার। দ্বিতীয় ইনিংসে করেছেন মাত্র ১৩ ওভার। অথচ মিরপুর টেস্টে দাপট ছিল স্পিনারদের। তারপরও সাকিব বল যেন করতেই চাইলেন না! দুই ইনিংস মিলিয়ে ১৩ উইকেট শিকার করেছেন স্পিনাররা। তার মধ্যে একাই ৯ উইকেট নিয়েছেন বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল ইসলাম। টস জিতে ব্যাটিং নেওয়া আয়ারল্যান্ড প্রথম ইনিংসে ২১৪ রান সংগ্রহ করে। অভিষিক্ত হ্যারি টেক্টর হাফ সেঞ্চুরির (৫০) দেখা পান। কার্টিস ক্যাম্ফার (৩৪) ও লরকান টাকার (৩৭) তাদের প্রতিভা দেখানোর চেষ্টা করেছেন। দারুণ দৃঢ়তা দেখিয়ে দলের স্কোরকে সমৃদ্ধ করতে ভূমিকা রাখেন তারা। এরপর স্বাগতিকরা ব্যাটিংয়ে নেমে বড় সংগ্রহ করতে পারেনি। ছোট দলগুলোর বিপক্ষে বড় দলগুলোর যে ব্যাটিং অ্যাপ্রোচ থাকে, সেটির অভাব স্পষ্ট দেখা গেছে এই টেস্টে। তামিম ইকবাল, সাকিব আল হাসান, লিটন দাস ও মুমিনুল হকদের মতো ব্যাটাররা আইরিশদের নখদন্তহীন বোলিংয়ের বিপক্ষেও নিজেদের সেরাটা দিতে পারেননি। লিটন ৮৭ রান করে সেঞ্চুরি মিস করেন। সাকিব দারুণ ব্যাটিং করেও ইনিংসটাকে বড় করতে পারেননি। অভিজ্ঞ তামিম ও মুমিনুল ছিলেন পুরোপুরি ব্যর্থ। তবে মুশফিক ছিলেন দুর্দান্ত। প্রথম ইনিংসের ক্যারিয়ারের দশম সেঞ্চুরি তুলে নেন তিনি। প্রথম ইনিংসে মুশফিকের ১২৬ রানেই বাংলাদেশের ৩৬৯ রানে বড় ভূমিকা রাখে। তবে এমন পরিস্থিতিতে অন্য দলগুলো অন্তত ৫০০ রান করবে। সংগ্রহটা এমন হলে আইরিশদের বিপক্ষে ঢাকা টেস্টটি অনায়াসেই ইনিংস ব্যবধানে জিততে পারতো বাংলাদেশ। কিন্তু সেটি হয়নি ব্যাটারদের কিছুটা উদাসীনতার কারণেই! উল্টো আইরিশ ব্যাটাররা দেখিয়েছে কীভাবে ক্রিজ আঁকড়ে থেকে লড়াই করতে হয়। আইরিশদের করা ২১৪ রানের জবাবে খেলতে নেমে বাংলাদেশে প্রথম ইনিসে ১৫৫ রানের লিড নেয়। দ্বিতীয় দিন শেষ বিকালে আয়ারল্যান্ড ব্যাটিংয়ে নেমে দুই বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল ও সাকিবের ঘূর্ণিতে ৪ উইকেটে ২৭ রান করে সফরকারীরা। মনে হচ্ছিলো ম্যাচটি বুঝি তৃতীয় দিনেই শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু না, সেখান থেকে বৃহস্পতিবার সারা দিন ব্যাটিং করে দাপট দেখায় আইরিশরা। অভিষিক্ত টাকার আগের ইনিংসে ৩৭ রান করলেও দ্বিতীয় ইনিংসে তুলে নেন সেঞ্চুরি। অ্যান্ডি ম্যাকব্রাইন খেলেন ৭২ রানের ইনিংস। প্রথম ইনিংসে ৫০ রান করা টেক্টর দ্বিতীয় ইনিংসে খেলেছেন ৫৩ রানের ইনিংস। সবকিছু মিলিয়ে তৃতীয় দিনে ১৩১ রানের লিড নিয়ে ফেলে মাত্র চতুর্থ টেস্ট খেলতে নামা দলটি। শুক্রবার সকালে অনেক শঙ্কা নিয়েই মাঠে নেমেছিল বাংলাদেশ। কেন না এর আগে ঘরের মাঠে চতুর্থ ইনিংসে ১০১ রান তাড়া করে জয়ের ইতিহাস ছিল বাংলাদেশের। সেখানে তৃতীয় দিনেই আইরিশদের লিড দাঁড়ায় ১৩১ রানে। শুক্রবার সকালে হাতে থাকা দুই উইকেট নিয়ে কতদূর যাবে সেটি নিয়ে ছিল সংশয়। তবে খুব বেশি দূর যেতে পারেনি। শুরুর ৫০ মিনিটে ৯ ওভারে মাত্র ৬ রান তুলতেই অলআউট হয় আয়ারল্যান্ড। ১৩৮ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে আক্রমণাত্মকই শুরু করেছিল বাংলাদেশ। ওপেনিংয়ে তামিমের সঙ্গী হয়েছিলেন লিটন। ঝড়ো ব্যাটিংয়ের পর অদ্ভুতভাবে আউট হয়ে সাজঘরে ফেরেন ১৯ বলে ২৩ রান করা লিটন। তিন নম্বরে নেমে শান্ত বেশি কিছু করতে পারেননি। তামিমও আউট হয়েছেন বাজে শটে। কিন্তু আগের ইনিংসে সেঞ্চুরিয়ান মুশফিক ছিলেন অনবদ্য, ১২৬ রানের ইনিংসের পর শুক্রবার (৭ এপ্রিল) খেললেন ৫১ রানের ইনিংস। আর তাতেই ৩ বছর পর টেস্ট পরীক্ষায় পাস করলো বাংলাদেশ।