অনলাইন ডেস্ক :
প্রেক্ষাপট বাংলাদেশের, নির্মাতা থেকে শুরু করে শিল্পী-কুশলী সিংহভাগই এ দেশের; অথচ সেই সিনেমা মুক্তির আলো দেখলো দূর উত্তর আমেরিকায়! হ্যাঁ, বলা হচ্ছে মোস্তফা সরয়ার ফারুকী পরিচালিত সিনেমা ‘শনিবার বিকেল’র কথা। যে ছবিটি গত চার বছরের বেশি সময় আটকে রয়েছে সেন্সর বোর্ডে। বিপরীতে গত ১০ মার্চ এটি যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার ৭১টি হলে মুক্তি পেয়েছে। সাধারণত দেশে মুক্তি পাওয়া কোনো সিনেমা যখন সাড়া পায়, দর্শকপ্রিয়তা পায়, তখনই সেটা বিদেশে মুক্তি দেওয়া হয়। কারণ ছবিটি ঘিরে প্রবাসী বাঙালিদের মনেও আগ্রহ জাগে। কিন্তু এই প্রথম এমন ঘটলো, দেশের আগে বিদেশে মুক্তি পেলো দেশেরই একটি সিনেমা। ফলে এর দর্শক প্রতিক্রিয়া একটু বিশেষ বটে। সোশ্যাল মিডিয়ার সূত্রে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার সিনেমা হলগুলোর খবরাখবর ভেসে আসছে দেশেও। তাতে আঁচ করা যাচ্ছে, ‘শনিবার বিকেল’-এ মুগ্ধ হচ্ছেন দর্শক। হলগুলোতে দর্শকের উপস্থিতিও রীতিমতো বিস্ময়কর। শনিবার ফারুকী জ্যামাইকা মাল্টিপ্লেক্সের চিত্র শেয়ার করেন ভক্তদের সঙ্গে। তাতে দেখা যায়, হলের অধিকাংশ আসনই পূর্ণ। দর্শকের এমন সাড়ায় উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে ফারুকী বলেছেন, ‘যারা শো শেষে আবেগ-অনুভূতি জানিয়েছেন, আপনারা জানবেন আপনাদের প্রত্যেকটা কথা আমার চার বছরের দুঃখ গায়েব করে দিয়েছে। একটাই দুঃখ আমার টিমের সদস্যরা কেউ এখানে বসে এই অনুভূতিগুলো উপভোগ করতে পারলো না।’ ‘শনিবার বিকেল’ দেখার পর মুগ্ধতা প্রকাশ করেছেন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর সাবেক উপপ্রেস সচিব আশরাফুল আলম খোকন। সোশ্যাল হ্যান্ডেলে লিখেছেন, “শনিবার বিকালের শোতেই বহুল আলোচিত সিনেমা ‘শনিবার বিকেল’ দেখলাম। শুধু আমি না, নিউইয়র্কের জ্যামাইকা সিনেপ্লেক্স ভর্তি দর্শক ছিলো। খুঁজে পাচ্ছি না, কেন বারবার ছবিটি আটকে দেয়া হচ্ছে, কেন সেন্সর পাচ্ছে না। এই ছবিটিতে জঙ্গিদের প্রতি ঘৃণা দেখানো হয়েছে। ইসলাম ধর্মের নামে তারা যে কতটা ভ- ও হিং¯্র হতে পারে, তা প্রাধান্য পেয়েছে। এই ছবিতে ইসলাম ধর্মের উদারতার চিত্রও ফুটে উঠেছে। এই ছবিতে প্রগতিশীল মানুষগুলোর চরিত্রের দৃঢ়তা, সাহস ও মহানুভবতা প্রকাশ হয়েছে। বর্তমান সরকার যে জঙ্গিবাদ বিরোধী, তাও সুন্দরভাবে চিত্রায়িত হয়েছে। ছবিটির গল্প ও নির্মাণ এক কথায় অসাধারণ। ইন্তেখাব দিনার, ইরেশ যাকের, নুসরাত ইমরোজ তিশাসহ সবাই দুর্দান্ত অভিনয় করেছেন। আমরা যারা অসাম্প্রদায়িক জঙ্গিবাদ মুক্ত একটা বাংলাদেশ চাই, তাদের সকলেরই এই সিনেমাটা দেখা উচিত। আপনি জঙ্গিবাদে বিশ্বাসী হলে এই সিনেমা দেখার দরকার নাই।” নিউইয়র্ক প্রবাসী, অভিনেতা ও নির্মাতা শেখ তানভীর আহমেদ দীর্ঘ পোস্টে ছবিটির প্রতি ভালোলাগা প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, “এ চলচ্চিত্রটি উপভোগ করে দর্শক হিসেবে অত্যন্ত তৃপ্ত, ভালোলাগা আর চিন্তার একটা ঘোর নিয়ে বাড়ি ফিরেছি। ভাবতেই ভালো লাগে যে আমাদের একজন মোস্তফা সরয়ার ফারুকী আছেন। তার নির্মাণশৈলী বরাবরের মতো মুগ্ধ হয়ে দেখেছি। আপনি ভাবতে পারবেন না যে, পুরো একটা সিনেমা নির্মিত হয়েছে মাত্র একটি শটে! তার মানে এটি সম্পূর্ণ একটি আনকাট সিনেমা। এই চলচ্চিত্রের সবগুলো চরিত্র অনেক জীবন্ত আর প্রাণবন্ত লেগেছে। বিশেষ করে নুসরাত ইমরোজ তিশা আপুর চরিত্রায়ন ছিলো অসাধারণ। সিনেমাটি দেখতে দেখতে মনে পড়ছিলো তিশা আপুর সঙ্গে তৌকীর আহমেদ ভাইয়ার ‘ফাগুন হাওয়ায়’ চলচ্চিত্রে কাজ করার অভিজ্ঞতার কথা। কী সাবলীল তার অভিনয়, এর সঙ্গে অসাধারণ ব্যক্তিত্ব। এছাড়াও মামুনুর রশীদ, জাহিদ হাসান, ইন্তেখাব দিনারসহ ওপার বাংলার পরমব্রত আর বিশেষ করে ইরেশ যাকেরের অভিনয় মনে রাখবার মতো।” যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত জনপ্রিয় কনটেন্ট ক্রিয়েটর প্রিসিলাও ‘শনিবার বিকেল’ দেখেছেন। এরপর ফারুকীকে নিয়ে একটি লাইভও করেছেন নিজের ফেসবুক পেজ থেকে। ছবিটি নিয়ে প্রিসিলার মন্তব্য এরকম, ‘ছবিটা আমি দেখেছি। সত্যি বলতে, এটা এমন একটা ছবি, যেটা দেখা কঠিন! কিন্তু বাস্তবিক এবং প্রভাব বিস্তারকারী। পছন্দ করেছি বললে কম বলা হবে, এটা অনেক দ্যুতিময় একটি ছবি। নিউইয়র্কে বাংলা ছবি খুব বেশি দেখানো হয় না। এজন্য আমি ‘শনিবার বিকেল’ টিমকে ধন্যবাদ জানাই সুযোগটা করে দেওয়ার জন্য।’ এরকম আরও অনেকেই ‘শনিবার বিকেল’র প্রতি নিজ নিজ ভালোলাগার কথা জানাচ্ছেন। কেউ সরাসরি ফারুকীকে বলছেন, কেউ বেছে নিচ্ছেন সোশ্যাল হ্যান্ডেল। বলা জরুরি, ঢাকার গুলশানের হোলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার ঘটনার ছায়া অবলম্বনে নির্মিত হয়েছে ‘শনিবার বিকেল’। এতে অভিনয় করেছেন বাংলাদেশের নুসরাত ইমরোজ তিশা, মামুনুর রশীদ, ইরেশ যাকের, ফিলিস্তিনের ইয়াদ হুরানি, ভারতের পরমব্রত চ্যাটার্জি প্রমুখ। ছবিটি প্রযোজনা করেছে বাংলাদেশের জাজ মাল্টিমিডিয়া ও ছবিয়াল এবং জার্মানির ট্যান্ডেম প্রোডাকশন। ভারতের প্রতিষ্ঠান রিলায়েন্স এন্টারটেইনমেন্টের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় ছবিটি পরিবেশনা করছে সিঙ্গাপুরভিত্তিক প্রতিষ্ঠান কন্টিনেন্টাল এন্টারটেইনমেন্ট পিটিই লিমিটেড (সিইপিএল)। বাংলাদেশের সেন্সর বোর্ডে প্রায় চার বছর ধরে ছবিটি আটকে আছে। কিছুদিন আগে দ্বিতীয় দফায় ছবিটি দেখে ফিল্ম সেন্সর আপিল কমিটি। তারা এর মুক্তির পক্ষে সায় দেন। কিন্তু এরপরও মন্ত্রণালয়জনিত জটিলতায় মুক্তির বার্তা পাচ্ছে না ছবিটি।
আরও পড়ুন
ইউটিউব থেকে সরানো হলো শাকিবের ‘তুফান’
চিন্তিত অনন্যা পান্ডে
কনাকে নিয়ে সুখবর দিলেন আসিফ