July 27, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Thursday, October 5th, 2023, 3:31 pm

শাহজাদপুরে চাঞ্চল্যকর রাসেল হত্যার রহস্য উদঘাটন; হত্যাকারী জাহাঙ্গীর গ্রেফতার

জেলা প্রতিনিধি, সিরাজগঞ্জ (শাহজাদপুর):

সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে রাসেলের ভ্যান ছিনতাই করতেই হত্যা করেছে মো. জাহাঙ্গীর হোসেন। এ তথ্য নিশ্চিত করে বৃহস্পতিবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে সিরাজগঞ্জ সহকারী পুলিশ সুপার (শাহজাদপুর সার্কেল) মো. কামরুজ্জামান জানান- গত ১ অক্টোবর বিকালে মৃত রাসেল তার ব্যাটারি চালিত ভ্যান নিয়ে বাসা থেকে বের হয়। এরপর রাসেল রাত গভীর হয়ে গেলেও বাসায় ফিরে না আসলে তারা বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুজি করে। কোথাও খুজে না পেয়ে তার পরিবার হয়ে পড়ে দিশেহারা।

এরপর গত ৩ অক্টোবর বিকাল সাড়ে ৪টার সময় উপজেলার পোতাজিয়া ইউনিয়নের মন্ডলপাড়াস্থ জনৈক আব্দুল হাকিমের ধান ক্ষেত থেকে অজ্ঞাতনামা ১৫ বছর বয়সী এক যুবকের অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার কওে থানা পুলিশ। ঘটনাটি এলাকায় ব্যপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। অজ্ঞাতনামা যুবকের পরিচয় শনাক্ত করাসহ তার হত্যাকারী গ্রেফতারের জন্য অভিযানে নেমে পড়ে। বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় গুরুত্ব সহকারে উক্ত বিষয়টি প্রচার করে।

৪ অক্টোবর মৃত রাসেলের পরিবার ফেসবুকের মাধ্যমে জানতে পেরে থানায় এসে ভিকটিমের লাশ দেখে চিহ্নিত করে। ভিকটিমের নাম মো. রাসেল (১৫), পিতা- মো. রবিউল ইসলাম, সাং-ডেমরা, থানা-ফরিদপুর, জেলা-পাবনা। এ ঘটনায় মৃত রাসেলের বাবা বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামী করে শাহজাদপুর থানায় একটি লিখিত এজাহার দায়ের করেন।

মামলা দায়েরের পর ঐদিন রাতেই সিরাজগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার মো. আরিফুর রহমান মন্ডল, বিপিএম (বার), পিপিএম (বার) এর দিক নির্দেশনায় এবং শাহজাদপুর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. কামরুজ্জামান, পিপিএম-সেবা ও শাহজাদপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মো. খায়রুল বাশার এর তত্ত্বাবধানে শাহজাদপুর থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) মো. শাখাওয়াত হোসেন ও এসআই শারফুল ইসলামের নেতৃত্বে শাহজাদপুর থানা পুলিশের একটি টিম মন্ডলপাড়া এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ঘটনার সাথে জড়িত উপজেলার মন্ডলপাড়া গ্রামের মো. সাঈদ মন্ডলের ছেলে মো. জাহাঙ্গীর হোসেনকে গ্রেফতার করে। তার দেখানো মতে মৃত রাসেলের মোবাইল, ভ্যানের চাবি ও ভ্যান বিক্রির নগদ ৫ হাজার ৫০০ টাকা, ৪ টি ব্যাটারি এবং হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত লুংগি ও বাঁশের লাঠি উদ্ধারপূর্বক জব্দ করেন।

পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যার কথা স্বীকার করে খায়রুল বাশার জানিয়েছে- সে পেশায় একজন সিএনজি চালক ছিল। গত ৫ বছর আগে সে তার সিএনজি বিক্রি করে দেয়। এরপর সে রাজমিস্ত্রীর কাজ করত। কিন্তু অল্প আয়ে তার সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়ে। অভাবের তাড়নায় সে ভ্যান ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করে। সেই পরিকল্পনা মোতাবেক সে গত ১ অক্টোবর বিকালে ডেমরা বাজারে যায় এবং টার্গেট খুজতে থাকে। রাত সাড়ে ৭ টার দিকে মৃত রাসেলকে ভ্যানসহ দেখতে পেয়ে চরাচিথুলিয়া মন্ডলপাড়ায় ঘষি (গোবরের তৈরি) নিয়ে আসার জন্য ৭০ টাকা চুক্তি করে তার ভ্যানে ওঠে। এরপর রাত ৮ দিকে মন্ডলপাড়া এলাকায় এসে ভ্যান থামায়ে পাশেই মাঠের মধ্যে বস্তা আছে মর্মে তাকে নিয়ে মাঠের মধ্যে যায়। তারপর বালুর মাঠে গিয়ে রাসেলকে মেরে ফেলার ভয় দেখায়। পাশে থাকা একটি বাশের লাঠি দিয়ে রাসেলের মাথার বাম পাশে আঘাত করলে রাসেল মাটিতে পড়ে যায়। এরপর সে রাসেলের পরিধেয় লুংগি তার গলায় পেচিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে। এসময় রাসেলের পকেটে থাকা মোবাইল ও ভ্যানের চাবি নিয়ে লাশ টেনে ধান ক্ষেতের মধ্যে নিয়ে ফেলে রাখে। রাস্তায় এসে ভ্যান নিয়ে চলে যায়।

গ্রেফতারকৃত আসামী জাহাঙ্গীর এর বিরুদ্ধে শাহজাদপুর থানাতে তিনটি চুরি মামলা রয়েছে। সে রাসেলকে হত্যা করার কথা স্বীকার করেছে। তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।