October 13, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Thursday, October 21st, 2021, 7:55 pm

শিখন ঘাটতির ঝুঁকিতে বিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা

ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

করোনা মহামারির কারণে গত বছরের ১৮ মার্চ থেকে দেড় বছরের বেশি সময় বন্ধ ছিল সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এই সময়ে অনেক শিক্ষার্থী অনিয়মিত পড়ালেখা করেছে, কেউ কেউ আবার পড়ালেখাই করেনি। এমন শিক্ষার্থীরাই আছে শিখন ঘাটতির (লার্নিং লস) ঝুঁকিতে। প্রাথমিকের ২২ শতাংশ এবং মাধ্যমিকের ৩০ শতাংশ শিক্ষার্থী রয়েছে শিখন ঘাটতির ঝুঁকিতে।
পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি) ও ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বিআইজিডি) এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে। গবেষণার উদ্দেশ্য ছিল ২০২১ সালের মার্চ থেকে আগস্ট পর্যন্ত শিশুদের শিক্ষাজীবনে কী কী পরিবর্তন এসেছে তা জানা। মঙ্গলবার পিপিআরসির নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. হোসেন জিল্লুর রহমান ও বিআইজিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ইমরান মতিন ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে ওই গবেষণার তথ্য প্রকাশ করেন।
ড. হোসেন জিল্লুর রহমানের মতে, করোনায় আর্থিক ঝুঁকি এবং স্বাস্থ্যঝুঁকির মতো মানবসম্পদের সংকটও গুরুত্বপূর্ণ। পুনর্বাসন ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ব্যতিরেকে শুধু স্কুল খুললে লার্নিং লস এবং ঝরে পড়ার ঝুঁকি মোকাবেলা করা যাবে না, বরং তিনি মনে করেন, শিক্ষা খাতে জরুরি অবস্থা মোকাবেলায় নতুন পদ্ধতি উদ্ভাবন করা দরকার। একই সঙ্গে এ খাতে যে সমস্যা দেখা দিয়েছে তার বাস্তবায়নযোগ্য সমাধানও প্রয়োজন। লার্নিং লস বা শিখন ঘাটতি এবং মানসিক চাপ প্রতিরোধ করার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এখনকার অবস্থাকে জরুরি হিসেবে না দেখলে দীর্ঘমেয়াদে আগামী বছরগুলোর উন্নয়ন এবং লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে এটি অনেক বড় বাধা হয়ে দাঁড়াবে।’
জরিপের তথ্য মতে, অনেক শিক্ষার্থী নিজে নিজেই পড়াশোনা করে, কেউ কেউ অনিয়মিতভাবে পড়াশোনা করে অথবা একেবারেই পড়াশোনা করে না। গবেষকদের মতে, এমন শিক্ষার্থীরাই আছে শিখন ঘাটতি বা লার্নিং লসের ঝুঁকিতে। গ্রাম ও শহুরে বস্তি এলাকায় চলতি বছরের মার্চ থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে শিখন ঘাটতি বা লার্নিং লসের ঝুঁকি বৃদ্ধি পেয়েছে। লার্নিং লস বা শিখন ঘাটতির এ প্রবণতা আবার মাধ্যমিকে পড়ুয়া কিশোরদের মধ্যে বেশি দেখা গেছে। মার্চে তাদের মধ্যে এ ঝুঁকি ২৬ শতাংশে থাকলেও আগস্টে তা বেড়ে ৩৪ শতাংশে দাঁড়ায়।
এতে আরো জানানো হয়, দূরশিক্ষণের মূল উপায় হলো টেলিভিশনে রেকর্ড করা ক্লাস এবং অনলাইন ও সরাসরি অনলাইন ক্লাস। তবে এসব ক্লাসে থাকার সুযোগ খুব কম শিক্ষার্থীরই হয়েছে। প্রাথমিকে পড়ুয়া ৫৬ এবং মাধ্যমিকে পড়ুয়া ৬৫ শতাংশ শিক্ষার্থী মার্চে গৃহশিক্ষকের কাছে পড়লেও কিংবা কোচিং করলেও আগস্টে সেই হার কমে দাঁড়ায় যথাক্রমে ৪৮ এবং ৪৩ শতাংশে। আগের মতো সবকিছু চালু হওয়ায় ও জীবিকার তাগিদে কাজে যোগ দেয়ার কারণে মার্চের তুলনায় পরবর্তী সময়ে শিক্ষা খাতে পরিবার থেকে সহায়তার হারও কমেছে। বিশেষত মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীরাই এর ভুক্তভোগী। অবশ্য আগস্টে সরাসরি যোগাযোগ করে বা সরাসরি যোগাযোগ না করেÑ এ দুই পদ্ধতির মিশ্রণে অ্যাসাইনমেন্ট করার ব্যাপারটি গ্রহণযোগ্যতা পায়। আগস্টে ১৮ শতাংশ প্রাথমিক ও ৩৮ শতাংশ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থী এ সুবিধা পেয়েছে। স্কুল বন্ধ থাকার কারণে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শিক্ষকদের যোগাযোগ তেমন না থাকলেও অ্যাসাইনমেন্ট জমা দেয়ার সময় যোগাযোগ হতো।
দূরশিক্ষণের মূল উপায় হলো টেলিভিশনে রেকর্ড করা ক্লাস এবং অনলাইন ও সরাসরি অনলাইন ক্লাস। তবে এসব ক্লাসে থাকার সুযোগ খুব কম শিক্ষার্থীরই হয়েছে। প্রাথমিকে পড়ুয়া ৫৬ এবং মাধ্যমিকে পড়ুয়া ৬৫ শতাংশ শিক্ষার্থী মার্চে গৃহশিক্ষকের কাছে পড়লেও কিংবা কোচিং করলেও আগস্টে সেই হার কমে দাঁড়ায় যথাক্রমে ৪৮ ও ৪৩ শতাংশে।
পিপিআরসি-বিআইজিডির গবেষণায় দেখা গেছে, শিখন ঘাটতি বা লার্নিং লসের এই সমস্যার পেছনে আর্থসামাজিক অসমতার একটি ভূমিকা রয়েছে। গবেষণায় প্রথমে একজন শিক্ষার্থীর লার্নিং লসের সঙ্গে তার মায়ের শিক্ষাগত যোগ্যতার সম্পর্ক দেখা হয়। যেমন যে মায়েরা কখনও স্কুলে যাননি, তাদের সন্তানরা শিক্ষিত মায়েদের সন্তানদের তুলনায় বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে। গৃহশিক্ষক কিংবা কোচিং সুবিধা করোনা মহামারীর আগেও পেয়েছে, এমন শিক্ষার্থীদের অধিকাংশই মহামারী চলাকালীনও সেই সুযোগ পেয়েছে। গ্রামে ৪৪ শতাংশ পরিবারে এবং শহরের বস্তিতে ৩৬ শতাংশ পরিবারে অনলাইন শিক্ষা গ্রহণের জন্য যে উপকরণ দরকার, তার ব্যবস্থা নেই।
উল্লেখ্য, গত ১২ সেপ্টেম্বর থেকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় খুললেও এখনও অনেক শিক্ষার্থী অনুপস্থিত। শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে সম্প্রতি শিক্ষকদেরকে ১১ দফা নির্দেশনা দিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
নির্দেশনায় বলা হয়, প্রত্যেকটি বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত শিক্ষার্থীদের বিস্তারিত তথ্য একটি রেজিস্টারে সংরক্ষণ করতে হবে। এতে শিক্ষার্থীর নাম, শ্রেণি, রোল, ঠিকানা, মোবাইল নম্বর, কী কারণে অনুপস্থিত, গৃহীত পদক্ষেপসহ অন্যান্য বিষয় সম্বলিত থাকবে। শিক্ষকরা অনুপস্থিত শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ স্থাপন করে উপস্থিতি নিশ্চিত করবেন। প্রয়োজনে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি নিশ্চিতকরণে হোম ভিজিট বা অন্য কোনো মাধ্যমে যোগাযোগ করতে হবে। প্রত্যেকটি বিদ্যালয়কে শিক্ষার্থীদের দৈনিক উপস্থিতির (শ্রেণিভিত্তিক) হার নিয়মিতভাবে সংরক্ষণ করতে হবে। শিক্ষার্থী উপস্থিতির ঘাটতির বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
এছাড়া কোভিড-১৯ প্রভাবজনিত শিখন ঘাটতি পূরণে শ্রেণিভিত্তিক শিক্ষার্থীদের যোগ্যতা যাচাই করে বিভিন্ন দলে ভাগ করে (যেখানে সম্ভব) শ্রেণির শিক্ষক ও বিষয় শিক্ষককে পাঠ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হবে। শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন দলে ভাগ করে যোগ্যতা অনুযায়ী অক্ষর চেনা, যুক্তাক্ষর, উচ্চারণ, শুদ্ধ ও সাবলীলভাবে বাংলা-ইংরেজি পাঠ্যবই পড়তে পারা শুদ্ধভাবে বাংলা বাক্য লিখতে পারা সংখ্যার জ্ঞান, নামতা, গাণিতিক দক্ষতা প্রভৃতি ঘাটতি পূরণ করতে হবে।
নির্দেশনায় আরও বলা হয়, অনলাইন ক্লাস চলমান থাকবে এবং সংসদ বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেতারে সম্প্রচারিত ‘ঘরে বসে শিখি’র পাঠদান কার্যক্রমে শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করবে। শিক্ষার্থীর ধারাবাহিক মূল্যায়নে শ্রেণির কাজ, বাড়ির কাজ (ওয়ার্ক সিট) যাচাইকরণে ও ঘাটতি নিরূপণে শিক্ষকদের সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। প্রধান শিক্ষক, শ্রেণি শিক্ষক, বিষয় শিক্ষক এবং কর্মচারীকে শিক্ষার্থীদের মনোসামাজিক স্বাস্থ্যের প্রতি গুরুত্বারোপ করে সহনশীল ও মানবিক আচরণ করতে হবে। রুটিন অনুযায়ী যে শিক্ষকের শ্রেণি পাঠদান কার্যক্রম থাকবে না, তারা বিদ্যালয়ে বসে অবশিষ্ট তিনটি শ্রেণির জন্য গুগলমিটে অনলাইন পাঠদান (যেখানে সম্ভব) কার্যক্রম পরিচালনা করবেন। সব ক্ষেত্রে সরকার নির্দেশিত স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।