October 13, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Sunday, September 3rd, 2023, 9:10 pm

শিশুদের ইন্টারনেট আসক্তি ঠেকাতে নতুন গাইডলাইন চীনের

অনলাইন ডেস্ক :

মোবাইল ফোনে এবং অ্যাপে শিশুদের ইন্টারনেট আসক্তি ঠেকাতে একটি গাইডলাইন তৈরি করেছে চীন সরকার। বাবা-মায়েদের অনুমতি নিয়ে গাইডলাইনটি বাস্তবায়ন করা হবে। তবে সমালোচকেরা বলেছেন, এমন গাইডলাইনের বাস্তবায়ন হলে দেশটিতে প্রযুক্তির মাঝে বেড়ে উঠা প্রজন্মের তথ্যে প্রাপ্তির বিষয়টি সীমিত হয়ে পড়বে। মোবাইল ফোন এবং অ্যাপ ব্যবহারে শিশুরা যেন আসক্ত হয়ে না পড়ে সেজন্য স্মার্টফোনে এবং মোবাইল অ্যাপে নতুন ফিচার যুক্ত করার লক্ষ্যে একটি গাইডলাইন তৈরি করেছে চীন সরকার। প্রস্তাবিত গাইডলাইনটি বাস্তবায়ন হলে, স্মার্টফোন এবং অ্যাপে একটি বিল্ট ইন মাইনর মোড থাকবে। এর ফলে প্রতিদিন শিশুরা দুই ঘণ্টার বেশি মোবাইল ইন্টারনেট চালাতে পারবে না।

গত শনিবার এই সংক্রান্ত আইনি বিষয়াদি শুরু করার কথা চীন সরকারের। গাইডলাইনটি বলছে, ব্যবহারকারীর বয়স অনুযায়ী ইন্টারনেট ব্যবহারের সময় মাইনর মোডের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা হবে। আট বছরের কম বয়সিদের বেলায় দিনে ৪০ মিনিট ব্যবহারের সুযোগ প্রদানের প্রস্তাব করা হয়েছে। তাছাড়া ১৮ বছরের কম বয়স্করা রাত ১০টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত কোনো ধরনের গেজেট ব্যবহার করতে পারবে না। নতুন এই গাইডলাইন বাস্তবায়ন করা হবে কি না বা বাস্তবায়ন করা হলে শিশুদের তা ব্যবহারের সময়সীমা কতটুকু হবে সে বিষয়ে বাবা-মায়েদের সিদ্ধান্ত দেওয়ার সুযোগ রয়েছে।

খসড়া এই গাইডলাইনটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘কনটেন্ট সিকিউরিটি’। অর্থাৎ অনলাইনের ইনফরমেশন সামাজিক মূল্যবোধের সাথে সংগতিপূর্ণ হতে হবে যা চীন সরকার মনে করছে শিশুদের নৈতিকতার বিকাশে সহায়ক হবে। দেশটির সাইবারস্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন সম্প্রতি এই গাইডলাইনটি প্রকাশ করে।
বাবা-মায়েদের সম্মতি : চীন সরকারের এই গাইডলাইনে সম্মতি প্রকাশ করেছেন বাবা-মায়েরা। প্রস্তাবনা শিশুদের বিকাশের জন্য বেশ ভালো বলে মন্তব্য অনেকের। কং লিংমান নামে এক বাবা বলেন, ‘আমার হয় মনে প্রস্তাবনাটি সত্যিই ভালো।’ সাংহাইয়ে কর্মরত এই অভিভাবক ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘মোবাইল ফোনে শিশুদের অতিরিক্ত সময় কাটানোর ফলে তারা তাদের পরিবারের সাথে যে সময়টি কাটানোর কথা সেটি হারিয়ে যায়।’ সরকারের প্রস্তাবের সমর্থকদেরকে অবশ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ওয়াইবোতে এ বিষয়ে ইতিবাচক মন্তব্য করতে দেখা গেছে।

সরকারের বিভিন্ন পোস্টের নিচে অনেকেই এটিকে ‘ভালো উদ্যোগ’ বলে মন্তব্য করেছেন। তবে সরকারের এই পদক্ষেপের সমালোচনাও কম নয়। এক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীর মন্তব্য ছিল এরকম-সবকিছুই নিয়ন্ত্রণ করার অর্থ হলো কোনো কিছুই ঠিকমত নিয়ন্ত্রণ না করা। চীনের রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত মিডিয়ার ওয়াইবো অ্যাকাউন্টের পোস্টের নিচে করা এই মন্তব্যে হাজার হাজার লাইক পড়তে দেখা গেছে। যদিও এই নিয়মটি বাস্তবায়ন করা হবে কি না সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন বাবা-মায়েরা তবে গবেষকেরা বলছেন, এই নিয়ন্ত্রণ শিশুদের উপর কী প্রভাব ফেলবে সেটি এখনো বোঝা যাচ্ছে না।

তবে এই প্রস্তাবনার প্রভাব ইতোমধ্যেই প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর উপর পড়তে শুরু করেছে। গাইডলাইনটি প্রকাশের দিনে হংকংয়ের শেয়ার মার্কেটের দেশটির বেশ কয়েকটি ইন্টারনেট কোম্পানির শেয়ারের দাম কমে গিয়েছে। এরমধ্যে আছে ওয়াইবো, ভিডিও স্ট্রিমিং অ্যাপ বিলিবিলি এবং ভিডিও শেয়ারিং অ্যাপ কাউশো ইত্যাদি। নতুন প্রস্তাবনার ফলে প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোকে সরকারের নিয়ম মানতে ইউজার সেটিংয়ে পরিবর্তন আনতে হবে। এ বিষয়ে তাইওয়ানের ইয়াং-মিং চিয়াও-টুং বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিউনিকেশন অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তাই ইউ-হুই বলেন, ‘এটি চীনের প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য আরেকটি প্রতিবন্ধকতা।’ তিনি বলেন, ‘যেহেতু গাইডলাইনটি কোনো ধরনের সংজ্ঞা দেওয়া ছাড়া অবৈধ ওবং মানসিকভাবে ক্ষতিকর ইনফরমেশনের কথা বলছে, সরকারের এই গাইডলাইন মেনে নিতে প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠানগুলো সেল্ফ সেন্সরশিপের আশ্রয় নিতে পারে।’