অনলাইন ডেস্ক :
ওয়েস্ট ইন্ডিজের অভিজ্ঞতম পেসার কেমার রোচের ৪ ওভার থেকে রান এলো ৪৬। আরেক পেসার আলজারি জোসেফের ৪ ওভারে ৩৭। যদিও পোশাক সাদা আর বল লাল, কিন্তু ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা মেতে উঠলেন টি-টোয়েন্টি ব্যাটিংয়ের উৎসবে। সকালে মোহাম্মদ সিরাজের দুর্দান্ত বোলিংয়ের পর ব্যাটসম্যানদের স্ট্রোকের ছটায় যেন প্রাণ ফিরল ম্যাচে। মন্থর তিনটি দিনের পর বৃষ্টিবিঘিœত চতুর্থ দিনে ম্যাচের পালাবদল হলো নাটকীয়ভাবে। অপেক্ষা এখন শেষ দিনের জমজমাট লড়াইয়ের। পোর্ট অব স্পেন টেস্টের শেষ দিনে জয়ের জন্য ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রয়োজন ২৮৯ রান, ভারতের দরকার ৮ উইকেট। সিরিজে সমতা ফেরাতে জয় ছাড়া উপায় নেই ক্যারিবিয়ানদের। তাদের ব্যাটিংয়ে অবশ্য জয়ের তাড়না নেই এখনও পর্যন্ত। বরং ৮ উইকেট নিয়ে ভারতের ২-০তে সিরিজ জয়ের দিকেই হয়তো বাজি থাকবে বেশি।
তবে আবহাওয়ার যা পূর্বাভাস, সোমবার শেষ দিনে বৃষ্টি বাগড়া দিতে পারে বারবার। ম্যাচের এই যে অবস্থা, একদিন আগেও তা ছিল অনেকটা অভাবনীয়। মন্থর উইকেটে প্রথম তিন দিন শেষে যে ম্যাচের দেড় ইনিংসও শেষ হয়নি! েেমাড় বদলের শুরু চতুর্থ সকালে সিরাজের আগুনে এক স্পেলে। দ্বিতীয় নতুন বল তখনও বেশ চকচকে। সেটি হাতে নিয়ে ধীরগতির উইকেটেও প্রাণের সঞ্চার করেন তিনি। চার ওভারের কম বোলিং করেই শিকার করেন চার উইকেট। শুরুটা করেন যদিও মুকেশ কুমার। অভিষিক্ত এই পেসার দিনের প্রথম ওভারেই ফিরিয়ে দেন ৩৭ রান নিয়ে ক্রিজে থাকা আলিক আথানেজকে। এরপর সিরাজের পালা। টানা দুই ওভারে ফেরান তিনি জেসন হোল্ডার ও আলজারি জোসেফকে।
এরপর এক ওভারে উইকেট না পেলেও পরের ওভারে আদায় করে নেন দুই উইকেট। ৫ উইকেটে ২২৯ রান নিয়ে দিন শুরু করা ওয়েস্ট ইন্ডিজ অলআউট ২৫৫ রানেই! ৬০ রানে ৫ উইকেট নিয়ে থামেন সিরাজ। ২১ টেস্টের ক্যারিয়ারে ৫ উইকেটের স্বাদ পেলেন তিনি দ্বিতীয়বার। আগেরটি ছিল অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ব্রিজবেনে, ৭৩ রানে ৫ উইকেট। সিরাজের সৌজন্যে জয়ের গন্ধ পেয়ে যায় ভারত। দুই ওপেনার রোহিত শর্মা ও যাসাশবি জয়সওয়াল নেমে পড়েন দ্রুত রান তোলার অভিযানে। ইনিংসের প্রথম ওভারেই যখন রোচের বলে ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে এক্সট্রা কাভার দিয়ে ছক্কায় ওড়ান জয়সওয়াল, বার্তাটা তখনই পেয়ে যান সবাই। পরের বলেও তরুণ বাঁহাতি ওপেনার মারেন বাউন্ডারি। রোহিত শর্মা দ্বিতীয় ওভার শুরু করেন বাউন্ডারিতে। ভারতীয় অধিনায়ক পরে দুর্দান্ত সব শটে ছুটতে থাকেন ঝড়ের বেগে। দলের ফিফটি আসে ৫.৩ ওভারেই।
৪টি চার ও ৩ ছক্কায় রোহিত ফিফটি করে ফেলেন ৩৫ বলেই, তার টেস্ট ক্যারিয়ারের যা দ্রুততম। ক্যারিবিয়ান ফিল্ডারদেরও ধন্যবাদ দিতে পারেন তিনি। ২৫ রানে তার সহজ ক্যাচ ছাড়েন শ্যানন গ্যাব্রিয়েল, ২৯ রানে আলিক আথানেজ। গ্যাব্রিয়েলের বলেই শেষ পর্যন্ত ৪৪ বলে ৫৭ করে বিদায় নেন ভারতীয় অধিনায়ক। এরপর বৃষ্টিতে বন্ধ থাকে খেলা। বৃষ্টির পর জয়সওয়ালের ইনিংস শেষ হয় ৩০ বলে ৩৮ রান করে। ১২.২ ওভারে ভারতের শতরান হয়ে যায়। ‘বল বাই বল’ হিসাব রাখার সময় থেকে টেস্ট ক্রিকেটের দ্রুততম দলীয় শতক এটি। দ্রুত রান তোলার আশায় ইশান কিষানকে ব্যাটিং অর্ডারে চারে তুলে আনা হয়। বাঁহাতি এই কিপার-ব্যাটার তা পূরণ করেন পুরোপুরি। দ্বিতীয় টেস্ট খেলতে নামা এই বাঁহাতি প্রথম টেস্ট ফিফটিতে পা রাখেন ¯্রফে ৩৩ বলে। এর মধ্যেও বৃষ্টিতে খেলা বন্ধ থাকে আরেক দফায়। রোচকে টানা দুই বলে ছক্কায় কিষানের ফিফটির পরপর ইনিংস ঘোষণা করে দেন রোহিত শর্মা। শুবমান গিল অপরাজিত থাকেন ৩৭ বলে ২৯ রানে।
স্রেফ ২৪ ওভারে ১৮১ রান তুলে ইনিংস ঘোষণা করে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৩৬৫ রান তাড়ার চ্যালেঞ্জ দেয় ভারত। তবে ক্যারিবিয়ানরা এগোতে থাকে প্রথম ইনিংসের মতো সাবধানী ব্যাটিংয়েই। দুই ওপেনার ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েট ও তেজনারাইন চন্দরপল যথারীতি আঁকড়ে রাখেন উইকেট। ভারতীয় পেসারদের হতাশ করেন তারা। ভারত সাফল্য পায় স্পিনে। রবিচন্দ্রন অশ্বিনকে সুইপ করতে গিয়ে ব্র্যাথওয়েট উইকেট হারান ৫২ বলে ২৮ রান করে। ১৮ ওভারে ৩৮ রানে ভাঙে উদ্বোধনী জুটি। এই অফ স্পিনার পরের ওভারেই শূন্য রানে ফিরিয়ে দেন তিনে নামা অভিষিক্ত ব্যাটসম্যান কার্ক ম্যাকেঞ্জিকে। তবে চন্দরপল ও জার্মেইন ব্ল্যাকউড দিনের বাকি প্রায় এক ঘণ্টায় কোনো বিপদ হতে দেননি। চন্দরপল ২ রান থেকে ৩ রানে যেতে বল খেলেন ২১টি। ৩ রানে থমকে থাকেন আরও ১৬ বল। প্রথম বাউন্ডারির দেখা পান তিনি ৬৩ বল খেলে। দিন শেষে ৯৮ বল খেলে তার রান ২৪। ব্ল্যাকউড তুলনায় ‘অনেক’ দ্রুতগতির। ৩৯ বল খেলে তার রান ২০।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ভারত ১ম ইনিংস: ৪৩৮
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১ম ইনিংস: ১১৫.৫ ওভারে ২৫৫ (আগের দিন ২২৯/৫) (আথানেজ ৩৭, হোল্ডার ১৫, জোসেফ ৪, রোচ ৪, ওয়ারিক্যান ৭*, গ্যাব্রিয়েল ০ ; সিরাজ ২৩.৪-৬-৬০-৫, উনাদকাট ১৬-৩-৪৪-০, অশ্বিন ৩৩-১০-৬১-১, মুকেশ ১৮-৬-৪৮-২, জাদেজা ২৫-১০-৩৭-২)
ভারত ২য় ইনিংস: ২৪ ওভারে ১৮১/২ (জয়সওয়াল ৩৮, রোহিত ৫৭, গিল ২৯*, কিষান ৫২*; রোচ ৪-০-৪৬-০, জোসেফ ৪-০-৩৭-০, হোল্ডার ৪-০-২৬-০, গ্যাব্রিয়েল ৬-০-৩৩-১, ওয়ারিক্যান ৬-০-৩৬-১)
ওয়েস্ট ইন্ডিজ দ্বিতীয় ইনিংস: (লক্ষ্য ৩৬৫) ৩২ ওভারে ৭৬/২ (ব্র্যাথওয়েট ২৮, চন্দরপল ২৪*, ম্যাকেঞ্জি ০, ব্ল্যাকউড ২০*; সিরাজ ৮-২-২৪-০, মুকেশ ৫-৪-৫-০, উনাদকাট ৩-২-১-০, অশ্বিন ১১-২-৩৩-২, জাদেজা ৫-১-১০-০)
আরও পড়ুন
কানপুর টেস্টে মুমিনুলের সেঞ্চুরি, বাংলাদেশের সংগ্রহ ২৩৩ রান
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরার বিয়য়ে যা বললেন তামিম
অক্টোবরে বাংলাদেশে সফরে আসছে দক্ষিণ আফ্রিকা