মামুন হায়দার, টাঙ্গাইল:
টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার বড়চওনা-মরিচা ভায়া মহানন্দপুর আঞ্চলিক সড়কটি যুগের পর যুগ পেরিয়ে গেলেও পাকা না হওয়ায় ২৫টি গ্রামের মানুষেরা পড়েছেন চরম দুর্ভোগে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই সখীপুর উপজেলার উত্তরাঞ্চলের বড়চওনা-মরিচা ভায়া মহানন্দপুর কাঁচা সড়কটি পাকাকরণের দাবি করে আসছেন এলাকাবাসী। এ সড়কটি সামান্য বৃষ্টি হলেই চলাচলে অনুপযোগী হয়ে পড়ে। প্রতিনিয়তই মানুষের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। কাঁচা সড়ক পাকা হবে এ আশায় এলাকাবাসী ৫১ বছর ধরে অপেক্ষায় আছেন। কিন্তু কাঁচা সড়ক আর পাকা হয় না। জনপ্রতিনিধিরা বারবার শুধু প্রতিশ্রুতিই দিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু আজও ওই সড়কটির কোনো উন্নয়ন হয়নি।
কাঁচা সড়কের বেহাল দশা সরেজমিন দেখতে গেলে স্থানীয়রা অসন্তোষ আর ক্ষোভ প্রকাশ করেন। শুকনো মৌসুমে ধুলোবালি আর বর্ষায় কর্দমাক্ত সড়কে হেঁটেও চলা দুষ্কর। সড়কে যাতায়াতকারীদের সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এ সড়ক দিয়ে প্রতিদিন অসংখ্য লোকজনকে কাদা ভেঙে যাতায়াত করতে হয়। ফলে কোনো ভ্যান, সাইকেল, মোটরসাইকেল তো দূরের কথা, মানুষ পায়ে হেঁটে চলতেও কষ্টের শিকার হন। এ সড়ক দিয়ে বড়চওনা, শিশিরচালা, জিতেশ্বরী, বাসারচালা, মহানন্দপুর, মরিচকুড়ি, কইস্টার বাজার, পাগারপাড়, আইলসার বাজার, দুর্গাপুর, মামুদ নগর, সাপিয়ারচালা, মরিচা, তারাকুড়ি, ছাতিয়ারচালা, হারিঙ্গাচালাসহ বিভিন্ন গ্রামের লোকজন যাতায়াত করে থাকে। বিকল্প কোন রাস্তা না থাকায় এলাকাবাসী বাধ্য হয়েই কাদা-পানি মাড়িয়ে প্রতিনিয়ত চলাচল করছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, লালমাটির সড়কটি সামান্য বৃষ্টিতেই কর্দমাক্ত হয়ে যায়। সড়কের বিভিন্ন অংশে সৃষ্টি হয়েছে অসংখ্য ছোট-বড় গর্তের। আর তাতে জমছে পানি। চলাচল করতে পারছে না যানবাহন। পায়ে হেঁটে চলাচল করাও এখন কষ্টসাধ্য। সড়কটি পাকা হলে একদিকে যেমন বিভিন্ন গ্রামের ছাত্র-ছাত্রী ও লোকজনের যাতায়াতে ভোগান্তি কমবে, অন্যদিকে মুমূর্ষু রোগী বহনে বেগ পেতে হবে না। শ্রমজীবী মানুষেরা ভ্যান, অটোরিকশা চালিয়ে সহজে জীবিকা নির্বাহ করতে পারবেন। এলাকার কৃষকরা ধান, পাট, কাঁচা ফসল কম খরচে বাজারে নিয়ে বিক্রি করতে পারবেন।
দুর্গাপুর বাজারের চা-বিক্রেতা পরিমল বর্মণ বলেন, গ্রমের পাশ দিয়ে চলে যাওয়া কাঁচা সড়কটি দীর্ঘদিনেও পাকা করা হয়নি। বর্ষা মৌসুমে কর্দমাক্ত সড়ক দিয়ে গ্রামবাসীকে চলাচল করতে হয়। আশপাশের কয়েকটি গ্রামে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মানুষ বসবাস করে। এখানকার মানুষজন কৃষির ওপর নির্ভরশীল। সড়ক চলাচলের অনুপযোগী হওয়ায় তাদের উৎপাদিত কৃষিপণ্য হাটে বাজারে নিয়ে যেতে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। বহনে গুনতে হয় তিন গুন ভাড়া।
মামুদ নগর গ্রামের বাসিন্দা আবুল কাশেম ও মিহির চন্দ্র বর্মণ বলেন, বর্ষা মৌসুমে ছাত্র-ছাত্রীদের স্কুলে ও রোগীদের হাসপাতালে আশ্-াযাওয়ায় কষ্টের শেষ থাকে না।
দুর্গাপুর গ্রামের বাসিন্দা শামসুল হক বলেন, বর্ষায় রাস্তা খারাপ থাকায় উপজেলা শহরে যাওয়া-আসায় ১৬০ টাকা ভাড়া লাগে। অন্য সময় এ ভাড়া মাত্র ২০/৩০ টাকা। উৎপাদিত কৃষিপণ্য বিক্রি করতে হাট বাজারে নেওয়া যায়না। তিনি জানান, এই এলাকায় প্রচুর পরিমাণে আদা, হলুদ, কচু, লেবু, বেগুন, মরিচ, কলাসহ বিভিন্ন শাক-সবজি উৎপাদিত হয়। এছাড়াও রয়েছে পোল্ট্রি খামার। শুধু মাত্র রাস্তার কারণে এসব পণ্যের ন্যায্যমূল পায়না কৃষকরা।
স্থানীয় মামুদ নগর (দুর্গাপুর) দাখিল মাদ্রাসার সুপার শহীদুল ইসলাম বলেন, এ সড়কটি দৈর্ঘ ১১কিলোমিটার। প্রথম ও শেষ অংশে ৩কিলোমিটার পাকা হলেও ৮ কিলোমিটার কাঁচা রয়েছে। এই ৮কিমির মধ্যেই প্রাথমিক, মাধ্যমিক পর্যায়ের ২৫/২৬টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। এছাড়াও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঘেঁষে ওই সড়কটি চলে গেছে জানিয়ে বলেন, ২০ বছরের শিক্ষকতা জীবনে কাদা-পানি মাড়িয়ে আসতে হচ্ছে এবং বিভিন্ন গ্রামের হাজার হাজার শিক্ষার্থীরা কাঁচা সড়কটি ব্যবহার করেই পড়াশোনা করছেন। তিনি আরও বলেন, এ সড়ক দিয়ে চলাচলকারী অন্তত ২৫টি গ্রামবাসীর ‘দুঃখ’ বড়চওনা-মরিচা সড়কটি। অবহেলিত সড়কটি কর্তৃপক্ষের কাছে পাকাকরণের জোর দাবি জানিয়েছেন তিনি।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, একের পর জনপ্রতিনিধি পরিবর্তন হলেও তাদের সড়কের উন্নয়নের ছোয়া লাগেনি। কাাঁচা সড়কটি অতি দ্রুত পাকা করার দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
এ প্রসঙ্গে সখীপুর উপজেলার এলজিইডির প্রকৌশলী বিদ্যুৎ কুমার দাস বলেন, ১১কিলোমিটারের কাঁচা ওই সড়কটি বিভিন্ন সময়ে ৩ কিলোমিটার পাকা হয়েছে। আরও ১কিলোমিটার পাকা করণের কাজ খুব শিগগিরই শুরু হবে। বাকি কাঁচা সড়কটুকু পাকাকরণের জন্য পক্রিয়াধীন রয়েছে।
আরও পড়ুন
যমুনা সেতুতে সড়ক দুর্ঘটনায় বাবা-ছেলেসহ নিহত ৩
ভেঙে পড়েছে খুমেকের চিকিৎসা সেবা, রোগীরা ভোগান্তিতে
এটুআইয়ের অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প দ্রুত বাদ দিন: উপদেষ্টা নাহিদ