অনলাইন ডেস্ক :
উপমহাদেশের বিশিষ্ট সংগীতশিল্পী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়কে ২০২২ সালে ‘পদ্মশ্রী’ দিতে চেয়েছিল ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। কিন্তু পদ্মশ্রী সম্মান প্রত্যাখ্যান করেন এই তারকা। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের দেওয়া বহু পুরস্কারই পেয়েছেন সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে কোন পুরস্কার পাননি। পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করার পর ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দেয়। পদ্মশ্রী প্রত্যাখান করার কারণ হিসেবে এক প্রতিক্রিয়ায় সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘এভাবে কেউ পদ্মশ্রী দেয়? এরা জানে না আমি কে? নব্বই বছরে আমায় শেষে পদ্মশ্রী নিতে হবে? আর এই ফোন করে বললেই চলে যাব আমি?’ হতাশা আর অপমানে বেদনাহত বর্ষীয়ান সংগীতশিল্পী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় প্রায় সব গণমাধ্যমে প্রতিক্রিয়ায় আরও বলেন, ‘আমি বলে দিয়েছি, আমার পদ্মশ্রীর কোনো দরকার নেই। শ্রোতারাই আমার সব। ‘আমার শরীরটা বেশ খারাপ। আমাকে পদ্মশ্রী নেওয়ার কথা বলা হয়েছিল, দিল্লি থেকে ফোন করা হয়েছে। আমি বলেছি, না আমি পারব না এই সম্মান নিতে যেতে। তারা কারণ জানতে চায়, আমি বলেছি, আমার মন চাইছে না। পুরস্কার তার জন্য অনেক বড় অপমান উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘এই অপমানের সম্মান আমি গ্রহণ করতে পারব না। আমি কী কাজ করেছি, ওরা তা জানে না। আমাকে চেনেও না। সংগীতজগত সম্পর্কেও ওরা অবগত নয়।’ উপমহাদেশের বিশিষ্ট সংগীতশিল্পী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কলকাতার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। দীর্ঘদিন বার্ধক্যজনিত অসুস্থতায় ভুগছিলেন এই সঙ্গীতশিল্পী। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৯০ বছর। ৫০ বছরেরও বেশি সময় বিভিন্ন ভাষার ছবিতে প্লেব্যাক করেছেন সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। ছবির গানের পাশাপাশি বাংলা আধুনিক গান ও ধ্রুপদী সঙ্গীতেও তিনি ছিলেন সমান পারদর্শী। সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ১৯৩১ সালের ৪ অক্টোবর দক্ষিণ কলকাতার ঢাকুরিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তার সঙ্গীত শিক্ষার মূল কান্ডারি ছিলেন দাদা রবীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়। ১৯৪৫ সালে মাত্র ১৪ বছর বয়সে প্রথম গান রেকর্ড করেন তিনি। কলম্বিয়া থেকে তার প্রথম রেকর্ড করা গান গিরীন চক্রবর্তীর কথায় ও সুরে ‘তুমি ফিরায়ে দিয়াছ’ ও ‘তোমার আকাশে ঝিলমিল করে’। ১৯৪৮ সালে প্রথমবার রাইচাঁদ বড়ালের সঙ্গীত পরিচালনায় প্লেব্যাক করেন, ছবির নাম ‘অঞ্জনগড়’। ওই একই বছরে আরও তিনটি আধুনিক গান রেকর্ড করে সঙ্গীতজগতে নিজের জায়গা পাকা করে ফেলেন ভবিষ্যতের কিংবদন্তি। ১৯৭১ সালে ‘জয়জয়ন্তী’ ও ‘নিশিপদ্ম’ ছবিতে গান গেয়ে জাতীয় পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। ১৯৯৯ সালে ‘লাইফটাইম অ্য়াচিভমেন্ট’-এর জন্য ভারত নির্মাণ পুরস্কার পান। ২০১১ সালে বঙ্গবিভূষণ সম্মান পান তিনি। ২০২২ সালে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার তাকে ‘পদ্মশ্রী’ দিতে চেয়েছিল। কিন্তু এতদিন সে সম্মান তাকে না দেওয়ায় অভিমানে পদ্মশ্রী প্রত্যাখান করেন উপমহাদেশের এই বিশিষ্ট সংগীতশিল্পী।
আরও পড়ুন
আসছে মাহফুজ-অপির ‘অদৃশ্য’
চট্টগ্রাম তলিয়ে গেলেই মানুষ ট্রল করে: রিয়াজ
দুই বাংলাতেই ব্যস্ত মীম