এম. মছব্বির আলী, মৌলভীবাজার:
পারিবারিক কারণেই ছাত্রজীবন থেকেই কৃষির প্রতি প্রবল আগ্রহ জমে আসম কামরুল ইসলামের। তাঁর পিতা কুলাউড়ার সাবেক এমপি ও উপজেলা চেয়ারম্যান, কেন্দ্রীয় কৃষকলীগের সভাপতি ও উপজেলা আওয়ামী লীগের আজীবন সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম আব্দুল জব্বার ছিলেন একজন সফল কৃষক। দাদা আব্দুল মজিদের বিশাল কৃষি খামার আব্দুল জব্বার দেখাশোনা করতেন। এমপি, উপজেলা চেয়ারম্যানসহ আরও অনেক পদ-পদবীর অধিকারী হয়েও তিনি সুযোগ পেলেই কৃষি কাজে নেমে পড়তেন। আব্দুল জব্বার নিজেকে একজন কৃষক হিসেবে পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ, গৌরববোধ করতেন এবং খুবই সাধারণ জীবন যাপনে অভ্যস্ত ছিলেন। পিতার সেই নীতি ও আদর্শকে লালন করে পারিবারিক ঐতিহ্য ধরে কামরুল ইসলাম রাজনীতর পাশাপাশি কৃষি কাজে মনোনিবেশ করেন। পরিবার, রাজনীতি, জনসেবা এসব ব্যস্ততার মাঝেও মিশ্র ফল ও সবজি বাগান এবং মৎস্য ও গরুর খামার গড়ে তুলেছেন সাবেক এমপি মরহুম আব্দুল জব্বারের পুত্র ও কুলাউড়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান, উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আসম কামরুল ইসলাম। বাপ-দাদার পৈত্রিক জমিতে কামরুল ইসলাম গড়ে তুলেছেন ‘আয়েশা এগ্রো অ্যান্ড ডেইরি’ নামে একটি সমন্বিত খামার বাড়ি।
কামরুল ইসলাম তাঁর বাড়ির ছোট-বড় সাতটি পুকুরে গড়ে তুলেছেন মৎস্য খামার। পুকুরের চারপাশে রয়েছে দেশি ও ভিয়েতনামী নারিকেল, সব জাতের কলা, লেবু, থাই পেয়ারা, বাউকুল, আপেল, কুলবরই, থাই পেঁপে, হাঁড়ি ভাঙ্গা ও আ¤্রপালি, বারি ২,৩,৪ আম, দার্জিলিং কমলা ও মাল্টাসহ নানান জাতের ফলের বাগান। প্রতি বছর বিভিন্ন জাতের ২০০ ছড়ি কলা বিক্রি করেন। রয়েছে গ্রীষ্ম ও শীতকালীন শাক-সবজির বাগান। প্রতি বছর শিম, আলু, লাউ, শসা, পুঁইশাক, উন্নত টমেটো, বেগুন, ব্রোকলি, লেটুস, কেপসিকাম, মিষ্টি কুমড়া, সরিষা, মরিচ, করলা, বরবটি, ঢেঁড়সসহ সকল প্রকার সবজির বাম্পার ফলন হয়। তাছাড়াও উন্নত জাতের ধানের মধ্যে চিনিগুড়া, কালিজিরা, ডায়াবেটিক ধান, কালো ধান, কালো চাল, চিকনসাইল, গাজী ২৮ ও গাজী ২৯ ধান চাষেও তিনি সফল।
সম্প্রতি সরেজমিন কুলাউড়া পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ডের আলালপুর গ্রামে গেলে কথা হয় খামারী কামরুল ইসলামের সাথে। তিনি জানান, পারিবারিক ঐতিহ্য ধরে ২০০৬ সাল থেকে বাড়ির পাশে পৈত্রিক সম্পদ প্রায় ১৬ বিঘা জমিতে তিলে তিলে গড়ে তুলেছেন ‘আয়েশা এ্যাগ্রো অ্যান্ড ডেইরি’ নামে একটি সমন্বিত খামার বাড়ি। আরও ১৫ বিঘা জমিতে আধুনিক কৃষি পদ্ধতিতে রয়েছে বিভিন্ন দুর্লভ ও উন্নত জাতের ধান চাষ। তাঁর কৃষি খামারে রয়েছে একটি গরুর খামার ও গরু মোটা তাজা করণ প্রকল্প। এই প্রকল্পের মাধ্যমেও তিনি লাভবান হচ্ছেন।
কামরুল ইসলাম বলেন, ‘আব্বা প্রায় বলতেন, নিজের কাজে কোন লজ্জা নেই। কোন কাজকেই ছোট করে দেখা ঠিক নয়। কাজ জানতে হবে, না হলে অন্যকে দিয়ে সঠিকভাবে কাজ করাতে পারবে না। আমার বাবা আমাদেরকে খুব সাধারণ জীবনযাপন করতে অভ্যস্ত করেছেন। আব্বা বলতেন এক সময় তেল, কেরাসিন আর নুন ছাড়া কৃষকের বাড়িতে সবকিছুই উৎপাদন হতো। গোলা ভরা ধান, গোয়াল ভরা গরু, মহিষ, ছাগল, হাঁস, মুরগি ও পুকুর ভরা মাছ, খড়ের ঘর, সব ধরনের বর্ষা ও শীতকালীন শাক-সবজি চাষাবাদ হতো। তিনি আরো বলেন, জনপ্রতিনিধি থাকাকালীন সময়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ১০টি বিশেষ উদ্যোগের মধ্যে অন্যতম অগ্রাধিকার প্রকল্প “আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্প” নিয়ে কাজ করতে গিয়ে তিনি উৎসাহিত হন। প্রধানমন্ত্রীর অনুপ্রেরণামূলক বক্তব্য আমাকে আরো বেশি উৎসাহিত করে। আমাদের ভবিষৎ প্রজন্মের সুস্থতার কথা ভেবে ফরমালিন মুক্ত, রাসায়ানিক কীটনাশক মুক্ত, বিষমুক্ত খাদ্য উৎপাদনের লক্ষ্যেই এই অর্গানিক এগ্রো ফার্মটি গড়ে তুলেন। এখানে অনেকের কর্মসংস্থান হয়েছে। নিজেও প্রতিদিন ৪-৫ ঘন্টা কাজ করেন নিজের চাহিদা পূরণ করে কিছু বিলিয়ে দেই। বছরে অনেক মুনাফাও আসছে।
বাণিজ্যিকভাবে অর্গানিক সবজি, মাছ ও ফল বাজারজাতকরণের পরিকল্পনা রয়েছে জানিয়ে কামরুল ইসলাম বলেন, জনপ্রতিনিধি থাকাকালীন সময়ে যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, ভারত, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, ইন্দোনেশিয়া, মালেশিয়াসহ ইউরোপ ও এশিয়ার বিভিন্ন দেশ সফরকালে গ্রীন হাউজ ও বিভিন্ন আধুনিক কৃষিখামার পরিদর্শন করেন। ভবিষ্যতে তার খামার বাড়িতে গ্রীন হাউজ প্রকল্পের মাধ্যমে উন্নত ও আধুনিক কৃষির পরিকল্পনা রয়েছে। যার মাধ্যমে সারা বছর ব্যাপী সাক সবজি উৎপাদন করা সম্ভব। যুব ও তরুণ সমাজকে উৎসাহিত করতে তাঁর এই উদ্যোগ। ইতিমধ্যে আসম কামরুল ইসলামের প্রকল্পগুলো পরিদর্শন করেন উপজেলা কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাগণ। তারা বলেন, রাজনীতি ও জনসেবামূলক কাজের ব্যস্ততার মধ্যেও তিনি যে সমন্বিত প্রকল্প গড়ে তুলেছেন তা থেকে অন্যরা অনুপ্রেরণা পাবেন। তাঁর আগ্রহ ও সঠিক পরিকল্পনা তাকে সফল উদ্যোক্তার কাতারে নিয়ে দাঁড় করাবে।
উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মো: আব্দুল মুমিন বলেন, কামরুল ইসলামের সমন্বিত খামার প্রকল্পে বেকার শিক্ষিত যুবকদের মধ্যে অনুপ্রেরণা যোগাবে। তাঁর এই উদ্যোমী কাজে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে সবধরণের পরামর্শ ও সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে।
উপজেলা সিনিয়র মৎস্য অফিসার মো: আবু মাসুদ বলেন, সরেজমিন পরিদর্শনে দেখলাম কামরুল ইসলামের মাছের খামারে ভবিষ্যৎ উন্নতি করার সকল সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। আধুনিক পদ্ধতিতে মাছের উৎপাদন বাড়ানোরও অনেক সম্ভাবনা রয়েছে।
আরও পড়ুন
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি