October 5, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Thursday, October 27th, 2022, 9:20 pm

সরবরাহ বাড়াতে গ্যাসকূপ খননের তোড়জোড় শুরু করেছে সরকার

ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

তীব্র সঙ্কটের মধ্যে সরকার গ্যাস সরবরাহ বাড়াতে বিদ্যমান খনিগুলো থেকে উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি নতুন কূপ খননের তোড়জোড় শুরু করেছে। ওই লক্ষ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত তেল-গ্যাস অনুসন্ধান-উত্তোলন ও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান বাপেক্স নভেম্বর মাসে শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলায় কূপ খনন করতে যাচ্ছে। ওই কাজ সফলভাবে শেষ হলে জাতীয় গ্রিডে বাণিজ্যিকভাবে দৈনিক এক কোটি বা ১০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহের আশা রয়েছে। চলতি ২০২২ সাল থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে পেট্রোবাংলা মোট ৪৬টি উন্নয়ন, অনুসন্ধান ও ওয়ার্কওভার কূপ খনন করবে। তারই অংশ হিসেবে বাপেক্সশরীয়তপুর-১ কূপ খননের কার্যক্রম শুরু করেছে। জ¦ালানি বিভাগ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দেশে এ মুহূর্তে ৪টি গ্যাসকূপের কার্যক্রম চলছে। তার মধ্যে ৩টি কূপে কাজ করছে বাপেক্স ও একটির দায়িত্বে রয়েছে রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত তেল-গ্যাস অনুসন্ধানকারী প্রতিষ্ঠান গ্যাজপ্রম। ওই চারটি কূপের কাজ শেষ হলে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি-মার্চ নাগাদ জাতীয় গ্রিডে ৫ কোটি ঘনফুটের বেশি গ্যাস যুক্ত করা সম্ভব হবে। চলতি বছরের জুনে কুমিল্লার শ্রীকাইলে গ্যাসকূপ খননের কাজ শুরু হয়। বিজয়-১২ রিগ বসিয়ে শ্রীকাইল নর্থ-১ নামে অনুসন্ধান কূপটির খননকাজ করছে বাপেক্স। সেখানে ৯১ বিসিএফ গ্যাসের মজুদ রয়েছে। কূপ খনন শেষ হলে সেখান থেকেও দৈনিক এক-দেড় কোটি ঘনফুট গ্যাস পাওয়ার আশা রয়েছে। তাছাড়া চলতি বছরের ১৯ আগস্ট রাশিয়ান প্রতিষ্ঠান গ্যাজপ্রম ভোলায় গ্যাসকূপ খননের কাজ শুরু করে। সেটিও একটি অনুসন্ধান কূপ। টবগী-১ নামে অনুসন্ধানকৃত ওই কূপ থেকে জাতীয় গ্রিড দৈনিক দুই-আড়াই কোটি ঘনফুট গ্যাস যুক্ত হওয়ার প্রত্যাশা রয়েছে। তাছাড়া সিলেট গ্যাসফিল্ডের আওতায় বিয়ানীবাজার গ্যাসফিল্ডের একটি কূপের ওয়ার্কওভার বা সংস্কারকাজ করছে বাপেক্স। বিজয়-১১ দিয়ে কূপটির সংস্কার শেষ হলে সেখানেও মিলবে অতিরিক্ত গ্যাস।
সূত্র জানায়, বর্তমানে শিল্প-কারখানা, আবাসিক ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলো তীব্র জ¦ালানি সঙ্কটে ভুগছে। চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস না পাওয়ায় বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) বিদ্যুৎকেন্দ্র চালাতে পারছে না। আর দেশের শিল্প-কারখানাগুলোও প্রতিনিয়ত উৎপাদন সঙ্কটে পড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে শরীয়তপুর-১ কূপ খননের উদ্যোগ অনেকটাই আশার আলো দেখাচ্ছে। গ্যাসকূপ খনন কার্যক্রমের অংশ হিসেবে নড়িয়ার প্রকল্প এলাকায় বাপেক্সের প্রকৌশলীরা বিজয়-১০ রিগ মাস্ট উত্তোলন করেছে। তার মধ্য দিয়ে দেশে আরো একটি কূপ খননের প্রাথমিক কার্যক্রম শুরু হলো। শরীয়তপুরে বাপেক্স যেটি খননের উদ্যোগ নিয়েছে সেটি অনুসন্ধান কূপ। সেখানে ৭৮ বিলিয়ন কিউবিক ফিট (বিসিএফ) গ্যাস মজুদ রয়েছে। সফলভাবে ওই খননকাজ শেষ হলে বাণিজ্যিকভাবে জাতীয় গ্রিডে দৈনিক প্রায় এক কোটি ঘনফুট গ্যাস যুক্ত করা সম্ভব হবে।
সূত্র আরো জানায়, শরীয়তপুরে যে গ্যাসকূপ খননের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে ওই প্রকল্পের মেয়াদ ২০২১ সালের জুলাই থেকে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত। সাধারণত একটি গ্যাসকূপ খনন শুরু হলে চূড়ান্ত আকারে তার ফলাফল পেতে অন্তত তিন থেকে সাড়ে তিন মাস সময় লাগে। ওই হিসাবে আগামী বছরের জানুয়ারির শেষ কিংবা ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে শরীয়তপুরের কূপ থেকে গ্যাস উত্তোলন হওয়ার কথা।
এদিকে জ¦ালানি বিশেষজ্ঞদের মতে, জ¦ালানি বিভাগ গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনে এখন যে ধরনের তৎপরতা চালাচ্ছে তা আরো আগে করা গেলে দেশকে এতোটা সঙ্কটে পড়তে হতো না। পেট্রোবাংলা ও বাপেক্স এখন গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনে স্থলভাগে যে ধরনের তৎপরতা চালাচ্ছে ওই উদ্যোগ আরো আগেই নেয়া উচিত ছিল। ছোট ছোট কূপ খনন করেও যদি গ্যাস পাওয়া যায় তাহলেও সঙ্কটে তা বড় ভূমিকা রাখতে পারবে। বর্তমানে বিশ্ববাজারে জ¦ালানি পণ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী হওয়ার পর থেকেই তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) কেনা যাচ্ছে না। একই সঙ্গে ডলার সঙ্কটের কারণে জ¦ালানি তেলে আমদানিতেও কৃচ্ছ্রসাধনের পথ বেছে নিতে হচ্ছে। দেশে বর্তমানে গ্যাসের দৈনিক চাহিদা ৮১০ কোটি ঘনফুটের মতো। সেখানে সরবরাহ হচ্ছে ২৬৪ কোটি ঘনফুটের কিছু বেশি। বিগত কয়েক মাস আগেও যা ছিল ৩২০ কোটি ঘনফুটের মতো। স্থানীয় উৎপাদন এবং এলএনজি আমদানি করতে না পারায় সরবরাহ ব্যবস্থাপনায় এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
অন্যদিকে এ বিষয়ে বাপেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ আলী জানান, আগামী ২০২৫ সাল পর্যন্ত ৪৬টি কূপ খননের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে দ্রুতই শরীয়তপুরে কূপ খনন শুরু করা হচ্ছে। বাপেক্সের পরিকল্পনা যতো দ্রুত সম্ভব কূপ খনন করে উৎপাদিত গ্যাস গ্রিডে নেয়ার ব্যবস্থা করা। এখন থেকে বাপেক্সের কোনো রিগ বসে থাকবে না। পর্যায়ক্রমেই কূপ খনন কাজ চলবে।