July 27, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Friday, November 5th, 2021, 9:35 pm

সহিংসতার দায় নিতে নারাজ ইসি, কাঠগড়ায় স্থানীয় প্রশাসন

প্রতীকী ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

চলমান ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনের পরিবেশ মোটেও শান্তিপূর্ণ নেই। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সহিংসতার খবর পাওয়া যাচ্ছে। সহিংসতার দায় স্থানীয় প্রশাসনের উপর চাপাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। বিব্রত ও উদ্বিগ্ন ইসি সহিংসতার ঘটনার দায় নিতে নারাজ। নির্বাচনে সহিংসতা বেড়ে যাচ্ছে বলে স্বীকার করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা বলেছেন, ‘সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে রাজনৈতিক দলগুলোর ভূমিকা ইতিবাচক নয়।’
অন্যদিকে নির্বাচন কমিশনার মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘নির্বাচনের এসব বিষয় নিয়ন্ত্রণ করে পুলিশ, প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা। আমরা ম্যাসেজ দিতে চাই, এ ধরনের ঘটনা ঘটলে এর দায় তাদের ওপরও বর্তাবে। তাদেরকেও জবাবদিহিতার অধীনে আনবো।’
জানা যায়, গত ২০ জুন ইউপি নির্বাচন শুরু থেকে এ পর্যন্ত ২২ জনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। বিভিন্ন স্থানে শতাধিক সহিংসতা হয়। চলমান দ্বিতীয় ধাপের ইউপি ভোটে ১৬ জনের প্রাণহানি হয়। এই পরিস্থিতিতে নির্বাচন ভবনে মঙ্গলবার বিকালে স্থানীয় মাঠ প্রশাসনের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে বসে কমিশন। ওই বৈঠক থেকে বিদ্যমান পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত হয় কমিশন। স্থানীয় মাঠ প্রশাসন এসব ঘটনার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও রাজনৈতিক দলগুলো দায়ী করে। তারা বলেন, নির্বাচনে স্থানীয় প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা এবং রাজনৈতিক দলের অসহযোগিতার কারণে সহিংসতা বেড়ে যাচ্ছে। মাঠ প্রশাসনের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গেও বৈঠক করবে ইসি।
মঙ্গলবার ভার্চুয়ালি মাঠ প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক শেষে প্রধান নির্বাচন কমিশন (সিইসি) বলেন, নির্বাচনী সহিংসতা বেড়ে যাচ্ছে ঠিকই। আমরাও তা প্রত্যক্ষ করছি। মাঠ পর্যায়ে কী ধরনের নির্দেশনা দেওয়া দরকার তা সেগুলো নিয়ে চিন্তাভাবনা শুরু করছি। বৃহস্পতিবার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বৈঠকে এসব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো। নির্বাচনী সহিংসতা বেড়ে যাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অনেকগুলো ঘটনা ঘটেছে তাতে আমরা বিব্রত ও উদ্বিগ্ন। সেগুলো কীভাবে নিরসন করা যায় তা নিয়ে কমিশনারদের সঙ্গে আরও বিস্তারিত আলোচনা করে মাঠ পর্যায়ের যারা আছেন তাদেরকে নির্দেশনা দেয়া হবে।
নির্বাচনী পরিস্থিতি ইসির নিয়ন্ত্রণে আছে কী না- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, আমাদের যথাযথ নিয়ন্ত্রণ আছে। নির্বাচনে যারা অংশ নেন-যেমন রাজনৈতিক দল, ভোটার ও প্রার্থীর সম্মিলিত প্রচেষ্টায় নির্বাচন সুষ্ঠু হয়। সুতরাং আমরা এখানে যতই যা করি না কেন মাঠ পর্যায়ে সহনশীলতা না থাকে তাহলে এ নির্বাচন নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। তিনি বলেন, নির্বাচন প্রতিযোগিতামূলক হবে, কিন্তু প্রতিহিংসামূলক হবে না-এটা আহবান করি। মাঠ পর্যায়ে নির্বাচনে সহিংসতা যে বেড়েছে তা সকলের প্রচেষ্টায় নিয়ন্ত্রণ রাখা দরকার।
নির্বাচনী সহিংসতা বন্ধে রাজনৈতিক দলের ভূমিকার বিষয়ে তিনি বলেন, দু:খজনকভাবে সত্য যে আমরা খুব পজিটিভ দেখছি না। এসব বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সক্রিয় ভূমিকা থাকা দরকার। নির্বাচনের বিষয়টি শুধু নির্বাচন কমিশনের নয়, এটা সকলেরই। আমরা শুধু নির্বাচন ব্যবস্থাপনায় থাকি। তারা (রাজনৈতিক দল) আরও একটু প্রোএকটিভ হলে সহিংসতা কমবে।
আইন প্রয়োগে শিথিলতায় সহিংসতা বেড়েছে কী না-এমন প্রশ্নের জবাবে নূরুল হুদা বলেন, আমাদের কাছে যখনই যেসব অভিযোগ আসছে, সেগুলোর পদক্ষেপ নেই। অন দ্যা স্পট যতগুলো ফৌজদারি ঘটনা ঘটে, সেগুলোর বিষয়ে প্রস্তুতি থাকে না। হঠাৎ করে ক্রিমিনাল অফেন্স ঘটে যায়। তখনই আমরা ব্যবস্থা নেই। এসব ঘটনা পূর্বপরিকল্পিত হয় না এবং হঠাৎ করে ঘটে যায়। যে কারণে প্রশাসন আগ থেকে তা জানতে পারে না। ফৌজদারি যেসব ঘটনা ঘটে সেগুলো সেই ফৌজদারি আইনে নির্ধারিত হবে। এ বিষয়ে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া আছে।
এসময়ে সিইসির পাশে থাকা নির্বাচন কমিশনার মোঃ রফিকুল ইসলাম বলেন, নির্বাচনের সবগুলো নিয়ন্ত্রণ করে পুলিশ, প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা। তাদেরকে আমরা ম্যাসেজ দিতে চাই, এ ধরনের ঘটনা ঘটলে এর দায় তাদের উপরও বর্তাবে। তাদেরকেও জবাবদিহিতার অধীনে আনবো। রাজনৈতিক দল, প্রার্থী ও ভোটারদের বলতে চাই, দয়া করে আপনারা যেন একটু শান্ত থাকার চেষ্টা করেন, যেন সহিংসতা না হয়। শান্ত থাকলে এ ধরনের ঘটনা সীমিত হয়ে আসবে। নির্বাচনে ইসির নিয়ন্ত্রণ আছে কী না- এমন প্রশ্নের জবাবে এ কমিশনার বলেন, আইনে যা আছে সেই অনুযায়ী কাজ করছি।
রুদ্ধদ্বার ওই বৈঠকে সিইসি ছাড়াও তিনজন নির্বাচন কমিশনার, ইসির সচিব, অতিরিক্ত সচিব, জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালকসহ সংশ্লিষ্ট কয়েকজন কর্মকর্তা অংশ নেন। তবে নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার উপস্থিত ছিলেন না।
উল্লেখ্য, গতবারের মতো এবারো দলীয়ভাবে ইউপি ভোট শুরু হয়েছে। এ নির্বাচনে রাজপথের বিরোধী দল বিএনপি আনুষ্ঠানিকভাবে বর্জন করেছে। তবে স্বতন্ত্রভাবে দলটি নেতাকর্মীরা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। এখন পর্যন্ত ১৭টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল ইউপি ভোটে অংশ নিচ্ছে।
গত ২০জুন ও ২০ সেপ্টেম্বর দু’দফায় প্রথমধাপে ৩৬৫টি ইউপির ভোট অনুষ্ঠিত হয়। দ্বিতীয় ধাপে দেশের ৮৪৬টি ইউপিতে ভোট হবে আগামী ১১ নভেম্বর। এছাড়াও তৃতীয় ধাপের ১০০৭ ইউপিতে ভোট হবে ২৮ নভেম্বর। সহিংসতার পাশাপাশি এবারের ভোটে প্রভাব বিস্তারের ঘটনাও বেশ লক্ষণীয়। ভোট ছাড়াই জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হওয়ার হিড়িক পড়েছে। ইতোমধ্যে প্রথম ও দ্বিতীয়ধাপে ১২১১ ইউপির মধ্যে ১৫৪টিতে চেয়ারম্যান পদে ভোট ছাড়াই নির্বাচিত হয়েছেন। মঙ্গলবার তৃতীয় ধাপের মনোনয়ন দাখিলের শেষদিন ছিলো। এই ধাপেও অসংখ্য চেয়ারম্যান প্রার্থী বিনা ভোটে নির্বাচিত হচ্ছেন।
এদিকে চলমান ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন ঘিরে আওয়ামী লীগ সরকারের লোকজন কামড়াকামড়ি, মারামারিতে মেতেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বুধবার সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।
রিজভী বলেন, ‘নিশিরাতে ভোট ডাকাত সরকারের লোকজন এখন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন নিয়ে নিজেরাই কামড়াকামড়ি, মারামারি করে মরছে। আর গ্রামীণ জনপদে সাধারণ মানুষের শান্তি বিনষ্ট করছে। জনগণের মধ্যে আতঙ্ক-অস্থিরতা ছড়িয়ে দিচ্ছে। চলমান ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে শুরু থেকে এ পর্যন্ত অনেকের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। তারা প্রতিদিন বিভিন্ন স্থানে রক্তাক্ত ও সহিংস ঘটনা ঘটাচ্ছে।’
বিএনপির এই বর্ষীয়ান নেতা বলেন, ‘আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা ঢাকায় বসে টাকার বিনিময়ে প্রকাশ্যে মনোনয়ন বাণিজ্য করছে আর প্রার্থীরা গ্রাম-গঞ্জে গিয়ে মারামারিতে লিপ্ত হচ্ছে। এর অন্তর্নিহিত লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হচ্ছে-লুটপাটের লোভ। কোনোমতে দলীয় টিকিট পেলেই সিলেকশনে চেয়ারম্যান হয়ে যাবে। তাই সব ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীদের ছড়াছড়ি। মেরে কেটে যেভাবে হোক চেয়ারম্যান-মেম্বার হওয়ার জন্য উন্মাদ হয়ে উঠেছে তারা।’
প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদার আপন বড় ভাই আওয়ামী লীগ নেতা আবু তাহের খান পটুয়াখালীর বাউফলের নওমালা ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে নৌকা প্রতীক না পাওয়ায় বেজায় মনঃক্ষুণœ হয়েছেন বলে জানান রিজভী।
তার মতে, নির্বাচনে সহিংসতার দায় স্থানীয় প্রশাসনের ওপর চাপাচ্ছে মেরুদ-হীন পাপেট নির্বাচন কমিশন। অথচ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে প্রশাসন নির্বাচন কমিশনের অধীনে চলে আসে। সেক্ষেত্রে এতসব সহিংসতা, অনিয়মের দায় নির্বাচন কমিশনের। ভোট ডাকাতিকে সহায়তা দিতে গিয়ে নির্বাচনি হিংসা, সন্ত্রাসবাদকে লালন-পালন করেছে কমিশন।