October 6, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Sunday, February 18th, 2024, 3:49 pm

সাভারে ছিনতাইকারীদের বেপরোয়ায় আতংকে সাভারবাসী

জেলা প্রতিনিধি, সাভার:

রাজধানী ঢাকার অদূরে সাভার উপজেলাটি ছিনতাইকারীদের দখলে পরিণত হয়েছে। গভীর রাত থেকে ভোর পর্যন্ত সাভারের বিভিন্ন ওলি গলি হয়ে ওঠে ছিনতাইকারীদের অভয়ারণ্য। প্রায় নির্জন সড়কে নানা কৌশলে দিনের বেলায়ও আতঙ্কে থাকে সাধারণ মানুষ। মাঝে কিছু দিন ছিনতাইয়ের প্রবনতা কম থাকলেও এখন আবারো নতুন করে পুরোদমে শুরু হয়েছে ছিনতাই। শুধু ছিনতাই করেই এখন ক্ষান্ত হয় না ছিনতাইকারীরা, একই সাথে আক্রান্তদের ছুরিকাঘাত করা, তাদের মারধর করা এমনকি হত্যা করার মত লোমহর্ষক ঘটনাও ঘটছে।
২০২৪ সাল, বছরের শুরু থেকে সংঘটিত এমন কয়েকটি ছিনতাইয়ের ঘটনা আতংকে ফেলে দিয়েছে সাভারবাসীকে।

স্থানীয়রা বলছে, মধ্যরাত থেকে ভোর পর্যন্ত ইদানীং ছিনতাইকারীদের তৎপরতা প্রচুর বেড়েছে। সাভার বাসস্ট্যান্ডে ও এর আশপাশ এলাকায় সবচেয়ে বেশি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। বাসস্ট্যান্ড এলাকার স্মরণিকা গেটের সামনে, নিউ মার্কেট, শিমুলতলা, মডেল মসজিদ, মাশরুমের বড় মাঠ, ডগরমোড়া, সিআরপি, ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের সিএন্ডবি এলাকাসহ প্রতিটি অলিগলিতে প্রায় প্রতিদিনই ছিনতাইকারীদের কবলে পড়ে কেউ না কেউ গুরুতর আহত হন এবং সর্বস্ব হারান।এছাড়াও ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের যেসব জায়গায় রাস্তার আলো নেই সেখানেও ছিনতাইকারীরা আক্রমণ করে। মাদকাসক্ত ও কিশোর গ্যাং এসব অপকর্ম করছে বলে অভিযোগ আছে। সুশীল সমাজের দাবি, কিশোর গ্যাং ও ছিনতাইকারীরা রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থেকেই বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত হচ্ছে।

এদিকে ব্যস্ত সড়কেও এখন পথচারী ও যাত্রীদের সঙ্গে পরিচিত ব্যক্তির অভিনয়ের মাধ্যমেও ছিনতাই করছে সংঘবদ্ধ একটি চক্র।

গত মঙ্গলবার দিবাগত রাতে সাভারে পৃথক দুটি স্থানে ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে আহত হয়েছেন দুই কিশোর। সাভার সিটি সেন্টার সংলগ্ন ওভার ব্রিজের নিচে ও শিমুলতলা এলাকার পল্লীবিদ্যুত অফিসের পাশে মসজিদের গলিতে তাদের ছুরিকাঘাত করে ছিনতাইকারীরা। আহতদের মধ্যে নাহিদ আল-মুসলিম গ্রুপের পোশাক কারখানার শ্রমিক ও অপরজন রাতুল ইসলাম শিমুলতলা এলাকার একটি জুতার কারখানায় কাজ করেন। আহতরা বর্তমানে এনাম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।

অন্যদিকে, বৃহস্পতিবার (১ ফেব্রুয়ারি) সাভার পৌর এলাকার স্মরনিকার এক ব্যবসায়ী ছিনতাইকারীদের ছুরিকাঘাতে গুরুতর আহত হয়ে একটি হাসপাতালে ভর্তি হয়ে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন। আহত ওষুধ ব্যবসায়ীর নাম জুবায়ের খান (৫২)। ওই দিন রাত ১১টায় ঢাকা-আরিচা মহাসড়ের আমিন কমিনিটি সেন্টারের সামনে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন জুবায়ের খান। পড়ে ৩/৪ জনের একটি ছিনতাইকারী চক্রের কবলে পড়েন তিনি।

এরআগে, ৫ জানুয়ারি শুক্রবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে সাভার বাসস্ট্যান্ডের কাছে মডেল মসজিদের সামনে ছিনতাইকারী ছুরিকাঘাতে নিহত হয়েছে আবু সাঈদ হিমেল (২১)। সে সাভার পৌর এলাকার বিনোদ বাইদ মহল্লার কামাল হোসেনের ছেলে। তিনি নীলক্ষেতে একটি কম্পিউটারের দোকানে কাজ করতেন।

এদিকে, গত বৃহস্পতিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে পৌর এলাকার দিলখুশাবাগ জিকে গার্মেন্টের পিছনের গলিতে ছিনতাইকারী কবলে পড়েন দু’নারী পোশাক শ্রমীক। এসময় ওই দুইজনে সাথে থাকা নগদ টাকা, মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেন ছিনতাইকারীরা।

পল্লী বিদুৎ শিমুলতলা জোনাল অফিসের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, রাত হলেই এ এলাকায় ছিনতাইকারীর আনাগোনা বেড়ে যায়। আমরা আতঙ্কে মধ্যে থাকি। এইতো দুই দিন আগে এখানে ছিনতাইকারীরা একজনকে কুপিয়ে মারাত্মক জখম করে। তিনি ওই এলাকায় পুলিশের টহল বাড়ানোর দাবি জানান ।

তবে ছিনতাইয়ের শিকার হওয়া বেশির ভাগ মানুষই নিরাপত্তার কারণে পুলিশে অভিযোগ করতে চান না। আবরা কেউ কেউ অভিযোগ করলেও এসব ঘটনায় ছিনতাইকারীরা আটক না হওয়ায় স্থানীয়দের মাঝে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপর ক্ষোভ বিরাজ করতে দেখা গেছে।

এ বিষয় সাভার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আকবর আলী খান বলেন, কোথায় কোথায় ছিনতাই হয়েছে আপনি বলেন, আমি জবাব দেব। আপনাকে স্পেসিফভাবে বলতে হবে। আমি তার জবাব দেব। এখানে যে ঘটনাগুলো ঘটেছে আমরা প্রত্যেকটি আসামীকে গ্রেফতার করে বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করেছি। যে কয়জন আছে সেগুলো ধরার জন্য চেষ্টা
করেছি।

অনেকেই থানায় অভিযোগ করতে ভয় পায় এমন প্রশ্নের জবাবে ওসি আকবর আলী খান আরও বলেন, “অভিযোগ করতে হয়, অভিযোগপত্র আমরা খতিয়ে দেখি। আপনার নিউজ আপনি লিখবেন, আমাদের বক্তব্য নিয়ে লিখবেন সেটাতো ঠিক না।” ঘটনা ঘটলে আমরা এটা কঠিন হাতে জব্দ করি। আমরা প্রতিনিয়ত এ টহল বাড়িয়ে দিয়েছি। ছিনতাইকারীদের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যহত আছে।