October 10, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Sunday, June 19th, 2022, 9:49 pm

সাশ্রয়ী দামে পণ্য বিক্রির জন্য এখনো প্রস্তুত হয়নি টিসিবি

ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

সাশ্রয়ী দামে পণ্য বিক্রির জন্য প্রস্তুত হয়নি টিসিবি। তালিকা চূড়ান্ত না হওয়ায় একদিকে যেমন সুবিধাভোগী পরিবারের হাতে এখনো কার্ড পৌঁছেনি, অন্যদিকে বিক্রির জন্য সয়াবিন তেল, চিনি ও ডাল সংগ্রহের কাজও পুরোপুরি শেষ হয়নি। অথচ আরো আগেই সাশ্রয়ী দামে স্বল্প আয়ের মানুষের হাতে টিসিবির পণ্য তুলে দিতে ফ্যামিলি কার্ড বিতরণের কথা ছিল। এমন পরিস্থিতিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এক সপ্তাহ পিছিয়ে আগামী ২২ জুন থেকে টিসিবির পণ্য বিক্রি শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও টিসিবি সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, টিসিবি সর্বশেষ গত এপ্রিলে পণ্য বিক্রি করেছিল। তারপর গত ১৬ মে থেকে ঢাকা ও বরিশালে ট্রাকের মাধ্যমে পণ্য বিক্রি শুরু হওয়ার কথা থাকলেও ১৫ মে রাতে টিসিবি হঠাৎ বিক্রি কার্যক্রম স্থগিত করে। তখন বিশৃঙ্খলা এড়াতে ও প্রকৃত সুবিধাভোগী পরিবারের কাছে পণ্য পৌঁছাতে ফ্যামিলি কার্ড বিতরণের কথা জানানো হয়েছিল। এমনকি সপ্তাহ দুয়েক আগে বাণিজ্যমন্ত্রীও বলেছিলেন ১৫ জুন থেকে সারাদেশে এক কোটি মানুষের কাছে সাশ্রয়ী দামে পণ্য বিক্রি করা হবে। ওই অনুযায়ী প্রস্তুতি নিচ্ছে টিসিবি। তবে পণ্য বিক্রির জন্য এখনো ফ্যামিলি কার্ড পুরোপুরি প্রস্তুত হয়নি।
সূত্র জানায়, ফ্যামিলি কার্ডের তালিকা তৈরি করে গত ৩০ এপ্রিলের মধ্যে সিটি করপোরেশনের সমন্বয় ও তদারকি কমিটিতে জমা দেয়ার কথা ছিল। আর যাচাই-বাছাই শেষে ১৫ মে’র মধ্যে ওয়ার্ড পর্যায়ে সুবিধাভোগী পরিবারের হাতে কার্ড পৌঁছানোর কথা ছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত ওই কার্ডের কোনো তথ্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কিংবা টিসিবি পায়নি। এ ব্যাপারে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন সংশ্লিষ্টদের মতে, ঈদুল ফিতরের ছুটির কারণে সময় মতো তালিকা প্রস্তুতের কাজ শেষ করা যায়নি। যদিও ২৫ মে’র মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) এবং ২৮ মের মধ্যে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) কার্ড তৈরির কাজ শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু ডিএনসিসি এখনো ফ্যামিলি কার্ড প্রস্তুতের কাজই চূড়ান্ত করতে পারেনি। তবে অতি অল্প সময়ের মধ্যে কার্ড প্রস্তুত করে আঞ্চলিক কার্যালয়গুলোতে পাঠানোর প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। তবে এ ক্ষেত্রে ডিএসসিসি কিছুটা এগিয়ে রয়েছে। সংস্থাটি কার্ডগুলো প্রস্তুত করে আঞ্চলিক কার্যালয়গুলোতে পাঠিয়েছে। তারা কাউন্সিলরদের মাধ্যমে সুবিধাভোগী পরিবারের কাছে কার্ড পৌঁছাবে। সেক্ষেত্রে আরো সপ্তাহখানেক সময় লাগতে পারে।
সূত্র আরো জানায়, ঈদুল আজহার আগে সরকার ফ্যামিলি কার্ডধারী প্রতি পরিবারকে ২ কেজি মসুর ডাল, ২ লিটার সয়াবিন তেল ও এক কেজি চিনি ভর্তুকি মূল্যে বিতরণ করবে। সেজন্য সারাদেশে এক কোটি পরিবারের মধ্যে একবার পণ্য বিক্রির জন্য দরকার হবে ২ কোটি লিটার সয়াবিন তেল, ২ কোটি কেজি মসুর ডাল ও এক কোটি কেজি চিনি। ওই পণ্য সংগ্রহের কাজও এখন পর্যন্ত চূড়ান্ত করতে পারেনি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বর্তমানে টিসিবির হাতে মাত্র ২১ লাখ লিটার সয়াবিন তেল রয়েছে। প্রতি লিটার ১৯২ টাকা দরে ২ কোটি ৫০ লাখ লিটার সয়াবিন তেল কিনতে গত ১৯ মে তেল সরবরাহে দেশের মিলগুলোকে অনুরোধ করে টিসিবি। ওই সময় প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের খুচরা মূল্য ছিল ১৯৮ টাকা, যা মিলগেটে বিক্রি হতো ১৯২ টাকায়। তেলের দাম আরো বাড়ার কারণে টিসিবির ওই প্রস্তাবে মিলাররা তখন রাজি হয়নি। ফলে তেল সংগ্রহে কিছু জটিলতা তৈরি হয়। এখন নতুন দামেই তেল কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে টিসিবি। আর সয়াবিন তেল কেনা বাবদ সরকারের ভর্তুকি বাড়লেও ভোক্তা পর্যায়ে টিসিবি পণ্যের দাম বাড়াবে না বলে জানানো হয়েছে। ঢাকার দুই সিটিতে মোট ১৩ লাখ মানুষকে ফ্যামিলি কার্ড দেয়া হবে। তার মধ্যে ডিএসসিসির অধীনে ৭ লাখ এবং ডিএনসিসির বাসিন্দারা ৬ লাখ কার্ড পাবে।
এদিকে বাজারে সয়াবিন তেল ও মসুর ডালের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে পণ্য দুটির দাম বাড়াতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছিল টিসিবি। চিঠিতে ফ্যামিলি কার্ড প্রস্তুত ও পণ্য সংগ্রহের কাজ সম্পন্ন করতে দেরি হওয়ায় পণ্য বিক্রি কার্যক্রম আরো এক সপ্তাহ পেছানোর অনুরোধ করা হয়। ওই অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আগামী ২২ জুন থেকে পণ্য বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু টিসিবি কার্ডগ্রহীতার চূড়ান্ত তালিকা এখনো পায়নি। সংস্থাটি বলছে, ফ্যামিলি কার্ড অনুযায়ী ডিলারদের মধ্যে পণ্য বিতরণ করা হবে। কতগুলো কার্ড তৈরি হয়েছে বা কোন ডিলারের অধীনে কতগুলো কার্ড বিতরণ হয়েছে ওই তালিকা না পেলে টিসিবি পণ্য বিতরণ শুরু করতে পারছে না।
এ প্রসঙ্গ টিসিবির চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আরিফুল হাসান গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ঢাকা ও বরিশাল সিটির কার্ড এই মাসের মধ্যে সুবিধাভোগী ও সংশ্নিষ্ট ডিলারদের কাছে পৌঁছে দেয়ার কথা। তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে কিনা সে বিষয়ে এখনো তথ্য দেয়া হয়নি। তা সত্ত্বেও কোরবানির ঈদের আগে অন্তত একবার পণ্য বিক্রির চেষ্টা করবে টিসিবি।