জেলা প্রতিনিধি, সিলেট :
বঙ্গবন্ধু আর মুক্তিযুদ্ধকে অবমাননার হাত থেকে রক্ষা করার জন্য বস্তুনিষ্ঠ ইতিহাস চর্চায় তারুণ্যকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানানোর মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে জেলা পরিষদ, সিলেট-ইনোভেটর বইপড়া উৎসব। ২১ ডিসেম্বর মঙ্গলবার বিকেলে সিলেট কেন্দ্রীয় শহিদমিনার প্রাঙ্গণে প্রায় হাজারো শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণে উদ্বোধন হয়েছে এ উৎসবের।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, বিজয়ে সুবর্ণ আঙ্গিনায় দাঁড়িয়ে বাংলাদেশকে সত্যিকার অর্থে ‘বিশ্বের বিস্ময়’ এ পরিণত করার জন্য বই নির্ভর সমাজের বিকল্প নেই। তাই স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর অঙ্গীকারকে বাস্তবে রূপ দিতে পারে বইপড়–য়ারা। বই চির অমলিন, বইয়ের ক্ষমতা কখনো হারায় না।
বক্তারা আরো বলেন, বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষে দেখা ‘উন্নত বাংলাদেশ’ এর স্বপ্নকে সার্থক করে তুলতে যে প্রজ্ঞাদীপ্ত প্রজন্মের প্রয়োজন ইনোভেটর সেই প্রজন্মকে নির্মাণ করছে। বর্তমান সময়ের প্রধানতম সমস্যা-ধর্মীয় উগ্রবাদ, সাম্প্রদায়িকতা, তথ্য-প্রযুক্তির অপব্যবহার প্রভৃতি থেকে মুক্তি পেতে প্রয়োজন মননশীলতার বিকাশ। ইনোভেটর তরুণদের হাতে বই তুলে দিয়ে সেই সৃজনশীল সমাজ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
তারা বলেন, মুক্তিযোদ্ধারা আমাদের একটি দেশ এনে দিয়েছেন, সেই দেশকে এগিয়ে নেয়ার দায়িত্ব আমাদের সবার। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস যারা অনুশীলন করে তারা দেশের সবচেয়ে অগ্রসর মানুষ। তাদের হাতেই বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ। ইনোভেটর সেই জ্যোতির্ময় আগামীর মানসজগৎ গঠনে ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করছে। পাঠ্যবইয়ের বাইরে জ্ঞানের বিপুল জগতকে ছুঁয়ে দেখার সুযোগ করে দিচ্ছে এ বইপড়া উৎসব।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি ছিলেন সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার ড. মুহাম্মদ মোশাররফ হোসেন, জেলা পরিষদ, সিলেটের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা দেবজিৎ সিংহ, আর টি এম আল কবির টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটির প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান, বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. আহমদ আল কবির, বীর মুক্তিযোদ্ধা যাদব কেউট ও সামচান চাষা।
সভাপতিত্ব করেন ইনোভেটর এর মুখ্য সঞ্চালক, সিটি কাউন্সিলর রেজওয়ান আহমদ। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ইনোভেটর এর নির্বাহী সঞ্চালক প্রণবকান্তি দেব। পুরো অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ইনোভেটর এর যুগ্ম সমন্বয়ক ঈশিতা ঘোষ চৌধুরী এবং সদস্য সৈয়দা আছিয়া খাতুন।
বিশিষ্ট রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী অনিমেষ বিজয় চৌধুরী প্রতীক এন্দ টনি এবং ইনোভেটর এর সমন্বয়ক আশরাফুল ইসলাম অনির পরিচালনায় জাতীয় সংগীত এর মধ্য দিয়ে শুরু হয় বইপড়া উৎসব এর আয়োজন।
এর আগেই বেলা ২ টা থেকে অনুষ্ঠানস্থলে সিলেটের বিভিন্ন জায়গা থেকে জড়ো হতে থাকে শিক্ষার্থীরা। এসেই উৎসবের নিয়ম অনুযায়ী রিপোর্টিং করতে হয় তাদের। এ সময় শিক্ষার্থীদের হাতে একটি করে জাতীয় পতাকা তুলে দেন দায়িত্বে থাকা ইনোভেটর এর সদস্যরা।
ইনোভেটর এর প্রধান সমন্বয়ক প্রভাষক সুমন রায় এবং যুগ্ম সমন্বয়ক প¬পা চৌধুরীর তত্ত্বাবধানে একদল স্বেচ্ছাসেবক রিপোর্টিং এর দায়িত্ব পালন করেন।
আলোচনা অনুষ্ঠান এর পর বইপড়া উৎসবে নিবন্ধিত শিক্ষার্থীদের হাতে এ বছরের নির্বাচিত গ্রন্থ, স্কুল শাখায় মুনতাসীর মামুন এর উপন্যাস ‘জয়বাংলা’ এবং কলেজ- বিশ্ববিদ্যালয় শাখায় শওকত আলীর উপন্যাস ‘যাত্রা’ তুলে দেয়া হয়। এবারের আসরে মোট ৯শ ৯১ জন শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছে। তার মধ্যে স্কুল ও সমমানের মাদ্রাসা পর্যায়ের ৫৩৫ জন এবং কলেজ, øাতক ও সমমান মাদ্রাসার ৪শ ৫৬ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। সিলেট মহানগর ছাড়াও বিভাগের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকেও শিক্ষার্থীরা এ বছর বইপড়া উৎসব এ যোগ দিয়েছে।
উলে¬খ্য, ‘জ্ঞানের আলোয় অবাক সূর্যোদয়!/ এসো পাঠ করি/ বিকৃতির তমসা থেকে/ আবিষ্কার করি স্বাধীনতার ইতিহাস’ কে সামনে রেখে ২০০৬ সাল থেকে ইনোভেটর বইপড়া উৎসব এর আয়োজন করে যাচ্ছে। গত দুটি আসর থেকে এ উৎসবকে পৃষ্ঠপোষকতা করে আসছে জেলা পরিষদ, সিলেট।
আরও পড়ুন
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি